কবির স্বপ্ন

জি কে নাথ (কলকাতা): নাভিহীন নীরব গহনে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ লিঙ্গহীন এক ভাষারচিতা ,জ্বলজ্বল উজ্জ্বল চোখে বাঁকে বাঁকে ঘুরছে প্রসূত উপকথায় কম দূর নয় এ রসবাংলার গ্রামীন ঘাসের চাকা,
সংকেতমুখর মাটির ছিন্ন পাতায় অতীন্দ্রিয় ঘুটঘুটে লোকালয়ের দিকে কল্পআলপনা আঁকছে উৎফুল্ল হৃদয় বিযুক্তিহীন মায়াবী রঙে অনন্তের আঁচড়ে,
অনেকদূর গড়িয়ে আসে ঢেকে রাখা শালজঙ্গলের অন্ধকারে ধূপের স্তরান্তরে ধারণ করা কবিতার গন্ধজল,
মনহীন মনের গহ্বর বেয়ে নামছে ছাপিয়ে পিছলে পড়া সমস্ত জনপদ,
দৃশ্যের বাইরে ফিকে হয়ে আসে ছোট হয়ে আসা চোখের অনুসরণ,পরতে জড়িয়ে যায় অকূল রক্তের উল্লাস কাঁকড়কীর্ন মাঠের সন্ধ্যার মতোন অস্থির হাওয়ায়,
এই বেঁচে আছি অনিশ্চিত অনাদরে জন্মভূমি ছেড়ে ,এতো এতো মানুষের উপেক্ষায় ভিড়ে যায় কবিজন্মের আত্মা সুতোর প্রান্ত ছিঁড়ে অসীমে,
ভাষাবেষ্টিত নিভৃত বালকের কাছে ছুটি চেয়ে দৌড়োতে থাকি আজ , তীব্রতর এক ভৌ দৌড় চাঁদের কিরণে,
মন্থর মৃত্যুর মতো হেঁটে ফিরে আসবো বিষণ্ণতা ছড়িয়ে ছড়িয়ে,
ঝরে যায় দূরে শোকের পাতাহীন বৃক্ষের নীচে কেবলই শূন্যতা,
যুগের সাদাকালো নিজস্ব জানালার পাশে দেখি বিবর্ণ রংচটা ফুলদানি উল্টে গড়িয়ে যায় অবচেতনের সাদা বিছানায়,পিতল রঙা আলো গড়াতে গড়াতে দু চোখ হয়ে যায়,
এইভাবে থাকা অস্তিত্ব জুড়ে খালবিল ভরা সংসারের স্তন আঁকড়ে ধরে কেঁদে ওঠে ক্ষুধার্ত  চাঁদশিশুর মরা ধ্বনি,
অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা শয়ে শয়ে আলোর পিণ্ডে উপেক্ষিত নির্জনতার দেহ মন্ত্র হয়ে ওঠে ক্রমে,
মায়াভেজা কাঠবাদামের নিঃস্ব ছায়ায় ভিৎ সরে জীবনের সম্পর্ক ভাঙে ,ভাঙে মৌন মুখের নীরবতা চিরকালের কোলাহলে,
সমর্থনে জেগে থাকে নীরবতা খুঁটে খাওয়া হেমন্ত পায়রার বিষাদ রং, দু ডানায় ঝরে যায় জোছনায় অনালোকিত কাতরতা , দৈব কন্ঠ,
বিরাট ব্যাপ্তির ভিতর আশ্রয়ে জড়িয়ে থাকে এ একধরনের ঋণ অসীমে বুকের নরম মাটি ছুঁয়ে,
বাকি থাকা যতটুকু পথ হেঁটে যাবো নিজের কাঁধে চড়ে স্পষ্ট ভাষায়,
সুরমথিত অগভীর মাটিজলের হাজার ফনায় বিষ ভরে ওঠে ,মানুষের বিষ রাশি রাশি …চাপা দিয়ে রাখছি অজস্র পাতা ছেড়া কবিতায় চারদিক,
উঠে পড়ি স্বভাবের উঁচু থেকে বিবর্ণ ঋতুযাপন শেষে ,ঠিক পৌঁছে যাব একদিন নির্ধারিত নির্জনে,
 উড়ে আসে সন্ধের ধুলোর শরীরে ক্ষণের অনুভব দূরগামী মোহের জলজগন্ধে ওই,
ধূসর ফড়িং এর স্বচ্ছ পাখায় লেগে থাকে নৈঃশব্দের রোদদাগ,
উদাসী পথিকের মতো জীবনের কাছে খোলা আত্মার দীপ নিভে যায় মাঠের আদিগন্ত শূন্যতায়,
জন্মের আঁতুড়ে জায়মান অন্তর আলোর আস্ফালনে উড়ে যাই ঝোড়ো হাওয়ায় মৃদু অথচ সহজ হয়ে দূরে কোথাও অসীমে যেখানে কেবলই চলে যাওয়া আছে সব পথ শেষে,
পুরানো বন্ধুর মতো চিৎকৃত নশ্বরতায় যেন নিবিড় অতীত গাছেদের ছায়ায় গ্রামভরা দুপুর লিখে রাখছি,
ছায়াহীন শব্দহীন আপাতসরল স্তব্ধতায় খাঁ খাঁ পৃথিবীর শব্দহীন চরাচরে ভেসে যাচ্ছে দিনভোর অর্গলহীন শব্দের মোড়কে কবির দেহ কবিতা ছেড়ে তিরতির,
ভাসছে ভাসতে ভাসতে ভাসছে দেখি কবিতাহীন কবির দেহ,
আটকে যায় পুরানোগন্ধী জলের শিকড়ে জোছনাহীন রাতের অন্ধকার , ঘোরতর মনের পাতা কাজল কালো,
ভিতরে ভিতরে উড়ে যায় ডানার ক্লান্তশব্দে কেঁপে ওঠা মায়া ,ঘাই মেরে যায় চেতনার নভোনীলে,
ধূসর হতে থাকে ক্রমশ ভাবনার চলাচলে স্তরহীন এ অসীম প্রবাহ , ঘুণে খাওয়া রাতের ভ্রমণ পরিধি আর নৈঃশব্দের কুহুতান,
এখন আন্দোলিত ভয় ও অসহায়তায় উড়ে আসে শব্দের উড়ানে হেমন্তের কাক ঝাঁকে ঝাঁকে,
কি অদ্ভুত আবারও দেখি, ঘুমের ভিতর নাভিহীন নীরব গহনে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ লিঙ্গহীন এক ভাষারচিতা ,জ্বলজ্বল উজ্জ্বল চোখে,
তাকিয়ে থাকি আমি কেবল হতভম্ভের মতো ফ্যালফ্যাল……………..! #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.