স্থানীয় সিন্ডিকেটের অবৈধ কর্মকান্ড: পাগলা নদীতে অবৈধ রাস্তা নির্মাণ, বহালাবাড়ী ঘাটে ইজারা ছাড়াই অর্থ উত্তোলন, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

বিশেষ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের বহলাবাড়ী এলাকায় পাগলা নদীর উপর অবৈধভাবে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরী করে এবং ইজারা ছাড়াই যানবাহন পারাপার ও মানুষ পারাপারে অর্থ আদায় করা অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই এলাকার ফসলী জমি নস্ট করে জোরপূর্বক জমি কেটে নিয়ে ভাটায় বিক্রি করে মোটা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট বলেও অভিযোগ ভূক্তভোগী ও স্থানীয়দের।
ওই সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় পাগলা নদী তীরবর্তী এলাকা ও বহালাবাড়ী ভাটা এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের নিরাপদ অভয়ারন্য বলেও অভিযোগ স্থানীয় সচেতন মহলের। এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী ভূক্তভোগী ও স্থানীয়দের। ট্রাক্টর চলাচলে ভাংছে রাস্তাম ধুলা-বালিতে নস্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশে কর্মরত (বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত) এ.এস.আই খায়রুল ইসলাম।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের বহলাবাড়ী সংলগ্ন জাহাঙ্গীর পাড়া ঘাট। প্রতি বছরের ন্যায় চলতি বছরেও শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ১ম ও ২য় ধাপে ইজারা প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই দরপত্র আহŸান করা হয়। সিডিউল হোল্ডাররা সিডিউল ক্রয় করেও রহস্য জনক কারণে সিডিউল ড্রপ করতে পারেন নাই। যার ফলে ১৪ মে ২০২২ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর পাড়া ঘাট টি ইজারা হয়নি।
ইজারা না হলেও অবৈধভাবে ঘাট পারাপারের জন্য জনগণের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন বহলাবাড়ী গ্রামের বাহার আলীর ছেলে পুলিশে কর্মরত এ এস আই খায়রুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট। উক্ত সিন্ডিকেটে স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালি ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এছাড়া, বহলাবাড়ী সংলগ্ন জাহাঙ্গীর পাড়া ঘাটে পাগলা নদীর স্বাভাবিক গতি রোধ করে নদীর উপর দিয়েই অবৈধভাবে রাস্তা নির্মাণ করে আরেক অবৈধ যানবাহন ট্রাক্টরে উত্তোলনকৃত মাটি পাশ্ববর্তী বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রয় করছে খাইরুল সিন্ডিকেটের লোকজন। শুধমাত্র পাগলা নদী তীরবর্তী মাঠের ফসলি জমি কেটে নিয়ে ভাটায় বিক্রি ও ঘাটে মোটা অংকের ইজারা আদায়ের জন্যই নদীর উপর নির্মিত রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছে বলেও সরজমিনে জানা যায়।
উক্ত সিন্ডিকেটের পিছনে রয়েছে ছত্রাজপুর ইউনিয়নের ৬নং ওর্য়াডের ছোট চকপাড়া গ্রামের মৃত হুসেন আলীর ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন, একই গ্রামের মৃত এরশাদ আলীর ছেলে কাশেম, একই গ্রামের হুমায়ন হাজির ছেলে সেরাজুল, দশভাইয়াপাড়া গ্রামের সেরাজুল ইসলামের ছেলে তারিফ মাস্টারসহ নাম না জানা অনেক প্রভাবশালী। আরও জানা গেছে, পদ্মা নদীর বেড়ি বাঁধ সংলগ্ন পদ্মা নদীর কৃষি জমির মাটি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিদিন ৫/৬ টি এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ ট্রাক্টর প্রতিনিয়তই মাটি উত্তোলন করছে সিন্ডিকেটের লোকজন। জাহাঙ্গীরপাড়া ঘাটে ট্রাক্টর প্রতি খাজনা উত্তোলন করা হচ্ছে ২০০ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কয়েকবছর থেকেই কৃষি জমির মাটি আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ফিট গর্ত করে এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে কেটে নেয়া হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই। ক্ষতি হলেও এই সিন্ডিকেটের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও পারে না। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ট্রাক্টরে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে। আর ট্রাক্টরে করে মাটি পরিবহনের জন্যই পাগলা নদীর স্বাভাবিক গতি রোধ করে নদীর উপরই রাস্তা তৈরি করেছে তারা। এসব ফসলি জমির মাটি চলে যাচ্ছে পাশ্ববর্তী ইটভাটা গুলোতে। মাটি পরিবহনকারী ট্রাক্টরের ভারে ভেঙে যাচ্ছে গ্রামীণ সড়কগুলো। ধুলো-বালির কারণে এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যার কারণে পদ্মা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সড়ক ভাঙ্গন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এদিকে, প্রতি বছর পদ্মা নদী ভাঙনে বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণে কাজ করছেন। কিন্তু দিনের পর দিন এভাবে কৃষি জমির মাটি খনন করার কারণে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে বন্যার সময় নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। মাটি উত্তোলনের ফলে বাঁধ এলাকা প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিন্ডিকেটের কয়েকজন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ঘাটে টোল বাবদ ট্রাক্টর প্রতি আদায় করা হচ্ছে ২০০ টাকা। সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ঘাট পারাপারের জন্য টাকা আদায় করা হচ্ছে। তারা আরও বলেন, ঘাট থেকে শুরু করে মাটি কাটা পর্যন্ত সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন খায়রুল পুলিশ। বেশ কয়েক বছর থেকেই খাইরুল পুলিশ এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছে। প্রতি ট্রাক্টর মাটি বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৭০০ টাকার মধ্যে। তাছাড়াও দূরত্ব অনুযায়ী ট্রাক্টর প্রতি মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে খায়রুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়গুলো অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় কেউ জড়িত আছে কিনা আমার জানা নেই। আমি ঢাকায় থাকি। এসবের সাথে আমার কোনই সম্পৃক্ততা নেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেশুর রহমান এবিষয়ে বিটিসি নিউজকে বলেন, বহালাবাড়ী ঘাটে পাগলা নদীতে অবৈধভাবে রাস্তা তৈরী ট্রাক্টরসহ অন্যান্য যানবাহন পারাপার এবং ইজারা ছাড়াই অর্থ আদায় বিষয়টি আমাদের জানা নেই। জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এব্যাপারে সদ্য যোগদানকৃত শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিটিসি নিউজকে জানান, অবৈধ কোন কাজ হলে অবশ্যই বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভূমিদস্যু এই সিন্ডিকেটের ব্যাপারে অবিলম্বে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসীসহ সুশীল সমাজ। অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন বন্ধ না করলে ভবিষ্যৎ কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাবে। যার ফলে ফসল উৎপাদন হবে কম। পাগলা নদী ও কৃষি জমি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন সরকার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন, এমনটাই আশা করেন জেলার সচেতন মহল।
# কৃষি জমি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
# নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় শক্তিশালী একাধিক সিন্ডিকেট।
# ভাঙন ঝুঁকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও শহর রক্ষা বাঁধ।
# বেহাল দশা গ্রামীণ সড়কের।
# সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসার নিরাপদ অভয়ারণ্য। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.