সুপার সাইক্লোন ৪ এ পরিনত ঘুর্ণিঝড় মোখা, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ৮ নং মহাবিপদ সংকেত, পায়রা ও মোংলায় ৪

খুলনা ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় মোখা ক্যাটাগরি ৪ এ পরিণত হয়েছে। ঝড়ের গতি ১১৫ নটিকাল মাইল প্রতি ঘন্টায় অর্থাৎ ২১৩ কিমি প্রতি ঘন্টায়। IMD (India Meteorological Department)এর হিসাবমতে এটি এখনই সুপার সাইক্লোন। যেভাবে এটি শক্তি বাড়াচ্ছে, খুব দ্রুত এটি ক্যাটাগরি ৫ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরসমুহকে ৮ নং মহাবিপদ সংকেত এবং পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরসমুহকে ৪ নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
দক্ষিণ মধ্য বঙ্গপোসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত তীব্র ঘূর্ণিঝড় মোখা কিছুটা উত্তর উত্তর পূর্ব দিকি অগ্রসর হয়েছে। এবং শক্তি বাড়িয়ে ক্যাটাগরি টপ ৪ ক্ষমতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হয়েছে। IMD (India Meteorological Department)এর হিসাবমতে এটি এখনই সুপার সাইক্লোন। যেভাবে এটি শক্তি বাড়াচ্ছে, খুব দ্রুত এটি ক্যাটাগরি ৫ হয়ে যাবে।
এটি আজ শনিবার (১৩মে) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। কক্সবাজার থেকে ৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। এটি আরও জোরদার হয়ে উত্তর উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতেপারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৬ কিলোমিটার এর ভেতরে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘন্টায় ২১৫ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ২৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর ঐ স্থানে প্রচন্ড উত্তাল আছে। সিস্টেম টি কিছুটা কাছাকাছি চলে আসায় উত্তর বঙ্গপোসাগর ধিরে ধিরে উত্তাল হতে শুরু করেছে।
তবে আজ রাত থেকে উত্তর বঙ্গপোসাগর বেশ উত্তাল প্রক্রিয়া শুরু হতেপারে। ও দেশের উপকূলীয় কিছু এলাকায় বজ্রবৃষ্টি হতেপারে দিনে ও রাতে। মোখা প্রাথমিকভাবে উত্তর উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতেপারে, এবং পরবর্তীতে উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতেপারে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবেগ দ্রুত বাড়ছে এবং উপকূলের সঙ্গে এর দূরত্ব কমছে। ফলে আজ (১৩ মে) সন্ধ্যা থেকে এর অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে শুরু করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শনিবার (১৩ মে) সকালে দেওয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি-১৪-তে এ কথা বলা হয়। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক এই বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৫.৪° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.১°পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।
এটি আজ সকাল (১৩ মে) ৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ১৪ মে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ১৩ মে সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এর অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৭০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। এজন্য কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এছাড়া, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এজন্য উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা অতিক্রম করার ২ দিন পর দেশের অনেক এলাকার উপর শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় ঝুমুল আসতেপারে।
যাতে প্রচুর, কালবৈশাখী, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি থাকতেপারে। বেশি আক্রান্ত স্থান, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক এলাকা।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি বা তার বেশি) বর্ষণ হতে পারে এবং অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধ্বস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার উপকূল সবচেয়ে বেশি ঝুকিপূর্ণ। সাথে বরিশাল উপকূলীয় এলাকা গুলোও মোটামুটি ঝুকিপূর্ণ। সেইসঙ্গে রাখাইন উপকূল অনেক ঝুকিপূর্ণ।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম কালে কক্সবাজার ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘন্টায় ১৮০ থেকে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হাওয়া বয়ে যেতেপারে ও স্বাভাবিক জোয়ার থেকে ১৮ থেকে ২৫ ফুট উচু পর্যন্ত বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা আছে।
চট্টগ্রাম ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘন্টায় ১২০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাস হতেপারে ও ১২ থেকে ১৮ ফুট উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হতেপারে।
ফেণী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘন্টায় ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাস ও ৮ থেকে ১৫ ফুট উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হতেপারে। ভোলা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৭০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাস ও ৬ থেকে ৮ ফুট উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হতেপারে।
বরিশাল উপকূল ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘন্টায় ৫০ তেকে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাস ও ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হতেপারে।
খুলনা উপকূল ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘন্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বাতাস সহ ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হতেপারে স্থানভেদে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.