এক মজলিসে অবৈধভাবে বিবাহ ও তালাক: ভূয়া ঠিকানা দিয়ে লাইসেন্স গ্রহণের অভিযোগ কাজী জহরুলের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদকঅবৈধভাবে এক মজলিসে বিবাহ্ ও তালাক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কাজী মোঃ জহরুল আলমের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, ৩১/১২/২০১৫ তারিখে রাত ৮টায় দুলাল হোসেনকে মুঠোফোনে ফোন দিকে ডাকেন মোসাঃ রুমানা নাসরিন (৩০) নামের এক নারী। তিনি চারঘাট গ্রামের ও থানার মোঃ মাসদার রহমানের মেয়ে।
দুলাল সরল বিশ্বাসে তার সাথে দেখা করতে আসলে তাকে একটি ঘরে আটকানো হয়। এরপর তাকে বিয়ের জন্য মেয়ে এবং তার পরিবারের লোকজন চাপসৃষ্টি করে। বাঁচার মতো কোন রাস্তা নাই দেখে দুলাল বিবাহ করতে রাজী হয়। এরপর কথিত কাজী মোঃ জহরুল আলম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তিনি দুলালকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি বিবাহিত কি না। উত্তরে তিনি জানান তার স্ত্রী সন্তান রয়েছে। মোসাঃ রুমানা নাসরিনও বলেন তার স্বামী আছে। এরপর জহুরুল আলম ওই নারীর ৪টি তালাকের নোটিশ দুটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে এবং বিবাহের রেজিস্ট্রার খাতায় মেয়ের স্বাক্ষর নেন। ছেলেকে দিয়ে দুটি ফাঁকা স্ট্যাম্পে এবং বিবাহের রেজিস্ট্রার খাতায় স্বাক্ষর নেন। পরে বিবাহ্ পড়িয়ে দেন এবং রেজিস্ট্রী করিয়ে দেন।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা মুসলিম নিকাহ্ রেজিস্ট্রার সমিতির সভাপতি কাজী মোঃ নূরুল আলম জানান, যেহেতু গত ৩০/০১/২০১৬ তারিখে বিবাহ্ রেজিস্ট্রী ক্রমিক নং-৯/১৬, বালাম নং-১৩, পাতা নং-২৮, তাং-৩০/০১/২০১৬ দেখানো হয়েছে। কিন্তু বিবাহের তারিখ দেখাচ্ছে ৩১/১২/২০১৫। কোর্ট এফিডেভিট দেখাচ্ছে ৩১/১২/২০১৫। এফিডেভিট স্ট্যাম্প নং-কজ ০৯১৭৯৯৯ অপরটি কজ ০৯১৭৯৯০। স্ট্যাম্পের অপর পৃষ্টায় ভেন্ডার নং-৪৮৯/৩। স্ট্যাম্প ইস্যূর তারিখ ২৯/১২/২০১৫। তালাকের তারিখ ০৩/১০/২০১৫। এতে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে ৯০ থেকে ৯৯ মাঝে ৮টি স্ট্যম্প নাই। এটা বিবাহের কাজে অবৈধ পন্থা অনুসরন করেছে।
তালাকের নোটিশে দেখা যায় চেয়াম্যানের ঠিকানা নাই। কোন সনাক্তকারী নাই এবং স্বাক্ষী নাই। যাহা মুসলিম বিবাহ্ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধি মালা ২০০৯ গেজেটের পরিপন্থী। নিকাহ্ রেজিস্ট্রার মুসলিম পারিবারিক আইনে শুধুমাত্র তালাক রেজিস্ট্রী করতে পারবে। এই তালাকের নোটিশ করতে পারবেনা। স্ত্রী কতৃক তালাক রেজিস্ট্রার “ডি”তে স্ত্রীর সনাক্তকারী ও স্বাক্ষী লাগবে। যাহা কাজি জহুরুল আলম মুসলিম পারিবারিক আইনের তোয়াক্কা করেননি। তালাক ও বিবাহ করে কাজী রিতিমতো আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছেন।
তাছাড়া চেয়ারম্যান গত ০৩/১০/২০১৫ তারিখ থেকে গত ৩০/০১/২০১৬ পর্যন্ত তালাকের নোটিশ পাননি বলে জানা গেছে।
এ ঘটনা ভূক্তভোগীর বিবাহিত স্ত্রীর ভাই মোঃ সুমন বাদী হয়ে (সচিব) আইন ও বিচার বিভাগ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রানালয় ঢাকা বরাবর কাজী জহুরুল আলমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
একাধিক অভিযোগ উঠেছে এই কাজী জহুরুলের বিরুদ্ধে। তিনি একজন হত্যা মামলার আসামী। ওই মামলার কারনে গত ১৯/১০/২০২০ তারিখে জেলা রেজিস্ট্রার কাজীর নিকাহ্ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স স্থগিত করেন এবং হত্যা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য একজন কাজী নিয়োগ দেন। কিন্তু মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার পরের কাজী জহুরুল আলমের স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করেন জেলা রেজিস্ট্রার। এনিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে নিকাহ্ রেজিস্ট্রার মহলে।
একাধিক কাজীর মুখে শোনা যায় হত্যা মামলায় জামিনে বেরিয়ে কাজী মোঃ জহুরুল আলম দায়িত্ব ফিরে পেতে সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ ইলিয়াস হোসেকে চাপসৃষ্টি করেন। অপারগতা দেখালে অকাথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ মারমুখি আচারণ করে এই কাজি। পরে ওই জেলা রেজিস্ট্রার তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেন।
ভুক্তভোগী মোঃ মাহমুদ হাসান (সুমন) জানায়, ২০১৫ সালে রাজশাহী জেলা নোটারী পাবলিক এ্যাড. মোঃ আব্দুল মোতালেব এবং কাজী মোঃ জহুরুল আলমের বিরুদ্ধে (সচিব) আইন ও বিচার বিভাগ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রানালয় ঢাকা বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ্যাড. মোঃ আব্দুল মোতালেবের বিরুদ্ধে ৩১/০৮/১৬ তারিখে আইন ও বিচার বিভাগ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রানালয়, বিচার শাখা-৬, এর মোঃ আনোয়ারুল হক, সিনিয়র সহকারী সচিব সাক্ষরিত একটি পত্র ইস্যু করেন। আদেশে উল্লেখ করা হয়। সরকার আপনার নোটারী সার্টিফিকেট নবায়নের আবেদন না মঞ্জুর করেছে। তবে কাজীর বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
মুঠোফোনে জানতে চাইলে কাজী মোঃ জহুরুল আলম জানান, ১৫ সালের বিবাহ্ , রেজিস্ট্রী এতদিন পরে জানতে চাইছেন কেন? আপনাকে যে তথ্য দিয়েছে। যে আপনাকে তথ্য দিচ্ছে সে একজন ভুয়া কাজি। তারও কাগজপত্র নাই। এর আগে আপনি আমার নামে নিউজ করেছেন কিছু বলিনি। এবার আপনার নামে মামলা দিব বলে হুমকি দেন কুচক্রি কাজী জহরুল আলম।
অভিযোগ উঠেছে, কাজী মোঃ জহরুল আলম, গ্রাম: পরানপুর, থানা: চারঘাট মিথ্যা ঠিকানা দিয়ে গত ২২/৫/২০০৪ ইং তারিখে ৫১৯ বিচার ৭/২ এন ২৬/২০০২ স্মারকে ৫ নং চারঘাট ইউনিয়নে নিকাহ্ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন।
পরে গত ১৫/৯/২০০৯ তারিখে চারঘাট সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ৩২৮৬নং জমির দলিল, টিপ সহি নং-৫২৭৩, হাবাসপুর বাঘা ঠিকানা দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রী করেছেন। তাছাড়া কাজী মোঃ জহরুল আলম ২বার জেল হাজতে থাকা অবস্থায় বিবাহের ভলিয়মে কোন নিকাহ্ রেজিস্ট্রার সাক্ষর করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানতে চাইলে জেলা রেজিস্ট্রার বলেন, এক মজলিসে বিবাহ্ ও তালাক দেওয়া অবৈধ। বিবাহের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে হবে কাজীকে। শুনেছি অনেক কাজী বিবাহ্ অনুষ্ঠানে নিজে না থেকে সহকারী নিয়োগ দিয়ে বিবাহের কাজ করাচ্ছেন। এই ধরণের কর্মকান্ড আইন উপেক্ষার সামিল। তাছাড়া সহকারী কাজীকে দিয়ে বিয়ে পড়ানো যাবে না। কিন্তু অনেক কাজীরা এই ধরণের অনিয়ম করছে। কাগজ কলমে তথ্য প্রমান পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরও বলেন, ফৌজদারী মামলা থাকলে সাময়িক বরখাস্ত হবে এবং মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কার্জক্রম করতে পারবে না।
কাজী মোঃ জহুরুল আলম ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে লাইসেন্স প্রাপ্ত হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান জেলা রেজিস্ট্রার।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো.মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.