শিক্ষানগরী রাজশাহীর গ্রন্থাগারগুলোর বেহালদশা, পাঠক শূন্যতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে উঠতি বয়সী ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে মধ্য বয়সী সবাই যেটুকু অবসর পায় তা মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চলে যায়। ফলে বই পড়া লোকের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। সেই আশি ও নব্বইয়ের দশকে যেমন পাঠক লাইব্রেরী গুলোতে দেখা যেত তা আর নেই। রাতারাতি সব অর্জন করা গেলেও জ্ঞান অর্জন সম্ভব না। জ্ঞান অর্জন করতে হলে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজের দক্ষিণ দিকে রয়েছে বিভাগীয় গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারটি এক সময় লোকে ভরপুর থাকলেও বর্তমানে পাঠক খুঁজতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র লাগবে। যারা আসে তারা মূলত: চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখতে। বিশাল আকার এই গ্রন্থাগারটিতে অনেক সমস্যা থাকলেও সব সমস্যাকে পেছনে ফেলে পাঠক সংখ্যা বড় সমস্যা।
তারপর লেগেই আছে কোন না কোন সমস্যা। যেমন অর্থের অভাবে ধুঁকছে রাজশাহী নগরীর অনান্য গ্রন্থাগারগুলো। বেসরকারিভাবে পরিচালিত সকল গ্রন্থাগার নানা সঙ্কটে। কোন না কোন সমস্যা লেগেই আছে তাদের। কারও অর্থের অভাব, কারও জায়গার অভাব, কারও বই রাখার শেলফ ও জায়গার অভাব, অধিকাংশ গ্রন্থাগারে রয়েছে জনবল সঙ্কট ইত্যাদি ইত্যাদি।
এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগার হচ্ছে মিয়াপাড়াস্থ রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার। নতুন ভবন নির্মাণের কারণে গ্রন্থাগারটি এখন অস্থায়ীভাবে পরিচালিত হচ্ছে অলকারমোড়স্থ রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন ভবনের দোতলায়। এই গ্রন্থাগারটির দেশজুড়ে সুনামও রয়েছে।
এ সম্পর্কে গবেষক ও সাহিত্যিক তসিকুল ইসলাম রাজা বলেন, দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগারের অন্যতম এটি। এ ধরনের গ্রন্থাগার দেশে দ্বিতীয়টি নেই। এ প্রতিষ্ঠানটি দেশে এবং দেশের বাইরের শিক্ষানুরাগী, ইতিহাসবিদ গবেষকদের জন্য সুপরিচিত। বিজ্ঞান, উপমহাদেশের রাজনীতি ও ইতিহাসপ্রসিদ্ধ বহু বই রয়েছে এ গ্রন্থাগারে। বিদেশী শিক্ষার্থীরাও এখানে এসে বই ও পত্র-পত্রিকা পড়ে থাকেন।তবে বর্তমানে পাঠক সংখ্যা কম কমছে তা বলাই বাহুল্য।
রাজশাহী বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারটি সরকারি নিয়ম মেনে চললেও করোনার কারণে গত মার্চ মাস থেকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পাঠক সেবা বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রচুর পাঠক আসতেন। কিন্তু করোনার কারণে বন্ধ থাকায় পাঠক সংখ্যা এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়।
গ্রন্থাগারটির সহকারী পরিচালক মাসুদ রানা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এটা যেহেতু একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই সরকারের নিয়মের বাইরে যেতে পারি না। তাই কারোনার কারণে তা বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, খোলা থাকলে এখানে প্রচুর পাঠক আসেন। এখানে ধর্ম, বিজ্ঞান, ইতিহাস, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য ও নৃ-তাত্ত্বিকসহ সব ধরনের বই আছে। বইয়ের সখ্যা ৯৪ হাজার ১৩৭ টি। ২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর থাকার কথা থাকলেও তা কমে গিয়ে মাত্র ১২ জন রয়েছেন। পুরোপুরি জনবল না থাকায় দৈনন্দিন কাজে সমস্যায় পড়তে হয়। এ সম্পর্কে সেখানকার পাঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্সের ছাত্র জয় কুমারের সাথে কথা হয়। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়ায়।
তিনি বলেন,  লেখা-পড়া শেষের পথে। আমি এখন চাকরির খোঁজে বেড়াচ্ছি। শুধু আমি নয় রাজশাহী সরকারি বিভাগীয় লাইব্রেরিতে বহু পাঠক চাকরির খবর জানার জন্য পত্রিকা পড়তে আসেন। কিন্তু রাজশাহীর গণগ্রন্থাগার বহুদিন বন্ধ থাকায় সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, এই করোনাতেও ঢাকায় বড় বড় গ্রন্থাগার খোলা রয়েছে। অথচ রাজশাহীতে বন্ধ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের নিয়ম অনুযায়ী। সেটি এখানকার সর্বাধুনিক গ্রন্থাগারের একটি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারটি সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড বা কম্পিউটারাইজড করা হয়েছে। সবকিছুই চলে অনলাইনে। এখানে রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক বই ও পত্র-পত্রিকা। সবই চলে কম্পিউটারের মাধ্যমে। তবে করোনার কারণে অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে গ্রন্থাগারটি। এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও বেতন কাঠামো নির্ধারিত আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী।
শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে রয়েছে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রচুর শিক্ষার্থী শিক্ষা লাভের জন্য বাইরে থেকে রাজশাহীতে আসে লেখাপড়ার জন্য। প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে ছোট-খাটো গ্রন্থাগার। সেগুলো ঐ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাময়িক চাহিদা মিটালেও জ্ঞানার্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। আর পাঠক সংখ্যা কমে যাওয়া তো আছেই।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.