হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ নাটোরবাসী

নাটোর প্রতিনিধি: বাচ্চা নাচাতে দে, নইলে তোরা বিপদে পড়বি! বাচ্চা পানিতে পড়বো,আগুনে পুড়বে, করোনায় মরবো। এমন সব ভয়ঙ্কর অভিসাপ দিয়ে নবজাতকের পরিবারে ভীতির সৃষ্টি করে হাজার হাজার টাকা, কাপড়চোপড়, চাল-ডালসহ বিভিন্ন মালামাল হাতিয়ে নিচ্ছে হিজড়ার দল।
নাটোর শহরে ও গ্রামাঞ্চলে গত একমাস ধরে তান্ডব চালাচ্ছে এই নপুংসক জাতি। এ পর্যন্ত নাটোর শহরের ৫০বাড়িতে হানা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নতুন গড়ে উঠা হিজরা দলের সদস্য সেতু হিজরা, বাদল হিজরা, বাপ্পী হিজরা সহ ৮ থেকে ১০ জনের এই দলটি শহরব্যাপি চাঁদা তুলে বেড়াচ্ছে।
চাহিদা পূরণ না করলে বাচ্চা ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হাতে-পায়ে ধরে এমনকি বাচ্চা লুকিয়ে রেখেও রেহাই পাচ্ছে না সন্তানের মা-বাবারা। কমিশনে রাখা খোঁজারুরা কোনো বাড়ি সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে তার সন্ধান দিয়ে দিচ্ছে হিজড়াদের। দিনমজুর ও অসহায় অনেক পরিবারকে হিজড়াদের অনৈতিক দাবি মেটাতে গিয়ে পড়েছে চরম সংকটে। তাদের অত্যাচারে মানুষ ও নবজাতকের পরিবার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
হিজড়াদের টাকা তোলা নতুন কিছু নয়। আগে মানুষ যা দিত, তা নিয়েই খুশি থাকত হিজড়ারা। কিন্তু ইদানীং তাদের আচরণ বদলে গেছে। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাট যেখানে-সেখানে টাকার জন্য মানুষকে নাজেহাল করছে তারা।হিজরাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ নাটোরবাসী!। প্রশাসনও অসহায় হিজরাদের আচরণে!
এমনই একজন ভুক্তভোগী উত্তর বড়গাছা মহল্লার বাসিন্দা জাকিয়া সুলতানা বিটিসি নিউজকে বলেন, বাচ্চার বয়স ২০ দিন না হতেই একদল হিজড়া এসে হাজির। হট্টগোল শুরু করে। ১১ হাজার টাকা না দিলে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। নবজাতক মারা যাবে বলে নানা অভিশাপ দিতে থাকে। পরে তিনি প্রতিবেশির নিকট থেকে ধার নিয়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে রেহাই পায়।
বনবেলঘড়িয়া মহল্লার রুমা খাতুন নামের এক নারী পুলিশ সদস্য বিটিসি নিউজকে জানান, এক সপ্তাহ আগে হিজড়ার দল বাড়িতে ঢুকে ২০ দিন বয়সের মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে ঝাঁকিয়ে নৃত্য শুরু করে। এতে তার বাচ্চা ভয়ে চিল্লাতে থাকে। তারা এগারো হাজার টাকা দাবি করলে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে রেহাই পান।
যদি নাটোরের কোথাও বিয়ের আয়োজন করা হয় তাহলে সেখানে গিয়ে তারা বড় অংকের একটা চাঁদা দাবি করে বসে, ফলে প্রায়শই বিপাকে পড়েন বরযাত্রীসহ কনে পক্ষের লোকজন।
শহরের বনবেলঘড়িয়া মহল্লার ব্যবসায়ী গাজী মাজহারুল বিটিসি নিউজকে জানান, আমার মেয়ের বিয়ে ছিল ২৮ ডিসেম্বর। বরযাত্রী আসামাত্র হঠাৎ করেই এসে একদল হিজরা আমার বাসার গেটে এসে এগারো হাজার টাকা দাবী করে। আমি খুশি মনে তাদের দুই হাজার টাকা দিতে চায়। তারা না টাকা না নিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, ধাক্কাধাক্কি, সবার সামনে নগ্ন হতে চাওয়াসহ বিভিন্ন অশ্লীল আচরণ ও তুমুল হট্টগোল সৃষ্টি করে। আমি থানায় ফোন দিয়ে পুলিশ ডেকে আনলে তারা নগ্ন হয়ে নাচানাচি শুরু করে। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় ৫ হাজার টাকা রেহায় পায়।
বিয়ে এবং নবজাতকের জন্মকে কেন্দ্র হিজড়াদের উৎপাত বেড়ে গেছে। নাটোর শহরবাসী এদের কাছে অসহায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও এদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে শহরের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতে হিজড়া আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে হিজড়ারা। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, পতিতাবৃত্তি, মারামারিসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।
হিজড়া হওয়ার কারণে এমনিতেই এরা সাধারণ মানুষের সহানুভ‚তি পাচ্ছে। আর এ সুযোগে তারা আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদেরকেও পাত্তা দিচ্ছে না। ফলে এদের অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
নাটোরবাসী এই সমস্যার সুরাহার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোড় আবদার জানিয়েছে,তাদের দাবি হিজড়ারা নিয়মিত সারা শহরে সন্ত্রাসী কায়দায় চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে।
তবে হিজড়াদের দলনেতা সেতু হিজরা জোর করে টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করে তিনি জানান ,বিয়ে তো মানুষ প্রতিদিন দেয় না আমরা তো আর তাদের বাসায় প্রতিদিন যাই না। বিয়েতে যদি লক্ষ টাকা খরচ করতে পারে তাহলে আমাদের পেট চালানো তাগিদে অল্প কিছু টাকা পয়সা দিতে আপত্তি কোথায়। তাছাড়া আমরা জোর করে টাকা তুলিনা। আপসে যে যা দেয় তাই নেয়। টাকা না তুলে তারা নিরুপায়। তাদের আয়-রোজগারের কোনো সুযোগ নেই। বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছে।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান,হিজড়াদের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ এলেও মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তবে কেউ যদি ভয়ঙ্কর ধরনের অপরাধ করে তাহলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.