রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে সিটির ডাবল ‘ট্রেবলের’ স্বপ্ন গুড়িয়ে সেমিতে রিয়াল

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে স্কিলের পাশাপাশি আসলেই কি কিছুটা ভাগ্যের ছোঁয়াও লাগে? তা না হলে এমন একপেশে আধিপত্যের পরেও ম্যানচেস্টার সিটি হারে কিভাবে ! ভাগ্য কিছুটা সহায় হলে, ফিনিশিং আরেকটু নিখুঁত হলে যেখানে অনন্ত এক হালি গোলের জয় নিয়েও মাঠ ছাড়তে পারত পেপ গার্দিওলার দল।
তবে দিনটা যেন ছিল রিয়াল মাদ্রিদেরই! প্রথমার্ধে ঘরের মাঠে ড্র করা লস ব্লাংকোরা ম্যাচের  শুরুতেই রদ্রিগোর গোলে এগিয়ে যায়। প্রথমার্ধে রিয়াল তাও কিছুটা সমানতালে লড়েছিল স্বাগতিক সিটির বিপক্ষে। তবে এগিয়ে থেকে শুরু করেও দ্বিতীয়ার্ধে খুঁজেই পাওয়া যায়নি কার্লো আনচেলেত্তির দলকে। তবে আক্রমণের ঝড় বইয়ে দিয়েও স্বাগতিক সিটি এ সময় কেবল সমতায় ফিরতে পেরেছে। সিটি মিডফিল্ডার  কেভিন ডি ব্রুইনার সেই গোলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
যেখানেও জমাট রক্ষণে স্বাগতিকদের ঠেকিয়ে দেয় রিয়াল। এরপর সেই রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকার। যেখানে শুরুতে লুকা মদ্রিচের মিসে পিছিয়ে পড়েছিল আনচেলেত্তির দল। তবে গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিনের বীরত্বে টাইব্রেকারে শেষ পর্যন্ত ৪-৩ ব্যবধানে সিটিকে হারিয়ে আরও একবার শেষ চার জায়গা করে নিল আসরের রেকর্ড ১৪ বারের শিরোপাধারীরা।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দুই জায়ান্ট প্রথম লেগের লড়াই ৩-৩ সমতায় শেষ হয়েছিল। এ নিয়ে টানা চারবার চ্যাম্পিয়নস লীগের সেমি ফাইনালে উঠল রিয়াল। গত বার সেমিতে ইত্তিহাদে স্টেডিয়ামে সিটির কাছে বিধ্বস্ত হয়ে আসর থেকে বিদায় নিয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা। সেই ইতিহাদেই যেন এবার মধুর প্রতিশোধ নিল লস ব্লাংকোরা।
এই হারে ভেঙে গেল সিটির ডাবল ‘ট্রেবলের’ স্বপ্ন। গতবার প্রিমিয়ার লীগ, এফএ কাপ, ও চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতে-তিনটি বড় শিরোপায় জিতে প্রথমবার ক্লাব ফুটবলের জগৎে অনন্য অর্জন ‘ট্রেবল’ জিতেছিল সিটি। এবারও সেই সাফল্যের পুনারবৃত্তির পথেই ছিল পেপ গার্দিওলার দল ।তবে টাইব্রেকার ট্র্যাজেডিতে সেই স্বপ্ন ভেঙে সময়ের অন্যতম সেরা দলটির।
তবে এই ম্যাচটি ট্রাইবেকার পর্যন্ত গড়াতে দেওয়াতে আফসোস হওয়ার কথা স্কাই ব্লুজদের। রিয়ালকে কার্যত নিজেদে অর্ধে চেপে ধরে একের পর একের পর এক আক্রমণ করে গেছিল সিটি। ৬৭ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ৩৩টি শট নিয়ে ৯টি লক্ষ্যে রাখে পেপ গার্দিওলার দল।
প্রথম মিনিট থেকে  এদিন স্বাগতিকেরা আধিপত্য দেখালেও খেলার বিপরীতে এগিয়ে গিয়েছিল রিয়ালই।
১২ তম মিনিটে বক্সের বা প্রান্ত থেকে সিটি ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে ভিনিসিয়ুসের নিখুঁত পাস গোলমুখে পেয়ে যান রদ্রিগো জাতীয় দল সতীর্থ এদেরসন তাঁর নেওয়া শট প্রথমে রুখে দিলেও ফিরতি যাত্রায় আবার পেয়ে জালে জড়াতে ভুল করেননি এই ব্রাজিলিয়ান। তবে সেই গোলে হেরফের হয়নি ম্যাচের গতিপ্রকৃতির।
ছয় মিনিট পরেই হল্যান্ডের গোলে সমতায় ফিরতে পারত সিটি।১৮ তম মিনিটে এই নরওয়জিয়ান স্ট্রাইকারের নেওয়া হেড লুনিনকে পরাস্ত করলেও ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ২৪ তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে কেভিন ডি ব্রুইনার বা পায়ের বুলেট গতির শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন ম্যাচের আসল নায়ক লুনিন।চার মিনিট পর ফের একই জায়গা থেকে এই মিডফিল্ডারের নেওয়া শট অল্পের জন্য লক্ষচ্যুত হয়। প্রথামার্ধে আরও বেশ কয়েকটি সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় গার্দিওলার দল।
দ্বিতীয়ার্ধে সিটি ছিল আরও বেশি ধারালো।অন্যদিকে প্রথম গোলের পর আর সিটির গোলমুখে শট রাখতে না
পারা রিয়াল যেন এ সময় আক্রমণ করতেই ভুলে গিয়েছিল।সিটির ১৫ আক্রমণের বিপরীতে বিরতি রিয়াল শটই নিতে পেরেছে কেবল একবার।
তবে খোলসে ঢুকে গেলেও রিয়ালের রক্ষণভাগ ছিল জমাট।রুডিগার,কার্ভাহাল,লুনিনরা মিলে একের পর ঠেকিয়ে দিয়ে গেছেন সিটির লাগাতার আক্রমণে।

ম্যাচে ফিরতে মরিয়া গার্দিওলা বিরতি পর মাঠে নামান জেরেমি ডোকুকে।এই বেলজিয়াম উইঙ্গার নামার পর থেকে ব্রা প্রান্তে দারুণ  সব আক্রমণ তৈরি করছিল সিটি। ৭৬ তম মিনিটে মিলে যায় কাঙ্খিত গোলও। বাঁ দিকের বাইলাইনের কাছাকাছি থেকে জেরেমি ডোকুর নিচু শট ক্লিয়ার করতে পারেননি রুডিগার। কাছ থেকে নিখুঁত শটে  ঝাপিয়ে পড়া লুনিনকে পরাস্ত করে ডি ব্রুইনা বল পাঠান জালে।দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ গোলের সমতা।
সিটিকে ম্যাচে ফেরনা ব্রুইনা অবশ্য জয়ের নায়কও বনে যেতে পারেতেন ৮০ তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ না হারালে। আকাঞ্জির বাড়ানো পাস বক্সে আনমার্কড পজিশনে পেয়েও অবিশ্বাস্যভাবে উড়িয়ে মারেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে কর্নার পায় সিটি। মানুয়েল আকনজির ওই কর্নারে হল্যান্ডের হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়।
অতিরিক্ত সময়েও যথারীতি আক্রমণে আধিপত্য ধরে রাখে সিটি। প্রথমার্ধে গোলরক্ষককে তেমন পরীক্ষায় অবশ্য ফেলতে পারেনি তারা। এ সময়ে খেলার বিপরীতে গোলের ভালো সুযোগটি ছিল রুডিগারের সামনে। জার্মান ডিফেন্ডার ১০৫ মিনিটে ৬ গজ বক্সের ভেতর নেওয়া শট বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন।তবে শেষ পর্যন্ত রিয়ালের জয়ের মুহূর্তটা এনে দিয়েছেন রুডিগারই।
বের্নার্দো সিলভা ও মাতেও কোভাচিচের শট লুনিন ঠেকিয়ে দেওয়ার পর রিয়ালকে এগিয়ে দিয়েছিলেন বেলিংহ্যাম, লুকাস ভাসকেস, নাচো ফের্নান্দেস।দলের শেষ শটটা নিতে এসছিলেন রুডিগার। মাপা শটে এডাসনকে পরাস্ত করে রিয়ালকে রেকর্ড ১৭তম বার চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে তুলেন এই জার্মান ডিফেন্ডার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.