শয়তান যখন জেলখানায় বন্দী

মোঃ আমানুল্লাহ আমান:  শয়তান। মানুষের জীবনে ভয়ঙ্কর এবং প্রকাশ্য শত্রু। সর্বদা মানুষের ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করে থাকে। সৃষ্টির সেরা জীব ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট করাই তার প্রধান লক্ষ্য।

পৃথিবীর ইতিহাসে বড় বড় যুদ্ধ-বিগ্রহ,দাঙ্গা-হাঙ্গামার সূত্রপাত এই শয়তানের কারণেই । মানবজাতি শান্তি চায়, বিশ্ববাসী নিরাপদে থাকতে চায়। তবে এটার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সেই শয়তান।

আশার বাণী, এত অন্যায়ের গডফাদার মিস্টার শয়তান সারাবছর ইচ্ছেমত পৃথিবীতে বিচরণ করে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টির মহড়া দেখালেও বছরের ১ মাস তাকে জেলখানায় বন্দী থাকতে হয়।

আসছে সেই সোনার মাস। যেটি শুধু মুসলমান জাতি নয় সারাবিশ্বের মানুষের জন্য সৌভাগ্যের। পবিত্র মাহে রমজান। যেই মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে (সূরা বাকার- আয়াত ১৮৫)।

এই মাসে আছে হাজার বছরের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত (সূরা কদর-আয়াত ২ )।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, পৃথিবীতে মানুষ তার পরিবারের জীবিকা অর্জনের জন্য সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে। যুবক যুবতীরা চাকরি খুঁজে। প্রত্যেকে ইনকামের জন্য রাতদিন হন্য হয়ে খোঁজাখুঁজি করে।

বিস্ময়কর হলেও সত্য, মানুষ যেমন আহার অন্বেষণ করে ; স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দাকে মাফ করবেন এজন্য খুঁজতে থাকেন!

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘প্রতি রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, আমিই রাজাধিরাজ,আমিই রাজাধিরাজ। আমাকে ডাকার কেউ আছ কি? আমি তার ডাকে সাড়া দিব।

আমার কাছে চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে প্রদান করব। আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত তিঁনি এভাবে ডাকতে থাকেন’ (সুবাহানাল্লাহ)।(সহিহ মুসলিম ১/৫২২)।

এই মহামহিমান্বিত মাস আমাদের সামনে কড়া নাড়ছে। যেই মাসে আরও বড় সুসংবাদ হলো,শয়তান জেলখানায় বন্দী থাকে। ইচ্ছেমত ইবাদত করার বিশাল অফার। জীবনকে বদলে নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ।

শয়তান তো বন্দী এমনকি নিকৃষ্ট জায়গা জাহান্নামের দরজাও বন্ধ করে দেয়া হয়। খুলে দেয়া হয় জান্নাতের সমস্ত দরজা। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, রমজান মাসের আগমন হলে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়,জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল দিয়ে (জেলখানায়) বন্দী করা হয়। (সহিহ বুখারী-২/৬৭২, ৩/১১৯৪,,সহিহ মুসলিম-২/৭৫৮)।

ফুটবলের মাঠে প্রতিপক্ষ না থাকলে যেমন ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে অতি সহজেই জয়ী হওয়া যায়,যুদ্ধের মাঠে শত্রুপক্ষ না থাকলে বিনাযুদ্ধে বিজয়ী হওয়া যায়।

তেমনি আমাদের চিরশত্রু শয়তান জেলখানায় শিকলবন্দী,জাহান্নামের দরজা বন্ধ এমতাবস্থায় সহজেই আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাত লাভ করা সম্ভব। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য সেই সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন।

এখন মনোযোগের সাথে ইবাদত করে জান্নাত লুফে নেয়ার  পালা। যারা লুফে নিবে তারাই সৌভাগ্যবান হবে। এবং সেটিই সবচেয়ে বড় সফলতা(সূরা বুরুজ-আয়াত ১১)।

তাই আসুন! আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে পাপাচার থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইবাদতে আত্মনিয়োগ করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনকে বদলে তার দেয়া বিধানমতো গড়ার তাওফিক দান করুণ। আমীন!

লেখক : কলামিস্ট,সাংবাদিক ও ধর্মীয় আলোচক।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি আমানুল্লাহ আমান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.