সৈয়দপুর সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষক নিয়োগে চরম অনিয়ম ও দূর্নীতি

নীলফামারী প্রতিনিধি:  নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির তথ্য ক্রমান্বয়ে বেড়িয়ে আসছে। শিক্ষক নিয়োগে চরম অনিয়ম ও দূর্নীতির মহোৎসব করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অর্থের বিনিময়ে ইচ্ছেমত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তাদের বৈধ করার জন্য পরবর্তীতে গোপনে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এমপিও ভুক্তি করা হয়েছে। এমন নানা অনিয়মের ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় শহর জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফ এর প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা সনদ ১২ বছর না থাকায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে বেতন ভাতাদি প্রাপ্য। কিন্তু তিনি সহকারী শিক্ষকের বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা নিলেও নিজেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেন। যার প্রমান পাওয়া যায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হাজিরা খাতায়। সেখানে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্বাক্ষর করলেও বেতন শিটে তার অবস্থান সহকারী শিক্ষক হিসেবে।

তাছাড়া তিনি সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন ৩/১/১৯৯৪ ইং। অথচ তাকে যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এমপিও ভুক্তির জন্য সিলেক্ট করা হয় তা প্রকাশ পেয়েছে ২০/৭/১৯৯৭ ইং তারিখে এবং এমপিও ভুক্ত হন ১/৪/২০০১ ইং তারিখে। একইভাবে সহকারী শিক্ষক ও তার স্ত্রী নাজমা সুলতানা (নাগমা) যোগদান ৬/২/১৯৯১ ইং, সহকারী শিক্ষক এহসানুল কবীর এর যোগদান ৫/২/১৯৯১ ইং, ধর্মীয় শিক্ষক মোঃ জহুরুল ইসলাম মীর এর যোগদান ৬/২/১৯৯১ ইং তারিখ। এসকল শিক্ষকের নিয়োগ বৈধ করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০/৭/১৯৯৭ ইং তারিখে এবং তাদের এমপিও ভুক্তিও হয় একই দিন ১/৪/২০০১ ইং তারিখে।

এমন অনিয়মের মাধ্যমে কলেজের অধ্যক্ষ পদেও সহকারী সিনিয়র প্রভাষক মোঃ মোখলেছুর রহমান জুয়েলকে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা সনদ ছাড়াই অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন তৎকালীন সভাপতি আমিনুল হক। অধ্যক্ষ হিসেবে পরিচিত হলেও তিনিও সহকারী সিনিয়র প্রভাষকের বেতন স্কেলে বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। এসব দূর্নীতির কারণে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৯/৪/২০০৯ ইং সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত দল নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। সে প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও উল্লেখিত সহকারী শিক্ষকগনের ২৪/১০/১৯৯৫ এর পরে নিয়োগ বৈধকরণ গ্রহণযোগ্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়। সে অনুযায়ী উক্ত শিক্ষকদের নিয়োগ অবৈধ হলেও সভাপতি নিজে আর্থিকভাবে সুবিধা নিয়ে সম্পূর্ণ অনিয়ম করে তাদের প্রতিষ্ঠানে স্বপদে বহাল রাখেন এবং প্রতারণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় ও তসরুপ করেন। সে সময় এনিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও প্রতিষ্ঠানটি লায়ন্স ক্লাব অব সৈয়দপুর তথা সানফ্লাওয়ার ক্লাবের উদ্যোগে পরিচালিত হওয়ার সুবাদে দূর্নীতি অব্যাহত রেখেছে।

অনেকের অভিযোগ সৈয়দপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহেনা ইয়াসমিন এর মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই এমনটা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে তোলপাড় হলেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় শহরের সচেতন ও শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের প্রশ্ন প্রকাশ্য অনিয়ম ও দূর্নীতি করে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও শিক্ষকরা ধরাছোয়ার বাইরে এখনও কিভাবে রয়েছে। সরকার যেখানে শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দূর্নীতি করে সরকারী অর্থ তসরুপ করেও তারা আইনের আওতায় আসছেন না। আসলে তাদের খুটির জোর কোথায়? এলাকাবাসী অনতিবিলম্বে এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে সাবেক সভাপতি আমিনুল হক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। এ কারণে তার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেহেনা ইয়াসমিন বিটিসি নিউজকে জানান, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তবে তিনি প্রতিষ্ঠানটির এমন অনিয়মের ব্যাপারে জেনেও অজ্ঞাত কারণে নিরবতা পালন করছেন বলে যে অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটি দেখবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নীলফামারী প্রতিনিধি এম কে আনোয়ার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.