৬৫-তে সুবর্ণা মুস্তাফা

বিটিসি বিনোদন ডেস্ক: সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সৌরভ ছড়ানো একটি নাম সুবর্ণা মুস্তাফা। একাধারে তিনি একজন অভিনেত্রী, প্রযোজক ও জাতীয় সংসদ সদস্য। একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য এ অভিনেত্রীকে তারকাদের তারকাও বলা হয়। নতুন প্রজন্মের কাছে তো বটেই, তার সহকর্মীদের কাছেও ভীষণ প্রিয় তিনি।
নন্দিত এই অভিনেত্রী স্পর্শ করলেন জীবনের ৬৫তম বসন্ত। কিন্তু জীবনের বিশেষ এই দিন নিয়ে জমকালো কোনো আয়োজন রাখেননি জীবন্ত এ কিংবদন্তি। নিজের জন্মদিন নিয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা জানান, বিশেষ দিনটি নিয়ে আগের মতো আর উচ্ছ্বাস কাজ করে না। তবে প্রতি বারই নিজের জন্মদিন এলে এক ধরনের দোলা দেয় মনে। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
কয়েক বছর আগেও কাছের কিছু প্রিয় মানুষ, সহশিল্পী, পরিচালকদের নিয়ে দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করলেও গতবার যেমন বিশেষ কোনো আয়োজন ছিল না, এবারও আহামরি কোনো পরিকল্পনা নেই।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিনভর ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত থাকব মনে হচ্ছে। আমার কাছে সব কাজই কাজ, সব দিনই দিন। খুব কাছের যারা তারাই দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপিত করেন। এটাই আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগার।’
তারকাদের আইকন বলে পরিচিত পাওয়া সুবর্ণা মুস্তাফা ১৯৫৯ সালের এই দিনে (২ ডিসেম্বর) জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকায় জন্মগ্রহণ করলেও তার পৈতৃক নিবাস ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নে। তিনি প্রখ্যাত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার কন্যা এবং ক্যামেলিয়া মুস্তাফার বোন। এমনিতেই অভিনয় কম করেন তিনি। এর মধ্যে আবার রাজনীতি নিয়ে বেশ সক্রিয় থাকায় অভিনয়ের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হচ্ছে। তারপরও অভিনয়কে জীবন থেকে একেবারে ঝেরে ফেলতে পারবেন না তিনি। অভিনয় যে তার জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে।
অভিনয়ের ক্ষুধা জীবনভরই থাকবে। সেই ক্ষুধার তাড়নাতেই মাঝে মাঝে অভিনয়ের সাধ জাগে, অভিনয় করেন। আশির দশকে তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
বিশেষ করে আফজাল হোসেন এবং হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে তার জুটি ব্যাপক দর্শক সমাদৃত হয়। এছাড়া তিনি হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ ও ‘আজ রবিবার’ টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি তিনি ২২ বছর মঞ্চেও অভিনয় করেন।
১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’ সিনেমায় অভিনয় করেই সিনেমাপ্রেমী দর্শককে মুগ্ধ করেছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা। এই সিনেমাতে তার সহশিল্পী ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ।
পরবর্তী সময়ে সুবর্ণা মুস্তাফা ‘লাল সবুজের পালা’, ‘নতুন বউ’, ‘নয়নের আলো’, ‘সুরুজ মিঞা’, ‘রাক্ষস’, ‘কমান্ডার’, ‘অপহরণ’, ‘স্ত্রী’, ‘দূরত্ব’, ‘গহীন বালুচর’ এবং ‘গণ্ডি’ সিনেমাসহ আরও বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন। টিভি নাটকে সুবর্ণা মুস্তাফা-আফজাল হোসেন সর্বকালের সেরা জুটি। এই জুটিকে সর্বশেষ অভিনয় করতে দেখা যায় বদরুল আনাম সৌদের নির্দেশনায় ‘অক্ষর থেকে উঠে আসা মানুষ’ নাটকে।
মায়ের সহায়তায় মাত্র ৫/৬ বছর বয়সে বেতারের নাটকে কাজ করেন সুবর্ণা। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন তিনি প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৭১ সালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে টেলিভিশনে কাজ করেছেন।
১৯৭০-এর দশকে সুবর্ণা ঢাকা থিয়েটারে নাট্যকার সেলিম আল দীনের নাটক ‘জন্ডিস’ ও ‘বিবিধ বেলুন’-এ অভিনয় করেন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী ও ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪ (৩০৪), ঢাকা-২২ থেকে সুবর্ণা মুস্তাফাকে মনোনয়ন ও চৃড়ান্তভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। একই বছর শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক পান সুবর্ণা। এছাড়া ‘গহীন বালুচর’ সিনেমার জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.