ইউক্রেনকে আরও ১৬০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার ঘোষণা

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্কইউক্রেনকে আরও ১৬০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। শনিবার (০৭ মে) এক বিবৃতিতে নতুন সামরিক সহায়তার কথা জানায় বরিস জনসন সরকার। এদিন এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস বলেন, ‘(প্রেসিডেন্ট) পুতিনের নৃশংস এই হামলা শুধু ইউক্রেনেই ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাচ্ছে না – ইউরোপজুড়ে শান্তি ও নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলছে।’
রাশিয়ার সামরিক অভিযানে অনেকটাই বিপর্যস্ত ইউক্রেন। তবে রুশ সেনাদের মোকাবিলায় সরাসরি সেনা না পাঠালেও সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় ইউক্রেনকে আরও ১.৩ বিলিয়ন পাউন্ড বা ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিল লন্ডন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আক্রমণ শুরু করার পর থেকে রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য ইউক্রেনের প্রচেষ্টার অন্যতম শক্তিশালী সমর্থক হিসেবে কাজ করছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অন্যান্য বহু অস্ত্র পাঠিয়েছে জনসন সরকার।
তবে সামরিক সহায়তা হিসেবে দেওয়া নতুন এই প্রতিশ্রুতি ইউক্রেনে ব্রিটেনের আগের ব্যয়ের প্রতিশ্রুতির প্রায় দ্বিগুণ। ব্রিটিশ সরকার বলছে, ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের ব্যয়ের পর কোনো সংঘর্ষে এটিই হবে তাদের সর্বোচ্চ ব্যয়। যদিও ইউক্রেনকে সহায়তায় ব্রিটেন কত অর্থ খরচ করছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি দেশটি।
এর আগে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর গত সপ্তাহে প্রথম পশ্চিমা নেতা হিসেবে ইউক্রেনীয় পার্লামেন্টে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। ব্রিটেন বলছে, ইউক্রেনে অতিরিক্ত সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় এই ব্যয় জরুরি অবস্থার মধ্যে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত রিজার্ভ থেকে বহন করা হবে।
এর আগে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আরও ১৫০ মিলিয়ন বা ১৫ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র সহায়তা প্যাকেজ পাঠানোর ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন এই সহায়তা প্যাকেজটিতে স্বাক্ষর করেন।
মূলত রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইউক্রেনকে সহায়তা করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই সহায়তা প্যাকেজের অধীনে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে আরও বেশি কামানের গোলাবারুদ, রাডার ও অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠাবে বাইডেন প্রশাসন।
বিবিসি বলছে, ইউক্রেনে পাঠাতে যাওয়া ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এই অস্ত্র সহায়তার মধ্যে ১৫৫ মিমির ২৫ হাজার আর্টিলারি রাউন্ড, কাউন্টার-আর্টিলারি রাডার, জ্যামিং সরঞ্জাম, ফিল্ড সরঞ্জাম এবং খুচরা যন্ত্রাংশ রয়েছে।
রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে সাত শিল্পোন্নত দেশের সংগঠন জি৭। সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীলতা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনবেন তারা।
ইউক্রেনে চলমান সংঘাতের মধ্যে রোববার (০৮ মে) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজিত এক সভায় এ ব্যাপারে একমত হন তারা। এদিকে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রুশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমব্যাংকের নির্বাহী ও অন্য কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর একক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
জি৭ (গ্রুপ অব সেভেন) হচ্ছে জাপান, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এই সাত দেশ নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন। এ সাতটি দেশ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল স্বীকৃত বিশ্বের সাতটি মূল উন্নত অর্থনীতির দেশ।
এদিন সংগঠনের বর্তমান চেয়ারম্যান জার্মানির উদ্যোগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক জরুরি বৈঠক যোগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ জি৭ সদস্য দেশগুলোর নেতারা। ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি আলোচনায় বৈঠকে অন্তর্ভূক্ত করা হয় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও।
বৈঠকের পর এক একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে জি৭। এতে বলা হয়, আমরা রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা থেকে ধাপে ধাপে বেরিয়ে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। সেই লক্ষ্যে আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করব।’
এদিকে রাশিয়ার তিন টেলিভিশন স্টেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে প্রায় ২ হাজার ৬০০রুশ ও বেলারুশীয় কর্মকর্তার ওপর ভিসা কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এছাড়া রাশিয়ার গুরুত্বপর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের একাধিক নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর নিষেোজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.