আম্ফানের ক্ষত নিয়েই আড়াই মাস পর আবারও খুলল কলেজ স্ট্রিট বই পাড়া

কলকাতা প্রতিনিধি: কলেজ স্ট্রিট বই পড়া কত ইতিহাস বুকে করে দাঁড়িয়ে ৷ নতুন বইয়ের গন্ধ ৷ সদ্য প্রকাশিত বইয়ের আনন্দে নব্য কবি সাহিত্যিকদের উন্মাদনা ৷ শ্রদ্ধেয় কবি এবং সাহিত্যিকদের নিত্য আনাগোনা ৷ পৃথিবীর কত বই চোখের সামনে উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয় ৷ স্টল থেকে স্টলে বই পড়ুয়াদের ভিড় ৷ কত নতুন করে বেড়ে ওঠা প্রেমের স্বাক্ষী এই কলেজস্ট্রিট বই পাড়া ৷ কত মানুষের রুজিরোজগার এই বই পাড়া ৷
১৯৩০-৪০ এর দশক থেকে আজকের কলেজস্ট্রিট গড়ে উঠতে শুরু করে ৷ তবে বইয়ের দোকানের ইতিহাস আরও পুরনো ৷ শোনা যায়, বিদ্যাসাগরও নাকি বইয়ের দোকান খোলেন ৷ এখন কলেজ স্ট্রিটে ১৮০০-র বেশী বইয়ের দোকান ৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরনো বইয়ের মার্কেট কলেজ স্ট্রিট ৷ কলেজ স্ট্রিট ভারতের অন্যতম বড় বইয়ের মার্কেট ৷
কিন্তু একদিন হঠাৎ লকডাউন। বইপাড়ার সঙ্গে যুক্ত কত কর্মীর রুজিরুটি বন্ধ হয়ে গেল। স্বপ্নের বইঘরগুলোয় অন্ধকার নেমে এল। যতই অনলাইন থাকুক, পাতা উলটে, অক্ষর ছুঁয়ে ছুঁয়ে বই কেনার সে তৃপ্তি কি আছে? বইয়ের চেয়ে বড় বন্ধু নেই.. হাত বাড়ালেই বন্ধু…। লকডাউনেই শেষ নয় ৷  দুর্গতি ধেয়ে আবার আমফানের সাথে ৷ আমফানের এক ঝটকায় সমস্ত স্বপ্ন যেন জলের গ্রাসে অতলে নিমজ্জিত হয়ে গেল ৷ চারিদিকে ক্রন্দন ৷
তবে হাজার হাজার মানুষের শুভকামনা এবং প্রার্থনায় আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর খুলল কলেজস্ট্রিট। এখনও আমফানের ভিজে ক্ষত বুকে। অনেক বই জলে ভাসছে। প্রকাশকদের দুশ্চিন্তা, যে মানুষগুলো দানাপানি জোটে এই বই পাড়ার তাদের উদ্বেগ বুকে ধরে  তাই নিয়েই বইপাড়া আবার হাসল…….।
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখরদে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘খুবই ভাল খবর। তবে শুধু দোকান খুললেই চলবে না। ধীরে ধীরে গণ পরিবহণও স্বাভাবিক হতে হবে। আমাদের বই ব্যবসায়ী ও অনেক প্রকাশককে ট্রেনে, বাসে চেপে দূর থেকে আসতে হয়। অনেকে ট্যাক্সিতেও আসেন। বই কিনতেও অনেকে দূর থেকে আসেন।’’ কলেজ স্ট্রিটের বই ব্যবসায়ী ও প্রকাশকেরা জানাচ্ছেন, লকডাউন এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তাঁরা বিধ্বস্ত। এর মধ্যে একটু হলেও আশার আলো বইপাড়া খোলার অনুমতি পাওয়া।
সুধাংশুবাবু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, সবার সাহায্যের জন্য গিল্ডের তরফে থেকে একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এই দুর্দিনে তাঁরা সকলের কাছেই সাহায্য চাইছেন।

দোকান খুললেও করোনার সব বিধিনিষেধ মেনেই দোকান খোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশক ও বই ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, আমপান ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির পরে যেটুকু অবশিষ্ট আছে তা নিয়েই তাঁরা দোকান খুলবেন। কতটা ক্ষয়ক্ষতি হল তার হিসাব করতে হবে। তবে দোকান খোলার পরে প্রত্যেক দোকানদারকে মাস্ক পরতে হবে। প্রয়োজনে গ্লাভসও ব্যবহার করবেন তাঁরা।

সেই সঙ্গে দোকানে যেন ভিড় না হয় সেটাও তাঁরা খেয়াল রাখবেন। অ আ ক খ থেকে বই পড়া আমাদের পরম আত্মীয় । জীবনের ওঠাপড়া,সাফল্য, প্রেম, স্বপ্ন তাকে ঘিরে। কলেজ স্ট্রিটের অধ্যায়ে সব লেখা হয়ে থাকে। কলকাতা জানে, কফি হাউস-বসন্ত কেবিনে আবার আড্ডা হবে। পুরো বইপাড়াটাই আবার সবার হবে। আবার স্বপ্নগুলো ডানা মেলবে ৷

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর বিশেষ (কলকাতা) প্রতিনিধি রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.