আকাশের ঠিকানায় চিঠি

জিনাতুজ্জোহরা বীথি: প্রিয় আব্বু, কখনও মুখ ফুটে বলতে পারিনি কতোটা ভালোবাসি তোমাকে। হয়ত নিজেও সেভাবে কখনও উপলব্ধি করতে পারিনি সে অনুভূতিটা। কোথায় যেন ঘাপটি মেরে ছিলো, জানো?
অথচ তুমি চলে যাওয়ার পর হাড়ে হাড়ে টের পাই তুমি আসলে কী ছিলে আমাদের জীবনে। কেন এমন হয় বলতে পারো? কেন আমরা দাঁত থাকা অবস্থায় দাঁতের মর্যাদা দিতে পারি না?
সেদিন আমার চাকরিতে জয়েনিং এর প্রথম দিন ছিল। সকালের দিকে হঠাৎ মেস মালিকের ডাকাডাকি। জানলাম আমাকে ফোনে না পেয়ে বোন তাকে কল করেছে। ফোন কানে নিলাম। বোন কান্নাজড়িত কণ্ঠে কী কী সব বলল বুঝলাম না। কেবল এইটুকুনি বুঝলাম তোমার কিছু একটা হয়েছে।
কী আর হতে পারে তোমার! আমি তো আবার পজিটিভ মাইন্ডেড। মাঝে মাঝে মনটা যে কুঁ গাইছিল না সেটা বললে মিথ্যে বলা হবে। কেবল নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছিলাম,”না, এমন কিছু হবে না ইনশাআল্লাহ”।
বাড়ির কাছাকাছি যত পোঁছাচ্ছিলাম তত ভীতি বাড়ছিল যেন। বাইরে এত মানুষের জটলা কেন! আর ওরা এমন অদ্ভুত নজরে আমার দিকে তাকাচ্ছেইবা কেন! কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না, বিশ্বাস কর।
তারপর ধীর নাকি দ্রুত পদক্ষেপে বাড়িতে ঢুকলাম। ভীতরের অবস্থা দেখি আরও অন্যরকম। এত মানুষ!! এবার ভয়ের পারদ উর্ধ্বমুখী। তোমার রুমের দিকে তাকালাম। ওইতো বিছানায় তুমি! কিন্তু এমন অস্বাভাবিকভাবে শুয়ে আছো কেন! আর তোমাকে ঢেকে দেয়া হয়েছেইবা কেন!
ব্যস, আর কিছু মনে নেই। ধুপ করে পড়ে গেলাম সম্ভবত। বোন কাঁদতে কাঁদতে টেনে তুলল। সব শেষ হয়ে গেল,সব। মাথার উপর থেকে বটবৃক্ষের সেই সুবিশাল ছায়াটা নিমিষেই নাই হয়ে গেল। এতিম হয়ে গেলাম আমরা।
আব্বু তোমার মনে আছে? সেদিন টিভিতে “আয় খুকু আয়” গানটা বাজছিল। আমি রান্নাঘরে রাঁধছিলাম কিছু একটা। গান শুনে ছুট দিলাম তোমার রুম বরাবর। আমাকে দেখামাত্রই তুমি একটা আবেগমাখা হাসি আমাকে উপহার দিলে। তোমার চোখ ছলছল। যেন আমাকে খুঁজছিলে তুমি। আমিই আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম সে মুহূর্তে।
তুমি খুব চা পছন্দ করতে। এক কাপ চা পেলে কী যে খুশি খেলা করত তোমার চোখেমুখে! এখন ওইসব ছবি হরহামেশাই চোখে ভাসে। কতদিন দেখি না তোমাকে আব্বু!
আমার কলিগ সারাদিন ওর বাবার সাথে কথা বলে। আমার তখন চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করবার থাকে না। আমি চাইলেও ‘ABBU’ লেখা কনটাক্টটাতে আর কল করতে পারি না। আমার ফোনজুড়ে তোমার কল রেকর্ড আছে। কিন্তু নিজেকে সবসময় দুঃসাহসী বলে দাবি করা এই আমার সাহস হয় না সে কল রেকর্ড মাত্র ক’সেকেন্ডও শোনার।
তোমার বড় মা তোমাকে অনেক মিস করে আব্বু, অনেক। তুমি ভালো থেকো। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.