আমাদের কসবা, আমাদের গর্ব -ড. সফিকুল ইসলাম

ড. সফিকুল ইসলাম:
১.
আমাদের কসবা, আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার,
আমাদের ভাবনায়, চিন্তা চেতনায়, স্বপ্ন অফুরান।
কসবার মাটি সেরা আর খাঁটি দেখে যাও আগুয়ান,
সোনা ফলাতে ব্যস্ত হাজার  ত্যাগী আর মহীয়ান।
২.
নদী নালা, আর খাল-বিল-জমি আঁকাবাঁকা মেঠো পথ,
পাহাড়ী টিলার সবুজ বনানী কসবা যে অপরূপ।
সালদা, বিজনা, সিনাই, সাঙ্গুর, বুড়ি আর কালিয়ারা,
কসবা চিড়ে এঁকেবেঁকে চলে করে হৃদয় মাতোয়ারা।
৩.
আদি নিদর্শন, ঐতিহ্যে ভরা শত সংস্কৃতির মেলা,
সভ্যতার ধাপে কসবা বেয়েছে আধুনিকতার ভেলা।
তেরো শতকে গড়া দুর্গ হোসেন শাহর কৈলাঘর,
সেখানেই, ফরাসী শব্দ কসবা মানে উপশহর জনপদ।
৪.
সোনার মানুষ সোনা ফলাতো কীর্তিতে ছিল উজ্জল,
আলোকিত কসবার পূর্ব নাম তাই ছিলো যে নুরনগর।
কসবা বাদৈর খাড়েরা মেহারী কুটি আর মূলগ্রাম,
কাইমপুর বায়েক বিনাউটি গোপীনাথপুর দশ অমর নাম।
৫.
ব্রিটিশ আমলের রেললাইন যায় কসবার বুক চিড়ে,
রাতদুপুরে হুইসেল বাজায় নিশীথ পাখির সুরে।
পাহাড় আছে সবুজ আছে সমতলও কত ধারে,
নদীনালা আর খালবিল শত কসবার বুক জুড়ে।
৬.
কুল্লাপাথর শহীদ-সমাধি একান্ন মুক্তিসেনা,
লাখো শহীদের স্মৃতি প্রকাশে কসবার বীরগাঁথা।
লক্ষীপুরের শহীদ সমাধি বারো মুক্তিযোদ্ধা,
আনাচে কানাচে হাজার শহীদের কীর্তি আছে ধরা।
৭.
তিনলাখপীর থেকে ভল্লবপুর ছিল পোড়া রাজার জাঙ্গাল,
খেওড়ায় আছে গর্ব করার শ্রী শ্রী আনন্দময়ী আশ্রম।
কুটি বড় মসজিদ, মঈনপুর মসজিদ, শত মসজিদের ছানি,
আড়াইবাড়ি তিন গম্বুজ মসজিদ যেন ধর্মপ্রাণের ভূমি।
৮.
ধর্মসাগর,  গুনসাগর, রামসাগর দেখতে চাও,
কসবা, জাজিয়ারা মাইজখার গ্রামে তবে তুমি যাও।
বাইশ একরের কল্যাণসাগর নয়নাভিরাম দিঘী,
ঝিরঝির হাওয়া প্রাণ জুড়িয়ে দেয় মেলো যদি আঁখি।
৯.
শিক্ষা দীক্ষায়, আদব-কায়দায়, কৃষ্টি আর কালচারে,
কসবা যে ভাই সেরাদের সেরা সকলেই তাই জানে।
কবি লেখক, মন্ত্রী সচিব,  জ্ঞানী গুণীতে ভরা,
কসবা হলো আপাদমস্তক সংস্কৃতিরই আখড়া।
১০.
আলেম ওলামা, ওলী আওলিয়া ছিলেন অনেক হেথায়,
ধর্মের আলো ছড়ায় আজও মসজিদ আর মাদ্রাসায়।
শত মনীষী বিদ্যোৎসাহী জনহিতকর কাজে,
শিক্ষানুরাগী কাজ করেছে শুধুই বিনা স্বার্থে।
১১.
কিষাণকিষাণী ফসল ফলায় গায়ের ঘাম ঝরিয়ে,
স্বপ্ন দেখে পুত্র কন্যা গৌরব বয়ে আনবে।
প্রবাসীরা দুরে থেকে সারাদিন কাজ করে,
তাঁদের টাকায় কসবার ঘরে ঘরে উন্নয়ন আলো জ্বলে।
১২.
ভালোবাসি ভালো জানি ওহে আমার কসবা,
তোমার তরে দিতে পারি যদি লাগে মোর প্রাণটা।
শত আঘাত শত বাঁধায় কসবা অমর থাকবে,
এতে জন্মে রত্ন সন্তান হাজার সোনা ফলাবে।
১৩.
কসবার জনপদ মিলেমিশে থাকে আত্মীয়ের মতো,
সদালাপী মোরা অতিথিপরায়ন ভালোবাসি কতো।
কলহ কোলাহলে আনন্দ উল্লাসে মায়াবী হৃদয় টানে.
বিপদে আপদে পাশাপাশি থাকি কোলাকুলি সুখ দুখে ।
জুন, ২০১৯।
(লেখক সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ করেছেন, জাপান থেকে এমফিল ও অস্ট্রেলিয়া থেকে পিএইচডি করেছেন। তিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য, বর্তমানে উপসচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সহকারি কমিশনার, ম্যাজিস্ট্রেট, এসিল্যান্ড, সিনিয়র সহকারি সচিব, এনডিসি, আরডিসি, ডিডিএলজি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি বাদৈর, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.