উজিরপুর প্রতিনিধি:বরিশালের উজিরপুরে স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে অবুঝ শিশুকে কোলে নিয়ে অনশন করছে এক অসহায় মা। গত শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে স্বামীর ঘরের সামনে খোলা আকাশের নিচে ১১ মাসের একটি পুত্র সন্তান নিয়ে দিনরাত অনশন করে শ্বশুর, শাশুড়ী ও ননদের কাছে তার স্বামীকে ফিরে পেতে পা জড়িয়ে ধরে আকুতি করে যাচ্ছেন।
জানা যায়, উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের দক্ষিণ শোলক গ্রামের জাফর মোল্লার ছেলে তরিকুল ইসলাম বাবু পড়ালেখার জন্য ঢাকায় বসবাস করেন।
অপরদিকে যমুনা ফিউচার মার্কেটে চাকুরী করেন রাজশাহী জেলার রাইপাড়া এলাকার তাইজুল ইসলামের সুন্দরী মেয়ে সুমি আক্তার। ৩ বছর পূর্বে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২ কছর পূর্বে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করে। ইতিমধ্যে তাদের একটি পুত্র সন্তান ভূমিষ্ট হয়।
বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর জাফর মোল্লা, শাশুড়ী শান্তেয়ারা বেগম, বড় ননদ নার্গিস বেগম, ছোট ননদের স্বামী হীরা মিলে অমানসিক ভাবে তাকে শারিরিক ও মানুষিক ভাবে নির্যাতন চালাতো। এরপর শুরু হয় কলহ বিবাদ ও মামলা মোকদ্দমা। পরিশেষে ২ মাস পূর্বে একটি মহল ৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সুমিকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে জোর পূর্বক তালাকনামায় স্বাক্ষর নিয়ে পুত্র সন্তানসহ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
এমনকি তখন তার গর্ভে আরো ৩ মাসের একটি সন্তান ছিল। এ অবস্থায় তাকে তালাক দেয়া হয়। গর্ভে সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে গিয়ে কিছুদিন দুশ্চিন্তায় থাকার পরে স্বামীর টানে পুনরায় ওই বাড়িতে স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে অনশন করছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্বশুর, শাশুড়ীর পায়ে জড়িয়ে ধরে সুমি বেগম স্বামীর অধিকার ফিরে পাওয়ার আকুতি করছেন ও অবুঝ সন্তানদের বাবা হারা না করার জন্য চিৎকার করে অনবরত কান্না করছেন।
অতীতের ঝগড়া বিবাদ যা ছিল তার জন্য ঘন্টাব্যাপী শাশুড়ীর পায়ে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। কিন্তু কোন সহানুভুতি পেলনা সুমি বেগম। এ কি হৃদয় বিদারক দৃশ্য যা দেখার মত নয়। একদিকে স্বামীর জন্য স্ত্রীর কান্না অপরদিকে শিশুর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। এপাশ ওপাশ করে শিশুটি খুজছে যেন তার বাবাকে।
এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত অনেকেই কেঁদে ফেলেন। নানা প্রশ্নের জন্ম নেয় জনমনে, তাহলে কি শেষ পর্যন্ত ওই অবলা নারী তার স্বামীর অধিকার ফিরে পাবে !! ভুক্তভোগী সুমি বেগম বিটিসি নিউজকে জানান আমি পরিস্থিতির শিকার। আমাকে জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে তালাকনামায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে। আমি সব হারিয়েছি আমি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সকল ন্যায় অন্যায় ভুলে গিয়ে পুনরায় স্বামীর সংসার করতে চাই। আমি সবকিছু তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে চাই।
অভিযুক্ত স্বামী তরিকুল ইসলাম বাবু বিটিসি নিউজকে জানান, স্ত্রীর কথাবার্তা উশৃঙ্খল। তাকে নিয়ে সংসার করা যায় না।
শ্বশুর জাফর মোল্লা ও শাশুড়ী শান্তেয়ারা বেগম বিটিসি নিউজকে জানান, পুত্রবধু আমাদেরকে মারধর করত। বড় ননদ নার্গিস বেগম বলেন, এই পরিবারে তার কোন স্থান নেই। তিনি তালাক দিয়ে চলে গেছেন।
উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আলী আর্শাদ বিটিসি নিউজকে জানান, শুনেছি এই মেয়েটি ২ মাস পূর্বে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে আপোষ মিমাংশা করে খোলা তাকাকে স্বাক্ষর করে দেনমোহরের টাকা নিয়ে চলে গেছেন। পুনরায় তিনি ওই বাড়িতে এসেছেন শুনেছি।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.