হ্যাম রেডিও: অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ যখন শখ

বিটিসি বিজ্ঞানপ্রযুক্তি ডেস্ক: প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখন চারপাশের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়, কারিগরি ত্রুটির কারণেও যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে ঠিক তখনই এগিয়ে আসে হ্যামরা, যাদের সহজে চেনার উপায় হলো শৌখিন রেডিও অপারেটর হিসেবে। এই রেডিওকে অ্যামেচার রেডিও বলা হয়ে থাকে।
এই রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থায় একজন ব্যবহারকারী নিজেই একটি পূর্ণাঙ্গ বেতার গ্রাহক ও প্রেরকযন্ত্রের অধিকারী হয়ে ওঠেন। এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে নিজ এলাকা, দেশ, এমনকি পৃথিবীর যেকোনও দেশে ওই ধরনের বেতারযন্ত্র ব্যবহারকারীর সঙ্গে তথ্য বিনিময় করা যায়।
আমাদের দেশেও রয়েছে অ্যামেচার রেডিও। যারা এটা পরিচালনা করে তাদেরকে হ্যাম নামে ডাকা হয়। অ্যামেচার রেডিও আসলে শখের আরেকটি নাম।
এমনই শখে জড়িয়েছেন উন্নয়নকর্মী এ এইচ এম বজলুর রহমান। যিনি একজন হ্যাম। তিনি কল-সাইন ব্যবহার করেন। কল-সাইন হলো একজন হ্যাম অপারেটরের পরিচিতি। কল-সাইন দিয়েই প্রত্যেক হ্যামকে আলাদাভাবে চেনা যায়।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দেশে হ্যাম আছেন অনেক, তবে বেশির ভাগই সক্রিয় নন। সিলেট-সুনামগঞ্জে এবারের বন্যায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সে সময় দুর্গত এলাকায় এই রেডিও ব্যবহার করে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা যেত।
তিনি আরও বলেন, আমরা হাতিয়া, ভোলা ও কক্সবাজারে একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। ওইসব এলাকায় কোনও দুর্যোগ হলে ৩০ মিনিটের মধ্যে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। তিনি মনে করেন, তরুণদের আরও বেশি বেশি এই শখ আয়ত্ত করতে হবে। সম্প্রতি তরুণদের অ্যামেচার রেডিওর প্রতি আগ্রহ দেখে তিনি এমন ধারণা করছেন।
সম্প্রতি সোহেল, লিমন ও আলিফ নামের তিন তরুণকে অ্যামচার রেডিও নিয়ে বেশ উৎসাহী হতে দেখা গেলো। তারা অ্যামেচার রেডিও নিয়ে মাঝে মাঝে ঢাকার বাইরে কর্মশালা, ক্যাম্প আয়োজন করেন। তিনজনের একজন ব্যাংকার, একজন সাংবাদিক ও একজন যোগাযোগ পেশায় থাকলেও শখের রেডিও তাদের এক সুতোয় গেঁথেছে। তারা নিজেদের হ্যাম পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। ঢাকার বাইরে গেলে প্রচলিত যোগাযোগ ব্যবস্থার বাইরে তারা নিজেদের মধ্যে রেডিওতে যোগাযোগ করে থাকেন।
জানা যায়, ১৯৯২ সালের পর থেকে দেশে অ্যামেচার রেডিও চালু হয়। বাংলাদেশের হ্যামরা ওই সময় থেকে অ্যামেচার রেডিও ব্যবহার করতে পারেন। চাইলেই এই রেডিও ব্যবহার করা যায় না। এজন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিতে হয়। তার আগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে রেডিও ব্যবহারের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। কমিশন থেকে অনুমোদন নিয়ে নির্দিষ্ট ভেন্ডরের কাছ থেকে রেডিও কিনতে হয়। বিটিআরসি অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স দেওয়ার জন্য বর্তমানে নিয়মিত পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত দেশে হ্যামের সংখ্যা কম।
বাংলাদেশ অ্যামেচার রেডিও লিগ (বিএআরএল) নামে হ্যামদের একটি জাতীয় সংগঠন আছে। এর সদস্য সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক বলে জানা গেছে। তবে সংগঠনটি অনেকটা নিষ্ক্রিয়। অপরদিকে অ্যামেচার রেডিও সোসাইটি অব বাংলাদেশ (এআরএসবি) নামে হ্যামদের আরেকটি সংগঠন রয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যামেচার রেডিও লিগের সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ দিদারুল হোসাইন জানান, দেশে করোনা শুরু হওয়ার আগে তারা নিয়মিতভাবে অ্যামেচার রেডিও নিয়ে অনুষ্ঠান করতেন। বিভিন্ন সময় সেমিনার, কর্মশালা আয়োজন করে থাকেন। তবে করোনা শুরু হওয়ার পরে সব স্থবির হয়ে আছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, আমরা ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল ওয়ার্ল্ড অ্যামেচার রেডিও ডে-তে বড় আয়োজনে অনুষ্ঠান করি। করোনাকাল কেটে গেলে আবারও আমরা সক্রিয় হবো। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.