আশা-নিরাশা’র গ্লাসগো

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যে গ্লাসগোয় এবার বসছে কপ-২৬ সম্মেলন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্কটল্যান্ডের সেই শহরটিকেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্কটল্যান্ডে গ্রীষ্মকাল হয়ে উঠছে চরম গরম, শুষ্ক; আবার হঠাৎ নামছে অঝোর বর্ষণ। আর শীতকালে শীত পড়ছে কম, আবহাওয়া হয়ে যাচ্ছে শুষ্কের বদলে ভেজা। এমন চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে স্কটল্যান্ডবাসীকে।
আজ রবিবার (৩১ অক্টোবর) যে স্কটিশ এক্সিবিশন অ্যান্ড কনফারেন্স সেন্টারে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজের (কপ) ২৬ তম আয়োজন, সেই এলাকাটিও যে মুক্ত নেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে, তা তুলে এনেছে বিবিসি।
তিন বছর আগে গ্লাসগোয় তাপমাত্রা উঠেছিল ৩১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তাতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আকর্ষী গ্লাসগো সায়েন্স সেন্টার ভবনের পানিরোধী আবরণটি গলে গলে পড়ছিল। এই সেন্টার ঘেঁষা নদীর ওপারেই সম্মেলনস্থল স্কটিশ এক্সিবিশন অ্যান্ড কনফারেন্স সেন্টার।
১৮৮৪ সালে তাপমাত্রার রেকর্ড সংরক্ষণের পর সেই বছরের জুন মাসে গ্লাসগোয় গড় তাপমাত্রা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছিল।
অথচ তখনই গ্লাসগোর বন্দর শহর ড্রামচ্যাপেল ভেসেছিল বন্যায়, সেই বন্যার কারণ ছিল অতিবৃষ্টি।
স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে জনবহুল নগরী গ্লাসগোর ৪৫ হাজার বাড়ি এখন বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে, ২০৮০ সাল নাগাদ এই সংখ্যাটি ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে নগর কর্তৃপক্ষের শঙ্কা।
যে ক্লাইড নদীটি গোটা গ্লাসগোর উপর দিয়ে বয়ে গেছে। জোয়ার-ভাটার এই নদীর প্রানিপ্রবাহে প্রভাব ফেলছে সমুদ্র তলের উচ্চতা বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে অনিয়মিত ঝড়।
কদিন আগেই অতিবৃষ্টিতে ভেসেছিল গ্লাসগোর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো। সায়েন্স সেন্টারও মাঝারি আকারের বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। অতিবৃষ্টির যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা আরও এলাকাকে বন্যার ঝুঁকিতে ফেলছে।
এই পরিস্থিতিতে গ্লাসগো নগর কর্তৃপক্ষ আগামী এক দশকে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাদের ভবন ও অবকাঠামোগুলো রক্ষা, কারণ যে নকশায় এগুলো নির্মিত হয়েছিল, তা এখন টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে উঠেছে।
২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধির হার শূন্যতে নামিয়ে আনার বড় লক্ষ্য ঠিক করেছে গ্লাসগো নগর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা পারবে তো?
কার্বন নির্গমন বৃদ্ধির নেট হার শূন্য মানে হল, যে পরিমাণ কার্বন শহরে নির্গত হবে, তার পুরোটাই শুষে নেওয়া হবে। আর এজন্য চাই প্রচুর গাছপালা এবং কার্বন ক্যাপচার। অর্থাৎ প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় উপায়ে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ বাড়াতে হবে।
এই কাজটি সহজ করে দেবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো।
২২ হাজার গাছ লাগানো ছাড়া আর কী কী পদক্ষেপ গ্লাসগো নগর কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা এখনও জানা যায়নি।
বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে, সেটা গ্লাসগোর কর্মকর্তারা বুঝছেন। তবে নগর কর্মকর্তারা এই আশ্বাসও দিচ্ছেন যে, এই লক্ষ্য অর্জন করতে নগরীর গরিব মানুষের উপর অর্থের বোঝা চাপানো হবে না।
নগর কাউন্সিলের কার্বন নির্গমন কমানো বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আনা রিচার্ডসন বলেন, “আমাদের এখন মূল চ্যালেঞ্জ হল যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার, তা সংগ্রহ করা। এটা এমন এক অঙ্ক, যা নগর কর্তৃপক্ষের চিন্তারও বাইরে।”
এক সময়ের এই শিল্প নগরীকে সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে ওঠার এই লক্ষ্যে জাতীয় পরিকল্পনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ; তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কী সিদ্ধান্ত আসছে, সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আজ থেকে ৫০ বছর আগে স্কটিশ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, রাজনীতিক জিমি রিডের এক উক্তি এখন নতুন করে সামনে আসছে জলবায়ু সম্মেলন ঘিরে।
জাহাজ ভাঙা শিল্পের শ্রমিকদের উদ্দেশে তখন তিনি বলেছিলেন, “কোনো গুণ্ডামি চাই না, কোনো ভাংচুর চাই না, কোনো মাতলামি চাই না। মনে রাখতে হবে, পুরো বিশ্ব কিন্তু আমাদের দেখছে।”
অর্ধশতক পরে সেই একই গ্লাসগোর দিকে এখন আবার চেয়ে আছে গোটা বিশ্ব, ধরিত্রী রক্ষায় বিশ্বের শতাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতারা কী সিদ্ধান্ত নেন, তার জন্যই এখন অপেক্ষা চলছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.