ইরান সফর করলেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্কইরান সফর করেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। রোববার (০৮ মে) সকালে এক অঘোষিত সফরে তেহরান পৌঁছান তিনি।
সফরকালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তারা তেহরান ও দামেস্কের মধ্যকার সম্পর্ক আরও জোরদার করার ব্যাপারে আলোচনা করেন। কয়েক ঘণ্টা পরই দামেস্কে ফিরে যান সিরীয় প্রেসিডেন্ট।
২০১১ সালে বিক্ষোভের মধ্যদিয়ে এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সূচনা হয় সিরিয়ায়। কয়েক বছরের লড়াইয়ের পর গৃহযুদ্ধের গতিপথ নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। এই সফলতার পেছনে ইরান ও রাশিয়ার বড় ভূমিকা ছিল। গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দেশ পুনর্গঠন ও প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট আসাদ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নুর নিউজ জানিয়েছে, রোববার সকালে তেহরান পৌঁছার পরপরই সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। বৈঠকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, একটা আন্তর্জাতিক যুদ্ধে সিরিয়ার জনগণ ও সরকারের প্রতিরোধশক্তি জয়ী হয়েছে। এই বিজয় সিরীয়দের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।’
খামেনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ-পূর্ব সিরিয়ার সঙ্গে আজকের সিরিয়ার পার্থক্য রয়েছে। এটা ঠিক যে, ওই সময় ধ্বংসস্তুপ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে দেশটির সম্মান ও মর্যাদা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সবাই এই দেশকে একটি শক্তি হিসেবে গণ্য করছে।’
আসাদকে উদ্দেশ্য করে সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ও আপনাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর কিছু নেতা ইহুদিবাদী ইসরাইলের নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করেন, একসঙ্গে বসে কফি খান। কিন্তু এসব দেশের জনগণই বিশ্ব কুদস দিবসে ব্যাপক সংখ্যায় রাস্তায় নেমে ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এটাই এখন এই অঞ্চলের বাস্তবতা।’
খামেনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধে সিরিয়ার বিজয়ের পেছনে নানা কারণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হলো আপনার (বাশার আল-আসাদ) শক্ত মনোবল। এই মনোবল নিয়েই আপনি যুদ্ধের ক্ষতি পুষিয়ে দেশ পুনর্গঠন করতে সক্ষম হবেন, ইনশাআল্লাহ। আপনার সামনে আরও অনেক বড় বড় কাজ রয়েছে।’
মার্কিন হামলায় নিহত জেনারেল কাসেম সোলাইমানির কথা স্মরণ করে খামেনি বলেন, ‘সিরিয়ার বিষয়ে শহীদ সোলাইমানির বিশেষ সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল। প্রকৃতপক্ষে‌ই তিনি সেখানে আত্মত্যাগ করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিরিয়ায় তার তৎপরতা ইরানের আট বছরের পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধের তৎপরতা থেকে আলাদা ছিল না। শহীদ সোলাইমানি এবং আইআরজিসি সেনারা সিরিয়া ইস্যুতে লড়াই করাকে পবিত্র ও অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব বলে গণ্য করতেন।’
দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইরান ও সিরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক উভয় দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্ককে দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না। বরং যতটুকু সম্ভব জোরদার করতে হবে।
আসাদ বলেন, ‘ইরান ও সিরিয়ার কৌশলগত সম্পর্ক এই অঞ্চলে ইহুদিবাদী ইসরাইলের শাসকদের প্রভাব ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে।’
সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সহযোগিতা করছে ইরান। এই সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য আন্তরিকভাবে ইরানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাশার আল-আসাদ। চার বছর আগেও একবার ইরান সফর করে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইরানের জনগণ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগে মার্চ মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফর করেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর পর এটাই তার প্রথম কোনো আরব দেশ সফর। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত দেশটি আসাদ সরকারকে উৎখাত করতে চাওয়া বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছিল। তবে এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন করে উষ্ণ হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ওই সফরকালে প্রেসিডেন্ট আসাদ আবু ধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সিরিয়াকে ‘আরব নিরাপত্তার স্তম্ভ’ অভিহিত যুবরাজ জোর দিয়ে বলেন, ‘ইউএই সিরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্কে আগ্রহী।’ #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.