সরিষা ফুল থেকে ২শ কোটি টাকার মধু


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের চলনবিলের প্রায় সব জায়গায় সরিষার আবাদ হয়েছে। আর সরিষা ক্ষেতের চারপাশে সারিবদ্ধভাবে মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এসব বাক্সে পালিত মৌমাছি সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌবাক্সে জমা করছে। এই মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা। মৌচাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরিষা ফুলের ভালো পরাগায়ন হবে। এ কারণে সরিষা চাষেও চাষিরা উৎসাহিত হচ্ছেন।ফলে এবার জেলায় সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে সঙ্গে সঙ্গে মৌচাষিরাও বেশ লাভবান হবে এমনটাই ভাবছে এলাকার চাষিরা।
‘চলতি রবি মৌসুমে গুরুদাসপুরে ৩৫০ হেক্টর সরিষা জমির পাশে মৌয়ালরা ৬৮০টি মৌবাক্স বসিয়েছেন। সেখান থেকে ৬ হাজার ৩৭৫ মে.টন মধু সংগৃহীত হবে। প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। সে হিসাবে শুধু সরিষা ফুল থেকে ২শ কোটি টাকার উপরে মধু সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।”
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে মতে, চলতি মৌসুমে গুরুদাসপুরে ১ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৩৫ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে চলনবিল অংশে চাষ হয়েছে ৭৫০ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় চলতি বছর সরিষার ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে চলনবিলাঞ্চল। সরিষা ফুল কেন্দ্রীক মধু সংগ্রহে মৌয়ালরা ব্যস্ত সময় পার করছে।
সরেজমিনে গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিল কেন্দ্রিক রুহাই মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে বিস্তৃর্ন মাঠ। খেতের পাশে শত শত মৌবাক্স পেতেছেন মৌ চাষিরা। মৌমাছির দল এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে বাক্সে গিয়ে জমা করছে। নির্দিষ্ট সময়ে মৌয়ালরা বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করে তা বাজারজাত করছেন।
মৌয়ালরা জানান, মধু সংগ্রহের জন্য কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বক্স। রোদ কিংবা বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে বাক্সের ওপরের অংশ কালো রঙের পলিথিন ও পাটের তৈরী চট দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হয়। বাক্সে মৌমাছির অবাধ চলাচলের ছিদ্র পথ দিয়ে মাছিগুলো বাক্সের ভেতরে প্রবেশ করে। বাক্সে বিশেষ কৌশলে রানী মৌমাছিকে আটকে রাখা হলে শ্রমিক মাছিগুলো রানীকে অনুসরণ করে বক্সে সমবেত হয়। প্রতিটি মৌবক্সে সাত থেকে ১০টি কাঠের ফ্রেমের সঙ্গে মাছি মধু সঞ্চয় করে। পরে মৌবাক্স বের করে মেশিনের মাধ্যমে বিশেষ কৌশলে ঘুরিয়ে সংগৃহীত মধু বাজারে বিক্রির উপযোগী হয়ে থাকে।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের মোল্লা বাজারের মৌচাষি দিগন্ত মন্ডল (২০) জানান, শরিষা, লিচু, বড়ই, কালো জিরা, ধনিয়া ফুলকে কেন্দ্র করে বছরে ৬ মাস মধু সংগ্রহ করা হয়। তাঁর ১শটি মৌবাক্স থেকে সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৩২০ কেজি মধু উৎপাদন হচ্ছে তাদের। প্রতি কেজি মধুর বর্তমান বাজার দর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা হিসাবে তিনি দৈনিক ১৫ হাজার আয় করছেন। হিসাব মতে ছয় মাসে (১৮০ দিনে) ১শ বাক্স থেকে তিনি ২৭ লাখ টাকা আয় করছেন।
দিগন্ত মন্ডল আরো জানান, বছরের অবশিষ্ট ৬ মাস মৌমাছি গুলোকে চিনি মিশ্রিত তরল খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। সেক্ষত্রে চিনি, শ্রমিকের মুজুরী, মৌবাক্স খরচ মিলিয়ে বছরে ব্যয় ১২ লাখ টাকা। খরচ বাদে বছরে এখান থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। চলনবিলে উৎপাদিত মধুর স্থানীয় বাজার, দেশীয় কোম্পানী ও অনলাইন বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তাদের উৎপাদিত মধু রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করা হয়। পাইকারী পর্যায়ে এপি, ডাবর, প্রাণ কোম্পানী তাদের উৎপাদিত মধু সংগ্রহ করে।
নাটোর জেলা মৌচাষি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলিপ মন্ডল বিটিসি নিউজকে বলেন, তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে বিসিক থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে মৌচাষ শুরু করেছেন। লাভজনক পেশা হওয়ার কারনে তাকে অনুসরন করে তাঁর এলাকার ৪০টি মৌ খামার গড়ে উঠেছে। এতে অনেকেই বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বিটিসি নিউজকে বলেন, দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে বীজ, সার ও উপকরণ প্রণোদনা দিয়ে কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এতে সরিষা আবাদ মধু সংগ্রহ দুটোই বেড়েছে। জমির পাশে মৌবক্স স্থাপনের ফলে সরিষার ফলন ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়। মৌচাষে খরচ কম লাভ বেশি বলে তরুণরা ঝুঁকছেন এবং স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ ৬ হাজার ৩৭৫ মে.টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজারমুল্য প্রায় ২শ কোটি টাকার ওপরে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.