ইউএনও’র সাথে দেখা! মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেন প্রতিবন্ধী রোজিনা বেগম

নাটোর প্রতিনিধি: অন্যের জায়গায় বাঁশের বেড়ায় তৈরি ছোট খুপরিই ছিলো প্রতিবন্ধী রোজিনার ঠিকানা। উচ্ছেদের ভয় মাথায় নিয়েই বসবাস করতে হতো তাকে। গুরুদাসপুরের ইউএনও তমাল হোসেনের সাথে দেখা হয়েই কপাল খুলেছে প্রতিবন্ধী রোজিনার।
ঘর নির্মাণ কাজ দেখতে সরেজমীনে মাঝে মাঝেই যেতেন গুরুদাসপুরের ইউএনও তমাল হোসেন। হঠাৎ করেই প্রতিবন্ধী রোজিনা তার জীবনের গল্প ইউএনও তমাল হোসেনকে বলেন।
ইউএনও তমাল হোসেন সরেজমীনে আরো খোজ খবর নিয়ে তার নামে একটি ঘর বরাদ্দ করে দিয়েছেন। এখন প্রতিবন্ধী রোজিনার সপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের দৃষ্টিনন্দন পাকাঘরে এক সপ্তাহের মধ্যেই বসবাস শুরু করবেন প্রতিবন্ধী রোজীনাসহ ৫০টি অসহায়,ভ‚মিহীন অস্বচ্ছল ও দুস্থ পরিবার। ই
উএনও তমাল হোসেন সরেজমীন তদন্ত করে এই ৫০টি অসহায় পরিবারকে খুজে বের করে তাদের পাকা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এর মধ্যে ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, দিনমজুর, রিকশাচালক, তালাকপ্রাপ্ত নারী, বিধবা, অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা চালানো অতিদরিদ্র নারীও রয়েছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সরেজমীন করে খুঁজের বের করেছেন এই অসহায় ৫০টি পরিবার। যাদের ঠিকানা ছিলো বাঁশের বেড়ায় তৈরি ছোট ছোট খুপরি। এখন তারা পাকা ঘরে বসবাস করবেন। যারা কখনও কল্পনাও করেননি কোনো দিন পাকা ঘরে বসবাস করবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার এই ঘর নির্মানের কাজ আগামী ১৫ই জানুয়ারীর মধ্যে সম্পন্ন হবে। এতে সরকারের সর্বমোট ব্যয় হচ্ছে ৮৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
সরেজমিনে গেলে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকাঘরে বসবাসকারী উপজেলার নাজিরপুর ইউপির বেরগঙ্গারামপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী রোজিনা বেগম জানান, জন্মগত ভাবেই তিনি প্রতিবন্ধী। বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন তিনি এবং তার স্বামী অটোভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। সংসারে রয়েছে দুই মেয়ে।
বড় মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াশোনা করে এবং ছোট মেয়ে এ বছর স্কুলে ভর্তি হবে। প্রতিবেশির পড়ে থাকা জায়গার ওপর বাঁশের বেড়ায় তৈরি ছোট একটি খুপরি ও খড়ের ছাউনি আর ইকোড় বেতের বেড়ার ছোট্ট ঘরে পশুপাখির মতো মেঘ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফানের সঙ্গে যুদ্ধ করেই থাকতেন পরিবার নিয়ে।
নানা দুর্যোগ আতঙ্কে এক মুহূর্তও শান্তিতে ঘুমাননি। কোনো দিন কল্পনাও করেননি পাকাঘরে ঘুমাবেন। ঘর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখতে মাঝে মাঝেই ইউএনও সেখানে যান। ইউএনওর সাথে কথা বলে তার সার্বিক বিষয়ে জানালে ইউএনও তার নামে একটি ঘর বরাদ্দ করে দেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ব্যায়ে দৃষ্টিনন্দন পাকাঘর নির্মাণ করে দিয়ে তাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় তিনি এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে শান্তিতে ঘুমাবেন। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়ে এখন ঘরে বসেই বিদ্যুতের আলোয় লেখাপড়া করতে পারবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বরাদ্দকৃত ঘর পাওয়া বিয়াঘাট ইউনিয়নের বিয়াঘাট গ্রামের অসহায় ভ‚মিহীন নারী সালেহা বেগম জানান,‘আমরা খুবই গরীব। আমি ও আমার স্বামীসহ তিন সন্তানকে নিয়ে অন্যের জমিতে অনেক কষ্ট করে বসবাস করতাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারিভাবে ঘর প্রদান করছেন এ খবর পেয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের সাথে দেখা করে একটি ঘরের জন্য আবেদন করি।
তিনি নিজে আমার বাড়িতে এসে আমার করুণ দশা দেখে সরকারি খাস জমি জমিতে আমাকে ঘর নির্মাণ করে দেন। আমি কোনদিন ভাবতেও পারিনি স্বামী-সন্তান নিয়ে পাকা বাড়িতে থাকব। আমি প্রতিদিন নামাজে বসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের জন্য দোয়া করছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ নজরুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, নির্মিত ঘরগুলো ১৫ জানুয়ারীর মধ্যে শেষ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দৃষ্টিনন্দন এসব পাকাঘর পেয়ে দরিদ্র উপকারভোগীরা অত্যন্ত খুশি। সরকারীভাবে ৫০টি পাকাঘর নির্মাণ করে দেয়ায় উপজেলার দরিদ্র-অসচ্ছল মানুষ উন্নত আবাসনের আওতায় এসেছেন। উপজেলার তিনটি ই্উনিয়নে প্রথম পর্যায়ে এই ঘর গুলো নির্মাণ কাজ শেষ হতে চলছে। তার মধ্যে নাজিরপুর ইউনিয়নে ২৪টি, বিয়াঘাট ইউনিয়নে ২৫টি এবং খুবজীপর ইউনিয়নে ১ টি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তমাল হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই প্রকল্পটির প্রতি আমাদের বিশেষ নজরদারি ছিল। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ঘর নির্মাণ কাজ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করা হবে।’ বাছাইকৃতদের মধ্যে ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, দিনমজুর, রিকশা চালক, স্বামী পরিত্যক্তা, অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করা অতিদরিদ্র নারীও রয়েছেন। প্রতিটি পরিবারের জন্য দুইটা থাকার রুম, একটা রান্নাঘর, টয়লেট, ৫ ফিট বারান্দা রয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.