হবিগঞ্জে করোনা আতঙ্কে চা শ্রমিকরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় একটি চা বাগানের শ্রমিকের সন্তান আভাস তন্তবায় (৭) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় জেলার ২৩টি চা বাগানে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েপড়েছে। নিহতের চাচাত ভাইও করোনায় আক্রান্ত হয়ে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সব মিলিয়ে চা বাগানে করোনার হানার কারণে শ্রমিকদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিলেও ছুটি না থাকায় ঝুঁকি নিয়েও কাজ করছেন শ্রমিকরা।উপজেলার চা বাগান অধ্যুষ্যিত আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবেদ হাসনাত সনজু চৌধুরী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, নিহত আভাসের সাথে যারা স্বাক্ষাত করেছেন তাদের বের করে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, সন্দেহবাজনদের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছি, ফলালফল আসলে বুঝা যাবে। তবে সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সত্যজিত রায় দাশ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের বাসা লকডাউন করা হয়েছে। পরে প্রয়োজন হলে পুরো বাগান লকডাউন করা হবে।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সারা দেশে যখন চলছে অঘোষিত লকডাউন, বন্ধ সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঠিক তখন চা-বাগানগুলোতে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই বাগানে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। সিলেট বিভাগে ১৩৪টি বাগান রয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বাগানের কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানানো হলেও তা সফল হয়নি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান চৌধুরী শামসুন্নাহার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, করোনায় নিহত শিশুটি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল। চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে ২০ দিন ঢাকায় ছিলেন।

গত ২০ এপ্রিল তারা ঢাকা থেকে বাগানে নিয়ে আসেন। ঢাকা থেকে আসার কারণে ওই শিশুসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠানো হলে ওই শিশু ও তার এক আত্মীয়ের করোনা পজিটিভ আসে। এরপরই চা বাগানের ১২টি বাড়ি লকডাউন করা হয়।

তার মতে, করোনা পজিটিভ ধরা পড়লেও শিশুটি মূলত ক্যান্সারের কারণেই মারা যেতে পারে।

চা-শ্রমিক নেতা স্বপন সাওতাল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের ১৬৬টি চা-বাগানের প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার চা ও রাবার শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অবিলম্বে মজুরি-রেশনসহ সব শ্রমিকদের ছুটি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে ইতোমধ্যে দেশের অনেক জেলায় লকডাউন চলছে। এরকম পরিস্থিতিতে চা-বাগানে শ্রমিকদের কাজ করতে হচ্ছে প্রতিদিন । এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আছেন প্রায় ১০ লাখ চা-বাগান সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী।

চা-শ্রমিকদের ঝুঁকির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘এখন কাউকেই ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। চা-বাগানে শ্রমিকরা খুব গাদাগাদি অবস্থায় থাকেন। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা উপকরণের অভাবও রয়েছে। ফলে তারা ঝুঁকির মধ্যেই আছেন। এ অবস্থায় তাদের ঘরে থাকাই ভালো। বিষয়টি আমি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকেও জানিয়েছি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.