অভিবাসন প্রত্যাশীদের ২২ লাখ ইউরো লুট করেছে গ্রিক সীমান্তরক্ষী

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত ছয় বছরে অভিবাসন প্রত্যাশী ও শরণার্থীদের অন্তত ২২ লাখ ইউরো সমপরিমাণ অর্থ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গ্রিক সীমান্ত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তুর্কি সীমান্ত দিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জোর করে ফেরত পাঠানোর সময় তারা এই অর্থ ছিনিয়ে নেয় বলে জানিয়েছে স্প্যানিশ দৈনিক এল পাইস।
নগদ অর্থের পাশাপাশি অভিবাসন প্রত্যাশীদের সঙ্গে থাকা অলঙ্কার, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন সামগ্রী মিলিয়ে অর্থের পরিমাণ ২২ লাখ ইউরো বলে জানিয়েছে এল পাইস। ছিনিয়ে নেয়া অর্থের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
কারণ যেসব অভিবাসীদের পুশব্যাক বা জোরে করে ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের অনেকের তথ্য পাওয়া যায়নি। ইভরোস সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও, মাইগ্রেশন অ্যাডভোকেসি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে রিপোর্টটি তৈরি করেছে এল পাইস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্ত এলাকায় আসা উদ্বাস্তু ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের অর্থ ও পণ্য ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা বেড়েছে। ২০১৭ সালের দিকেও এমন ঘটনার কথা শোনা যায়নি। কিন্তু গত কয়েক বছরে গ্রিক সীমান্তরক্ষীরা এটিকে নিয়মিত ঘটনায় রূপ দিয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক ইভা কসে জানান, অনিয়মিত পথে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঠেকাতে এবং নিরুৎসাহিত করতে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল কিংবা অর্থ ছিনিয়ে নিচ্ছেন সীমান্তরক্ষীরা। তিনি বলেন, ‘আপনি যখন তাদের ফোন কেড়ে নেন, তখন তারা যে সেখানে ছিল, সেটা হয়তো আর প্রমাণ করা যায় না। কিন্তু আপনি যখন তাদের অর্থ লুট করেন, তখন আপনি তাদের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তোলেন।’
বলকান ও গ্রিসকেন্দ্রিক অভিবাসন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান বর্ডার ভায়োলেন্স মনিটরিং নেটওয়ার্কের সিনিয়র পলিসি অ্যানালিস্ট হোপ বার্কার জানান, অভিবাসন প্রতাশীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোনগুলো কখনও কখনও রাখা হয়, আবার কখনও নষ্ট করে ফেলা হয়।
তিনি বলেন, ‘তবে সীমান্তরক্ষীরা অবশ্যই অর্থটা রেখে দেয়। তারা যদি বুঝতে পারে কোনো অভিবাসন প্রত্যাশী নিজের কাছে অর্থ লুকিয়ে রেখে মিথ্যা বলছে, তাহলে শাস্তি হিসেবে তাকে মারধর করা হয়।’
২০২২ সালে গ্রিক ন্যাশনাল কমিশন ফর হিউম্যান রাইটস থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠানো বা পুশব্যাকের শিকার অভিবাসন প্রত্যাশীদের ৯৩ শতাংশ সীমান্তরক্ষীদের হাতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।
এমনকি সীমান্তরক্ষীদের হাতে সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন অনেক অভিবাসন প্রত্যাশী। এল পাইসের অনুসন্ধান অনুযায়ী, সীমান্ত থেকে অভিবাসন প্রত্যাশী ও উদ্বাস্তুদের ধরে পুলিশ স্টেশন বা সামরিক ব্যারাকে নিয়ে যায় সীমান্তরক্ষীরা।
সেখানে নিয়ে তাদের জিনিসপত্র কেড়ে নেয় এবং তাদের মারধর করা হয়। এরপর গ্রিসে আশ্রয় নেওয়ার কোনো সুযোগ না দিয়েই তাদের জোর করে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নদী পারাপারের সময় তাদের ভেলায় তুলে দেয় গ্রিসের সীমান্তরক্ষীরা।
এমন ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় মারা গেছেন অনেক অভিবাসন প্রত্যাশী। এমনকি তুর্কি সীমান্ত অংশে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় অভিবাসন প্রত্যাশীদের মরদেহ পাওয়া গেছে।
কসে বলেন, ‘আপনি যখন তাদের নগ্ন অবস্থায় ফেলে যান, এর মধ্য দিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের অপমানিত ও হতাশ করেন। সীমান্তরক্ষীরা মনে করে এমন আচরণ করলে, অভিবাসন প্রত্যাশীরা গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। এটি তাদের একটি কৌশল।’ #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.