অনিয়ম দুর্নীতির চেরাগ নিয়ে পশ্চিম রেলের সিওপিএস শহিদুল ইসলাম: গড়েছেন সম্পদের পাহাড়  

বিশেষ (রাজশাহী) প্রতিনিধি: বাংলাদেশ রেলওয়ের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ দুদকের অভিযান দীর্ঘদিনের হলেও এবার দুর্নীতির বিশেষ খবর পাওয়া গেছে পশ্চিমাঞ্চল রেল রাজশাহীতে।
পশ্চিম রেলের দুর্নীতির তালিকায় চোখ রাখলেই জানা যাবে কার নাম সবার উপরে। তবে মিডিয়াকর্মীর বিশেষ অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া অঘাদ সম্পদের সন্ধান। সেই দুর্নীতিকারি সদ্য বদলি হওয়া চীফ অপারেটিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট (সিওপিএস) শহিদুল ইসলাম।
এই শহিদুল ইসলামকে অনেকবার বদলি দিয়েও সরানো যাইনি রাজশাহী থেকে। বদলি দিলেই কোন না কোন অযুহাত নামক তকমা বলে ও অলৌকিক ক্ষমতায় রাজশাহীতেই আছেন প্রায় এক যুগ ধরে। কি এমন ক্ষমতা, কে তার শক্তির উৎস? আলাদিনের চেরাগের কোন দৈত্যর ক্ষমতা বলে এতো অনিয়ম,এমন প্রশ্ন এখন জনমনে।
শহিদুল ইসলাম পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার মঠবাড়িয়া পৌর বাজারে বাড়ি হলেও বেশিরভাগ সময় কেটেছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। খুলনায় কলেজ জীবনের পাশাপাশি তৎকালীন জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়েছেন বলে গুনজন রয়েছে।
এরপর শিক্ষা জীবন শেষ করে ২০০৩ সালে সহকারি ট্রাফিক সুপারেনটেডেন্ট (এটিএস) পদে যোগদানের মাধ্যমে শুরু হয় তার রেলওয়ে চাকরি জীবন। তবে চাকরির বয়স কেবল ১৯ বছর। এর মধ্যে রাজশাহীতে কাটে প্রায় এক যুগ।
রাজশাহীর একযুগ কর্মজীবনে, এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ, যা রীতিমত অস্বাভাবিক ব্যাপার। তিনি রাজশাহীতে কর্মজীবনের শুরু থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
তিনি ২০১০ সালের ডিসেম্বরের ৫ তারিখে এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৫ সালের মার্চ মাসের ২৯ তারিখে তার চেয়ার বদল হয়। কিন্তু ২৯ তারিখে চেয়ার খালি করলেও তিনি তার আগেই বদলি হওয়া সেই চেয়ার দখল করে নেন। সেখান থেকে ১৫ সালের মার্চের ৩ তারিখে পদায়ন হন এ্যাডিশোনাল চীফ অপারেটিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসেবে। ঐ দ্বায়িত্ব শেষ করেন ১৬ সালের ২ জুন এবং সেখান থেকে এ্যাডিশোনাল চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার হিসেবে চিটাগাং বদলি করা হয়।
কিন্তু তিনি সেখানে নাম মাত্র যোগদানের পর উপর মহলে যোগাযোগ করে আবারও ১৬ সালের নভেম্বরের ৩ তারিখে একই পদে রাজশাহীতে যোগদান করেন। পরে এই দ্বায়িত্ব শেষ হয় ১৭ সালের ২ জুলাই। সেখান থেকে চীফ পার্সোনাল অফিসার (সিপিও) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
তিনি যোগদান করেন ১৭ সালের ১৯ শে জুন এবং দ্বায়িত্ব শেষ করে ১৮ সালের ৬ নভেম্বর। ১৮ সালে তাকে অবনমন করা হলেও তিনি উক্ত চেয়ার ছাড়েননি। অথচ তিনি আগেই অর্থাৎ ১৮ সালের ২০ জুন আবারও এ্যাডিশোনাল চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের চেয়ারে আসতে হয় এবং সেখানে প্রায় এক বছর থাকার পর অবশেষে ১৯ সালের ১৮ আগষ্ট চীফ অপারেটিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট (সিওপিএস) হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে চলতি বছরে ২৩ জুন তাকে একই পদে চিটাগাং বদলি করা হলেও তিনি কোন ভাবে চেয়ার ছাড়েননি। করন ঐ যে অযুহাতের তকমা!! সেই বদলিকে উপেক্ষা করে অলৌকিক ক্ষমতা বলে চেয়ার দখলে রেখেছিলেন।
অবশেষে মিডিয়ার ততপরতায় গত ৩০ জুলাই চেয়ার ছাড়তে বাধ্য হন। অথচ এই চেয়ার বদলের মাঝে তিনি নানা দুর্নীতির সাথে সমঝোতা করে নেন। শুরু হয় তার নিয়োগ আর টেন্ডার বানিজ্য। এই সকল দুর্নীতির তেলেশমাতিতে গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ, গেড়েছেন (স্থায়ী ঠিকানা) বসত।
রাজশাহীতে তার বিলাসবহুল তিনটি বাড়ি, একই দাগে ১৪ বিঘা জমি, পদ্মা আবাসিক এলাকায় কয়েকটি প্লট। এছাড়াও অন্যের মাধ্যমে হজ্বোর মোড়ে (পদ্মা আবাসিক) কনফেকশনারি ব্যবসা। ভদ্রা (উপর ভদ্রায়) রয়েছে নিজ পরিচালিত মাদ্রাসা।
তবে আইনি ঝামেলা এড়াতে মাদ্রাসার দ্বায়িত্ব দিয়েছেন তার নিজ দেশের রেলের সাবেক কর্মকর্তা আলি আকবরকে। সেখানে তিনি প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকা ব্যায় করেন। এছাড়াও তার রয়েছে খুলনা শহরে বাড়ি। নিজের জন্মস্থানেও সম্পদ আছে। অবশ্য সকল সম্পদ রয়েছে স্ত্রী ও নিকট আত্নীয়র নামে। হিসাব ছাড়া করেছেন নিয়োগ বানিজ্য।
অসংখ্য নিয়োগ বানিজ্যের কারনে বর্তমানে হাত ছাড়া হয়েছে নিয়োগের ক্ষমতা। যা এখন মন্ত্রণালয়ের হাতে।
বিষয়টি নিয়ে পশ্চিম রেলের পুর্বের সিওপিএস শহিদুল ইসলামের সাথে (নিজ ব্যবহৃত) মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার বিষয়ে রেলের কোন কর্মকর্তায় মুখ খুলতে রাজি নন।
পরে পশ্চিম রেলের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কারো ব্যক্তিগত সম্পদ দেখার দ্বায়িত্ব আমার না। বৈধ না অবৈধ এটা দেখা সরকারের কাজ। তিনি তার সম্পদের ট্যাক্স দেন কিনা, এটা আয়কর দেখবে। যদি অবৈধ কিছু পাই তাহলে অবশ্যই আইন ব্যবস্থা নিবে। আর তিনি যদি দাপ্তরিক কোন অনিয়ম দুর্নীতি করেন অথবা নিয়োগ বা টেন্ডার বানিজ্য করেন তাহলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  
এখন সকলের প্রশ্ন, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কিভাবে গড়লেন এত সম্পদ? এত টাকা আসলো কোথায় থেকে, সেই টাকা বৈধ নাকি অবৈধ? এই সম্পত্তির ভ্যাট-ট্যাক্স দেন কিনা? তার এসকল সম্পত্তির হিসাব সারকারের কাছে আছে কি? এমন প্রশ্ন এখন সকলের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
নিয়োগ ও টেন্ডার বানিজ্যের খবর সহ এমন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আপনাদের সামনে আগামী পর্বে হাজির হবো।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (রাজশাহী) প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.