সিলেটব্যুরো: পুলিশি হামলার ঘটনায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর ১টায় গোলচত্বরের আন্দোলন থেকে তারা এই ঘোষণা দেন।
একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও হল ছাড়ার নোটিস প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
সবশেষ সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসবভনের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আজ সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ভেতর থেকে হল বন্ধ করে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ভবনসহ প্রশাসনিক ভবন-১, প্রশাসনিক ভবন-২ ও একাডেমিক বিল্ডিংগুলোতে তালা দিয়ে রাখেন।
এর আগে গতকাল রবিবার (১৬ জানুয়ারি) মধ্যরাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা শাবিপ্রবির ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এছাড়া সোমবার সকাল থেকেই ‘যেই ভিসি গ্রেনেড ছোড়ে, সেই ভিসির পদত্যাগ চাই’, ‘যেই ভিসি ছাত্র মারে, সেই ভিসি চাই না’, ‘যেই ভিসি গুলি ছোড়ে, সেই ভিসির পদত্যাগ চাই’, ‘শিক্ষার্থীর ওপর হামলা কেন প্রশাসন জবাব চাই’, ‘সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান এক হও এক হও’ স্লোগানে ক্যাম্পাস উত্তাল করে তোলেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্মম হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তাকে জবাবদিহি করতে হবে। তার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চলবে। অন্যদিকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সাজোয়া যানসহ ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।
গতকাল রবিবার (১৬ জানুয়ারি) শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে আজ সোমবার বেলা ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাত থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনার বিচার ও উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন বলে জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র হতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানা যায়, গতকাল রবিবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়। ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো রাশেদ তালুকদারকে সভাপতি ও রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেনকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ডিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
কমিটির অন্যান্য নামগুলো হলো- শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস, এপ্লায়েড সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আরিফুল ইসলাম, এগ্রিকালচার অ্যান্ড মিনারেল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রোমেল আহমদ, লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. কামরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক দিলারা রহমান।
উল্লেখ্য,গতকাল রবিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল তিনটার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য, ১০ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১৫ জন শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন।
তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৭টি রাবার বুলেট ও ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে তার বাসভবনে নিয়ে আসে।
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল প্রভোস্ট বডির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি ও অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। গতকাল রবিবার (১৬ জানুয়ারি) চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে বিকেলের পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.