স্বাধীনতাকালীন ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি’র সদস্যদের নয়া আতংক

 

খুলনা ব্যুরো: শত বছর বয়সী মো: আ: আজিজ সদরদার। দু’পুত্র আর ছয়টি কন্যা সন্তানের জনক। দেশ স্বাধীনের আগে পাকিস্তান আর্মিতে কর্মরত থাকাবস্থায় তার বাড়িটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি হিসেবে পরিচিত। কারণ তার বাড়িতেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিতেন। এজন্য তার বাড়িটি যুদ্ধের সময় পাক সেনারা পুড়িয়ে দেয়। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি পাড়ি জমান গ্রামের বাড়ি বরিশালে। দেশ স্বাধীনের পর তিনি খুলনায় এসে আবারো স্থাপনা গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধুর দেয়া অর্থেই ঘর করে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ মাষ্টার। সেখানে এখনও তিনি বাস করছেন দু’পুত্র আর প্রতিবন্ধী একটি মেয়ে নিয়ে। রয়েছে দু’টি প্রতিবন্ধী নাতিও। যাদের দেখাশোনার ভার বহন করতে হচ্ছে দু’ছেলেকে।

এমন এক অবস্থায় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-কেডিএ’র শিপইয়ার্ড রোড প্রকল্পের কারনে ওই বাড়ির সব ঘর ভেঙ্গে দেয়া হবে এমন খবরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম। বড় ছেলে মো: ফরিদ সরদারের গ্যাংরিন হয়ে একটি পা অচল হয়ে গেছে। তাদের জমিতে ১০টি দোকান ভাড়া এবং ফার্নিচারের ব্যবসা করে কোন রকমে সংসার চালান ফরিদ সরদার। এখন সব ঘরই ভেঙ্গে ফেলার খবরে পরিবারের সকলের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে একটি চরম অমানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে যাচ্ছে ওই পরিবারে।
সম্প্রতি সরোজমিনে পরিদর্শনকালে কথা হয় আ: আজিজ সরদারের সাথে।

তিনি বলেন, সারাটা জীবন কষ্টে কেটেছে। জীবনের শেষ বয়সে এসে আবারও এমনটি হতে হবে বুঝতে পারিনি। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তাকে যেন পথে বসতে না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

তার বড় ছেলে মো: ফরিদ সরদার বলেন, তার একটি প্রতিবন্ধী বোন তাদের কাছেই থাকে। দু’টি ভাগ্নেও প্রতিবন্ধী। তিনি নিজেও ক্রাচে ভর করে হাটেন। কোন রকমে দোকানে বসে ফার্নিচারের ব্যবসা করে সংসার চালান। এমন অবস্থায় শিপইয়ার্ড সড়কের কাজের জন্য তার জমি থেকে কিছু অংশ অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্তে তারা আতংকে রয়েছেন। বিশেষ করে যে ঠিকাদার স্থাপনা ভাংগার জন্য নির্ধারিত হয়েছেন তিনিও সম্প্রতি এসে সব ঘর ভাঙ্গার জন্য তাদেরকে মালামাল সরিয়ে নিতে বলেছেন। অথচ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পুরো জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। যেটুকু জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেটুকুর স্থাপনাই ভাঙ্গার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সব স্থাপনা ভেঙ্গে দিলে তাদের যাওয়ার আর কোন জায়গা থাকবে না। খোলা আকাশের নিচেই তাদেরকে বসবাস করতে হবে। তাছাড়া জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হলেও এখনও তারা কোন ক্ষতিপূরণ পাননি। এজন্য উচ্চ আদালতে রীট পিটিশনও করেছেন। যে সম্পর্কে রোববার শুনানী হতে পারে বলেও তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে কেডিএ’র শিপইয়ার্ড রোডের প্রকল্প পরিচালক মো: আরমান হোসেন বলেন, স্থাপনা ভাঙ্গার জন্য এখনও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কার্যাদেশই দেয়া হয়নি। তাছাড়া বিষয়টি মানবিক হলে অবশ্যই দেখা হবে।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কবির হোসেন বলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার পর পরই তাকে স্থাপনা ভাঙ্গার কাজ শুরু করতে হবে। যেটি সংশ্লিষ্টদের ইতোমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে তিনি নিজেও যেহেতু স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সেহেতু কারও যাতে বড় ধরনের ক্ষতি না হয় সেটি অবশ্যই দেখা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.