ইসলামে আলেম সমাজের মর্যাদা

লেখক-আমানুল্লাহ আমান: Islam is the complete code of life. পৃথিবীতে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবনব্যাবস্থা ইসলাম (সূরা আল ইমরান -১৯)।যে ধর্মে সকল বিষয়ের সুন্দর সমাধান রয়েছে। আছে শান্তির বার্তা। এই বিধানগুলো যারা ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দেন তাদের সম্মানও অনেক।  স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এই আলেমদের সম্মানিত করেছেন।

আলেমরা যেমন সম্মানিত ;তেমনি এদের জন্য রয়েছে মহাপুরষ্কার।এদের মর্যাদা কয়েকটি ধাপে তুলে ধরা হলো-

১.আল্লাহ কাছে সম্মানিত : আলেমরা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার কাছে সম্মানিত। আল্লাহ তায়ালা প্রশ্ন করছেন- (হে নবী!) আপনি বলুন! যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি সমান? (সূরা যুমার,আয়াত-০৯)

জ্ঞানী আর মূর্খ কখনো সমান হতে পারেনা এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত এই  প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা দিচ্ছেন। তিঁনি বলেন – তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের কাছে জ্ঞান আছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন (সূরা মুজদালা,আয়াত ১১)। যেখানে জ্ঞানীদের সম্মান  আল্লাহ নিজেই বাড়িয়ে দেন; সেখানে সাধারণ মানুষ কিভাবে তাদেরকে অসম্মান করতে পারে?

কোনো অবস্থাতেই আলেমদেরকে অসম্মান করা যাবেনা।

২. আলেমরাই তাকওয়াবান: মহান আল্লাহ তায়ালা আলেমদের স্বপক্ষে জোর দিয়ে বলছেন- নিশ্চয় আমার বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই আল্লাহকে ভয় করে (সূরা ফাতির, আয়াত-২৮)।
আলেমরা খাঁটি মুত্তাকী -আল্লাহর দেয়া দলিল। সেখানে তো আলেমদের মর্যাদাও আখেরাতে অনেক।

৩.আল্লাহর রহমত বর্ষণ : আল্লাহ তায়ালা আলেমদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন। এদের জ্ঞানের সম্মান পৃথিবীর কতিপয় মূর্খ শাসকগোষ্ঠী না দিলেও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা দিয়ে থাকেন। এমনকি ফেরেশতারাও আল্লাহর কাছে আলেমদের জন্য দোয়া করেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আলেমদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন।আর ফেরেশতারা এদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে (তিরমিজি,হাদিস নং ২৬৮৫)

৪.আলেমরা নবীদের ওয়ারিশ: পিতামাতা মারা গেলে তাদের  সম্পত্তির ওয়ারিশ হন ছেলেমেয়ে। কলেজে প্রিন্সিপ্যাল না থাকলে দায়িত্ব পালন করেন ভাইস প্রিন্সিপ্যাল। উপজেলায় চেয়ারম্যান না থাকলে দায়িত্ব পালন করেন ভাইস চেয়ারম্যান।প্রত্যেক বিভাগের এরকম স্থলাভিষিক্ত কর্মকর্তা থাকেন। পৃথিবীতে ইসলাম প্রচারে সর্বাধিক দায়িত্বপালন করেছিলেন নবী-রাসুলগন।তারা এখন নেই; তাদের স্থলাভিষিক্ত হলেন আলেমরা। সরাসরি আলেমরা নবীদের ওয়ারিশ। সহিহ হাদিসে নবী করিম (সাঃ) বলেন- নিশ্চয় আলেমরাই নবীদের ওয়ারিশ। (বুখারি ১/৩৭,মুসলিম ৪/২০৭৪,তিরমিজি ৫/২৮,৪৮, ইবনে মাজাহ ১/৮১,৮২)

৪.আলেমরা ‘কীটপতঙ্গের’ও দোয়া পায়: আলেমসমাজ এতটা সম্মানিত যে,অন্য কারো সাথে এদের তুলনা হয়না। অন্যন্য শ্রেণীপেশার মানুষের স্বতন্ত্র সম্মান থাকলেও আলেমরা সবার উর্ধ্বে। পৃথিবীর সকল কীটপতঙ্গ এমনকি সাগর-মহাসাগরের মৎসকূল হুজুরদের জন্য দোয়া করে!
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আকাশ আর জমীনের সমস্ত প্রাণী এমনকি গর্তের পিপড়া, পানির মাছ আলেমদের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে (তিরমীজি,হাদিস নং-২৬৮৫,সহিহ তারগির,হাদিস নং-৭৭)।

৫.আলেমরা অভিশাপমুক্ত: পৃথিবীতে কতিপয় ভণ্ডরা আলেমদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপপ্রচার চালায়। আলেমদের নামে বদনাম করে; ধ্বংস কামনা করে! কিন্তু ওই মূর্খের দল জানেই না যে, পৃথিবীর সবকিছু অভিশপ্ত হলেও হক্বপন্থী আলেমরা কখনো অভিশপ্ত নয়। কোনো বদনাম ই সফল হবেনা। শুধু শুধু মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য হুজুরদের সাদা চেহারা রঙ্গিন করতে চায়!
হুজুরেরা কখনো অভিশপ্ত নয় এ প্রসঙ্গে হাদিসে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে।হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিঁনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট থেকে শুনেছি। তিঁনি বলেছেন- আল্লাহর জিকির, কুরআনের ছাত্র আর আলেমরা ছাড়া  এই পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা আছে সবকিছু অভিশপ্ত। (জামে তিরমিজি,হাদিস নং ২৩২২,ইবনে মাজাহ,হাদিস নং-৪১১২,সহিহ তারগিব,হাদিস নং-৭০)।

ইসলাম ধর্মে আলেমের সম্মান অতুলনীয়। এরাই সম্মানের পাত্র।

এদেরকে কটাক্ষ করা,বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানী করা, এদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা একেবারে হারাম এবং কাবিরা গুনাহ! ষড়যন্ত্রকারী জালেমদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি! আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় যারা আয়াতকে অস্বীকার করে,নবীদেরকে অন্যায়ভাবে  হত্যা করে, যারা নবীদের পক্ষে ভাল কাজের আদেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করে; তাদের (জালেম) জন্য রয়েছে জাহান্নামের ভয়ংকর শাস্তি!

যেখানে স্বয়ং আল্লাহ সম্মান দিয়েছেন, ফেরেশতারা দোয়া করে; সেখানে আপনি কিভাবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করতে পারেন? অবশ্যই হুজুরদের সম্মান দিতে হবে। বিদ্বেষ, হঠকারিতা দূর করে আন্তরিকতা ও ভালবাসা দিয়ে আলেমদের পাশে থাকতে হবে।

হযরত উবাদা বিন সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- যে বড়দের শ্রদ্ধা  করেনা,ছোটদের স্নেহ করেনা আর আলেমদের সম্মান দেয় না  সে আমার উম্মত-ই না!(তিরমিজি,হাদিস নং-১৯২০,মুসনাদে আহমদ ৫/৩২৩,তারগিব-৯৫)।

আলেমদের সম্মান না দিলে যদি নবীর উম্মতের তালিকা থেকে বাদ পড়তে হয়; সেখানে আলেমসমাজের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, মামলা,হামলা,গালিগালাজ করলে কতবড় শাস্তি সেটা কি ভেবে দেখেছেন?

তাই আসুন! আলেমদের বিরুদ্ধচারণ না করে এদেরকে ভালবাসি,এদের পক্ষে দাঁড়াই।

আর ইতোমধ্যে যারা আলেমদের ওপর মিথ্যাচার করেছেন,কষ্ট দিয়েছেন তারা শীঘ্রই তওবা করুন।আলেমের কাছে ক্ষমা চেয়ে,আল্লাহর কাছে তওবা করে মুত্তাকী বান্দা হিসেবে নিজেকে তৈরি করুন। তবেই আমাদের ইহকালীন জীবন শান্তিময় ও পরকালীন জীবন সুখের হবে-ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তায়ালা হক্বপন্থী আলেমদের সম্মান আরও বৃদ্ধি করুন। আমরা যেন হুজুরদের সাথে থেকে ইসলামি হুকুমত পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে পারি; আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করুন। আমীন!#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.