শিল্পী সমিতির ভোটযুদ্ধে সভাপতি পদে মুখোমুখি লড়াইয়ে নায়ক বনাম ভিলেন 

বিশেষ প্রতিনিধি: ভিলেনের সঙ্গে নায়কের লড়াই। সিনেমার পর্দায় যা অহরহই দেখা মেলে। এবার সেই নায়ক ও ভিলেনের লড়াই দেখা যাবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে। সেখানে একটি প্যানেল থেকে সভাপতি পদে লড়ছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, অন্য আরেকটি প্যানেল থেকে একই পদে দাঁড়িয়েছেন খল অভিনেতা মিশা সওদাগর।
আর কয়েক ঘণ্টা বাদেই শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হবে শিল্পী সমিতির ১৭তম নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ। ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা হবে রাতে। সেখানে নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন জেতেন না ভিলেন মিশা সওদাগর- তা ভোটের পরই জানা যাবে। তার আগে জেনে নেওয়া যাক, কার কেমন জনপ্রিয়তা এবং জয়ের সম্ভাবণা।
ইলিয়াস কাঞ্চনের চলচ্চিত্রে অভিষেক সত্তরের দশকে। ১৯৭৭ সালে তিনি ‘বসুন্ধরা’ নামে একটি সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন। নায়ক হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা পান আশি ও নব্বইয়ের দশকে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এই নায়ক উপহার দিয়েছেন বহু হিট সিনেমা। রুপালি পর্দার মতো বাস্তবেও তিনি নায়ক। বহু বছর ধরে কাজ করছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন নিয়ে।
এদিকে, আশির দশকে ইলিয়াস কাঞ্চন যখন ঢালিউডের সেরা নায়কদের একজন, তখন চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে মিশা সওদাগরের। ১৯৮৬ সালে এফডিসিতে আয়োজিত ‘নতুন মুখ’ প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯০ সালে তার অভিনয়ে যাত্রা শুরু হয় নায়ক হিসেবে। ওই বছর ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘চেতনা’ ও ‘অমরসঙ্গী’ নামে দুটি সিনেমায় মিশাকে নায়কের ভূমিকায় দেখা যায়।
কিন্তু দুটি সিনেমাই মুখ থুবড়ে পড়ে। নায়ক মিশাকে ভালোভাবে নেননি সে সময়কার দর্শক। এরপর বিভিন্ন পরিচালক তাকে খল চরিত্রে অভিনয়ের পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ভিলেন হিসেবেই ঢালিউডে প্রতিষ্ঠা পান মিশা। শুরুর দিকে মূল ভিলেনের ছেলে বা ছোট ভাইয়ের চরিত্রে তাকে দেখা গেলে গত এক দশক ধরে তিনি মূল ভিলেন হিসেবে প্রতাপের সঙ্গে অভিনয় করছেন।
এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সেই পর্দার ভিলেনের সঙ্গেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নেমেছেন একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। কিন্তু পর্দায় নায়ক হিসেবে কাঞ্চনের জনপ্রিয়তা এখনো বেশি থাকলেও ভোটের মাঠে কিন্তু ভিলেন মিশাই বেশি অভিজ্ঞ। গত কয়েক মেয়াদের নির্বাচনের ফলাফল অন্তত সেটাই বলছে।
নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এর আগে ১৯৮৯ সালে একবার শিল্পী সমিতির নির্বাচন করেছিলেন। সে বার তিনি আরেক খল অভিনেতা আহমেদ শরীফের প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দীর্ঘ ৩২ বছর আবারও শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ‘বেদের মেয়ে জোছনা’র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। এবার তিনি সভাপতি পদপ্রার্থী।
ওদিকে, পর্দায় ভিলেন হলেও মিশা সওদাগর নির্বাচনের মাঠে পাকা খেলোয়ার। ২০১১-১৫ মেয়াদের নির্বাচনে শাকিব খানের প্যানেল থেকে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে বার শাকিব হয়েছিলেন সভাপতি। মাঝে ২০১৫-১৭ মেয়াদের নির্বাচনে মিশার সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করেন চিত্রনায়ক অমিত হাসান।
তবে ২০১৭-২০১৯ মেয়াদের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবারও শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসেন ভিলেন মিশা সওদাগর। তাও সভাপতি পদে। সে বার তার প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক হন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। এরপর ২০১৯-২০২১ মেয়াদের নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি পদে মিশা এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান জয়ী হন।
কাজেই পরিসংখ্যান বলছে, সিনেমার পর্দায় ভিলেন মিশা নায়কদের সঙ্গে লড়াইয়ে পরাজিত হলেও বাস্তবের লড়াইয়ে তিনি বার বারই জয় পেয়েছেন। তবে এবারের চিত্রটা একটু ভিন্ন বলে মত চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের। কারণ, টানা দুই মেয়াদে শিল্পী সমিতির ক্ষমতায় থাকা মিশা-জায়েদদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। চলচ্চিত্রের কয়েকটি সংগঠনও তাদের বিরোধী।
এছাড়া গত দুই মেয়াদে তাদের সঙ্গে নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য ছিল না তেমন কোনো শক্তিশালী প্যানেল। এর মধ্যে গতবার তো বলতে গেলে ফাঁকা মাঠে গোল করে জয়ী হয় মিশা-জায়েদ প্যানেল। কারণ, ২০১৯-২০২১ মেয়াদের নির্বাচনে তাদের প্রতিপক্ষ ছিলেন শুধু চিত্রনায়িকা মৌসুমী। তাও স্বতন্ত্র থেকে সভাপতি পদে লড়েছিলেন তিনি। কোনো প্যানেল থেকে নয়।
কিন্তু এবার নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে দলে ভিড়িয়ে চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার যে প্যানেলটি গড়েছেন, সেটি যথেষ্ট শক্তিশালী। সেই প্যানেলে আছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, অমিত হাসান, শাকিল খান, নিরব হোসেন, মামনুন ইমন, সাইমন সাদিক, চিত্রনায়িকা পরীমনি, জেসমিন, কেয়া এবং আফজাল শরীফ ও গাঙ্গুয়ার মতো অভিনেতারা।
এছাড়া এবারের নির্বাচনে ইলিয়াস কাঞ্চনদের সমর্থন করছেন চলচ্চিত্রের বেশ কয়েকজন পরিচালক- প্রযোজক এবং জ্যেষ্ঠ অভিনেতা। যারা প্রকাশ্যে কাঞ্চনদের পক্ষে কাজও করছেন। এছাড়া দেড় বছরের আড়াল ভেঙে প্রকাশ্যে এসে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপিও এই প্যানেলের সমর্থনে আওয়াজ তুলেছেন। ভোট চেয়েছেন।
তবে দল ভারী ভিলেন মিশা সওদাগরদেরও। তাদের সঙ্গে আছেন ডিপজল, রুবেল, সুব্রত, আসিফ ইকবাল, বাপ্পারাজ, আলীরাজ, মৌসুমী, নূতন, অঞ্জনা, রোজিনা, সূচরিতার মতো তারকারা। এছাড়া আছে টানা দুইবার জয়ের অভিজ্ঞতা। যদিও নির্বাচন উপলক্ষে গত কয়েকদিন ধরে এফডিসিতে আসা শিল্পীদের বেশির ভাগেরই চাওয়া, নতুন কেউ বসুক শিল্পী সমিতির চেয়ারে।
তবে শেষ পর্যন্ত কে হারবে আর কে জিতবে- তার সবটাই নির্ভর করছে ভোটার শিল্পীদের ওপর। এবার ৪২৮ জন শিল্পী ভোট দিতে পারবেন। জয়-পরাজয় তারাই নির্ধারণ করবেন। কাজেই, ভিলেন মিশা ও নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বাস্তবের লড়াইয়ে কে জেতেন, তা জানতে আর কয়েক ঘণ্টা ধৈর্য ধরতেই হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.