সুশাসন নিশ্চিত করলে ভোটের জন্য যেতে হবে না : এলজিআরডি মন্ত্রী

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে ভোটের জন্য ভোটারদের কাছে যেতে হবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের বাস্তবায়িত ‘কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার (ইএএলজি)’ প্রকল্প ও ইউএনডিপি আয়োজিত ‘স্টেকহোল্ডার কনফারেন্স অন লোকাল গভর্ন্যান্স: প্রগ্রেস, লার্নিং এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচী’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৯৫ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিলো ৩২৫ ডলার। সে সময় সিরিয়াস ক্রাইসিস ছিলো। ১৯৯৬ সালে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসেন। তখন থেকেই আমাদের পরিবর্তন আসে। আমাদের খাদ্য ঘাটতি পূরণ হয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব খাতে ভালো কাজ হয়েছে। আমাদের বলা হতো ভিক্ষুকের জাতি, সেটি থেকে আমরা উন্নত জাতি হচ্ছি। সংবিধানে বলা আছে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করবে। পৃথিবীতে পানি, গাছ আর মাটি ছাড়া কিছু ছিলো না, সবই মানুষ সৃষ্টি করেছে। আমরা যেসব প্রযুক্তি ভোগ করি সেগুলো মানুষ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
‘আমরা সবাই মিলে কাজ করে বাংলাদেশকে একটি পরিবর্তনের জায়গায় নিয়ে আসব। সম্পদ নিজেদেরই সৃষ্টি করতে হবে। আমরা জনপ্রতিনিধিরা মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। সেজন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কোন একজন মানুষ দরিদ্র থাকলে সেটা সরকারের জন্য ব্যর্থতা। কারণ জনপ্রতিনিধিরাও সরকারের অংশ। এখন আমাদের কোথায় ব্যর্থতা আছে সেটি দেখতে হবে। আপনাদের ইনকাম জেনারেট করতে হবে। স্থানীয় সরকার কাজ করবে, নিজেরা ইনকাম জেনারেশন করে যে ধরনের চাহিদা আছে পূরণ করে উন্নয়নমূলক কাজ করবে। সারাবিশ্বে সিটি করপোরেশন নিজেদের অর্থে চালাচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়েও ইনকাম জেনারেশন করতে হবে। তাহলে আপনারাও খরচ মিলাতে পারবেন।’
তিনি বলেন, যদি সরকারের উপর চাপ বাড়াই তাহলে তো সেটি ঠিক হবে না। ইউনিয়ন পরিষদকে ইনকাম জেনারেট করতে হবে। স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে আপনাদের (জনপ্রতিনিধি) সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাবে। তারা আপনাদের কার্যক্রমে সুবিধা পেলে একসময় ভোটের জন্য তাদের কাছে যেতে হবে না। দুঃশাসন কায়েম করে, অত্যাচার অবিচার থেকে মুক্তি দিতে না পারলে আপনাকে বার বার মানুষের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। আমি ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিবার ভোটে অংশ নিয়েছি, ভোটে পাস করলে আমাকে বিভিন্ন কথা শুনতে হয়েছে। আমি সঠিকভাবে কাজ করলে মানুষ ভোট দিবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, আমি ভোটের জন্য কাজ করব না, মানুষের জন্য কাজ করব। মানুষের জন্য কাজ করলে ভোট নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি যে এলাকা থেকে ভোট করি সেখানে সিরিয়াস অ্যান্টি আওয়ামী লীগ। কিন্তু এখন মানুষই আমার ভোটের জন্য টাকা খরচ করে। তাই বড় কাজ হলো সুশাসন নিশ্চিত করে নিজেদের ইনকাম জেনারেট করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের মর্যাদার জায়গায় যেতে হবে। যেতে না পারলে জোর করে টাইটেল লাগিয়ে শুধু পদবীর মর্যাদাই পাবেন। আমি যদি কাজ না করি তাহলে শুধু আউটলুক হবে। সম্মান আদায় করতে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মতো আনন্দের কিছু নেই।
এ সম্মেলনে ইউএনডিপির প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট মো. মোজাম্মেল হক কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার (ইএএলজি) প্রকল্প পরিচিতি এবং অগ্রগতি, শিখন ও করণীয় বিষয়ের উপর একটি উপস্থাপনা করেন।
উপস্থাপনায় তিনি উল্লেখ করেন, সুইজারল্যান্ড দূতাবাস, ডেনমার্ক দূতাবাস এবং ইউএনডিপির সহায়তায় স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) ‘কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার (ইএএলজি)’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি আটটি বিভাগের নয়টি জেলার, পিছিয়ে পড়া ১৮টি উপজেলা পরিষদ ও ২৫১টি ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা উন্নয়ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
তিনি প্রকল্পের মূল অর্জনগুলো তুলে ধরে বলেন, ইএএলজি প্রকল্পের কার্যক্রমের ফলে ৯৪ শতাংশ (১৭টি) প্রকল্পভুক্ত উপজেলাপরিষদ ইউজিডিপি প্রকল্প থেকে দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ পেয়েছে। প্রকল্পভুক্ত শতভাগ উপজেলা (১৮টি উপজেলা) বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা উপজেলা পরিষদের প্রতিবেদন প্রস্তুতিতে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির প্রমাণ করে। একইভাবে প্রকল্পভুক্ত শতভাগ উপজেলা (১৮ টি উপজেলা) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, যা উপজেলা পরিষদের পরিকল্পনা প্রণয়নের সক্ষমতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রমাণ করে।
তিনি আরও বলেন, ইএএলজি প্রকল্পের কার্যক্রমের ফলে প্রকল্পভুক্ত ১৩৬টি (৫৪ শতাংশ) ইউনিয়ন পরিষদ এলজিএসপি-৩ প্রকল্প হতে দক্ষতা ভিত্তিক বরাদ্দ পেয়েছে। এছাড়া ৪৩ শতাংশ (১০৯টি) প্রকল্পভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদ জলবায়ু ও এসডিজিবান্ধব পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। প্রকল্পের মধ্যবর্তীকালীন মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রকল্পভুক্ত উপজেলা ও ইউনিয়নের পরিসেবার প্রতি জনগণের সন্তুষ্টি যথাক্রমে ৭০ শতাংশ ও ৮০ দশমিক ৩ শতাংশ।
এ প্রকল্পের সহায়তায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ বিষয়ক দুটি সংশোধিত, পাঁচটি নতুন গাইডলাইন ও ছয়টি পরিপত্র জারি করা হয়। মোজাম্মেল হক তার বক্তব্যে উপজেলা পরিষদ আর্থিক ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ারের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়-দায়িত্বের পরিসীমা পর্যালোচনার আগে সংশোধনের সুপারিশ, স্থানীয় সরকার দিবস নির্ধারণ ও উদযাপন, বর্তমান কর তফসিল, কর বিধি পর্যালোচনাপূর্বক সংশোধনের সুপারিশ, স্থানীয় সরকার কার্যক্রমের পূর্ণ অনলাইন মনিটরিং সিস্টেম প্রণয়নের সুপারিশ করেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মেদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত নাটালী শুয়ার্ড, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া সম্মেলনে নয়টি জেলার ডিডিএলজি, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার বিভাগের অন্যান্য প্রকল্পের স্টেকহোল্ডার, ডিসট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর, মিডিয়া প্রতিনিধি এবং অন্যান্য অতিথিসহ ইএএলজি প্রকল্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.