ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটাকে ‘হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে রাজশাহীর তরুণদের স্মারকলিপি প্রদান

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:  আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক ভিটা সংরক্ষণ ও ঐতিহ্য রক্ষার জন্য ভিটাটিকে ‘হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সকাল ১০টায় রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এর মাধ্যমে রাজশাহীর তরুণ সংগঠন ‘ইয়্যাস (ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ) এ স্মারকলিপি প্রদান করে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, রাজশাহী মহানগরীতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক ভিটা রয়েছে। মহানগরীর মিঞাপাড়া সাধারণ গ্রন্থাগারের পাশে যেখানে এখন রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে সেটাই মূলত ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়ি।
১৯৮৯ সালে নামমাত্র মূল্যে রাজশাহী হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজকে ইজারা দেয়া হয়। এই বাড়িতেই রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটি গড়ে ওঠে। কলেজটির কর্তৃপক্ষই এখন বাড়িটি ব্যবহার করছে। এখানেই ঋত্বিক ঘটকের শৈশব,
কৈশোর ও তারুণ্যের বড় একটা অংশ কেটেছে।
এই বাড়িতেই কিছু সময় বসবাস করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও। মহাশ্বেতী দেবী সম্পর্কে ঋত্বিক ঘটকের ভাতিজি। মহাশ্বেতী দেবী হলেন ঋত্বিক ঘটকের বড় ভাই
লেখক মনীষ ঘটকের মেয়ে।
এই বাড়িতে থাকার সময়ই ঋত্বিক ঘটক রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। তিনি রাজশাহী কলেজ এবং সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন।
রাজশাহীর তৎকালীন সাংস্কৃতিক জগতে তিনি যৌবনকালে সকলের মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন বলে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে যে, তাঁর এই স্মৃতিধন্য রাজশাহীর পৈতৃক ভিটা (বাড়ি)টি সংরক্ষণের রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন সময়ে  দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেছে।
এই বাড়িতেই বিগত এক দশক ধরে নিয়মিতভাবে রাজশাহীর স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঋত্বিক সম্মাননা পদক ও চলচ্চিত্র উৎসব’ আয়োজন করছে। এই উৎসবে এসেছেন মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, জয়া আহসান, তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্রের প্রযোজক হাবিবুর রহমান, এই ছবির নায়ক প্রবীর মিত্র সহ দেশের প্রথিতযশা চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব।
এছাড়াও ভারতের খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার বুদ্ধুদেব দাশগুপ্ত, অভিনেতা ও পশ্চিবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু সহ বিদেশের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র ব্যাক্তিত্বদের আগমন ঘটেছে এই বাড়িতে। ঋত্বিক ঘটকের জন্মোৎসবে এই বাড়িতে এসে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন ঋত্বিকের জমজ বোন প্রতীতি দেবী, তাঁর মেয়ে অ্যারোমা দত্ত, ঋত্বিক ঘটকের কানাডাপ্রবাসী ভাগ্নি রীনা চক্রবর্তীসহ
অনেকেই।
বাড়িটির অব্যবহৃত অংশ চলচ্চিত্র উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল। কেননা ওই সমস্ত ঘরগুলিতে ঋত্বিক ঘটক ও তার পরিবার-পরিজনের নানা স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। রাজশাহীতে দেশ-বিদেশের গুণি মানুষ বেড়াতে এলে এই বাড়িতে আসেন।
তাই স্বাভাবিকভাবেই এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে বলে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে যে, বাড়িটির এক অংশে ইতিমধ্যে বহুতল ভবন করছে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরেক অংশে যেসব কক্ষে ঋত্বিক ঘটকের পরিবারের লোকজন থাকতেন, সেসব কক্ষও ব্যবহার করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি অবশিষ্ট এই বাড়িগুলির স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য গ্যারেজ নির্মাণ করার জন্য স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলো ভাঙা শুরু
করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববরেণ্য বাঙালি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়ি রাজশাহীর মিঞাপাড়াস্থ ভবনটি ভেঙে ফেলার ঘৃণ্য উদ্যোগকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে স্মারকলিপিতে এমন কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনটি স্মারকলিপিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অবিলম্বে স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলো ভাঙার কাজ স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবি জানিয়ে পাবনায় বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈতৃক ভিটা যেভাবে ‘হেরিটেজ’ হিসেবে সংরক্ষণ করে ‘সুচিত্রা সেন সংগ্রহশালা’ করা হয়েছে ঠিক তেমনি ভাবেই ঋত্বিক কুমার ঘটকের এই পৈতৃক ভিটাটিকেও ‘হেরিটেজ’ হিসেবে
সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছে।
এই বাড়িটিকে সংরক্ষণের দাবি নতুন নয়। রাজশাহীতে ক্রিয়াশীল ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র সংসদ, রাজশাহী চলচ্চিত্র সংসদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ এই বাড়িটিকে উদ্ধার ও সংরক্ষণের দাবিতে দীর্ঘদিন আগেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বলে জানা গেছে।
কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করে সংগঠনটির পক্ষ থেকে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটি অবিলম্বে ভিন্ন একটি স্থানে স্থানান্তর করে ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত এই ভিটাকে চলচ্চিত্রের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য ‘হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করে ‘ঋত্বিক চলচ্চিত্র কেন্দ্র্র’ এবং ‘ঋত্বিক ঘটক স্মৃতি জাদুঘর’ গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানিয়েছে।
রাজশাহীর তরুণ সংগঠন ‘ইয়্যাস (ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ) এর সভাপতি তরুণনেতা ও সাংবাদিক মো. শামীউল আলীমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজ বৃহস্পতিবার সকাল সকাল ১০টায় রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয়
কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরারব লেখা স্মারকলিপিটি জমা দেন।
প্রতিনিধি দলের অন্য দুজন সদস্য হলেন, তরুণ সংগঠন ‘ইয়্যাস (ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ) এর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম আকাশ ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সুবাস কুমার শুভ।
স্মারকলিপির অনুলিপি রেজিস্ট্রি ডাক যোগে পরিকল্পনা মন্ত্রানালয়ের মন্ত্রী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব, প্রত্নতত্ব
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও আঞ্চলিক পরিচালক (রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ), প্ল্যানিং কমিশন (জিইডি)’র সিনিয়র সেক্রেটারি বরাবরে প্রেরণ করেছে।
পরে সংগঠনটির পক্ষ থেকে একই দাবিতে প্রতিনিধি দলটি রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মোঃ হামিদুল হক, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মোঃ হুমায়ুন কবির, বিপিএম, পিপিএম এবং রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)’র চেয়ারম্যান মোঃ আনওয়ার হোসেন-কে
পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করেন।
প্রসঙ্গত, ‘তারুণ্যের জয় হবে নিশ্চয়’ এ প্রত্যায়ে এগিয়ে চলা রাজশাহীরতরুণ সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’ বিগত ২০১৫ সালের ৪ জুলাই থেকে রাজশাহীতে নিরাপদ সড়ক, নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ,পরিবেশ-প্রতিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, মানুষসহ সকল প্রাণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়ন করা সহ রাজশাহীর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার পাশাপাশি জাতীয় ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
সংবাদ প্রেরক:
(আতিকুর রহমান আতিক)
কোষাধ্যক্ষ ও ইউনিট প্রধান
মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন উইং
ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস,
কলাবাগান, রাজশাহী।
মুঠোফোন ঃ ০১৭৪০১৯৭৪২৫
সার্বিক তথ্যের জন্য যোগাযোগ ঃ ০১৭৯৪৮৯৪৩১৫। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.