রামেক হাসপাতালে করোনায় ভর্তি রোগির ৪০ শতাংশই গ্রামের

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মেডিকেলে করোনায় মারা যাওয়াদের বেশিরভাগই ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত বলে মনে করছেন হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার শামীম ইয়াজদানি। মৃতদের বেশিরভাগই চিকিৎসাকালে অবস্থা খারাপ থাকছে। তাদের শারীরিক সমস্যা গতবছরের করোনার লক্ষণের চেয়ে এবার আলাদা।
পরিচালক জানান, বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগির ৪০ শতাংশই গ্রামাঞ্চলের। কারণ হিসেবে আমরা দেখছি গ্রামের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি কম মানা, অবাধে সব জায়গায় চলাচল, মাস্ক না পরাসহ অন্য কারণে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে সামগ্রিকভাবে রাজশাহীতে শনাক্তের হার কমছে। স্বাস্থ্যবিধি মানলে শনাক্তের হার আরো কমে অবস্থার উন্নতি হবে বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এখন যে রোগিরা ভর্তি হচ্ছেন তাদের অক্সিজেন সেচুরেশন কম, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, শারীরিক যে সমস্যাগুলোও হঠাৎ করে বাড়ছে। শারীরিক অবস্থার নানান ধরনগুলো পরিবর্তন হয়েছে। চিকিৎসার সময় দিচ্ছে না এই ধরন গুলো! হঠাৎ করেই করোনা আক্রান্ত রোগীর অবস্থা বেশিমাত্রায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজন হচ্ছে আইসিইউ এর সাপোর্ট।
চিকিৎসকরা আরো জানাচ্ছেন, ইদে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়েছে, ফলে সংক্রমণ বেড়েছে। শুধু ডেল্টা ভেরিয়েন্ট নয়- অন্য ভেরিয়েন্ট কমিয়ে আনা সম্ভব শুধু স্বাস্থ্যবিধি মানলে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুন) শনাক্তের হার কমেছে কয়েকদিন কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কারণে। স্বাস্থ্যবিধি মানলে এই সমস্যার সমাধান দেখছেন চিকিৎসকরা।
রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. পার্থ মণি ভট্রোচার্য বিটিসি নিউজকে জানান, গত বছর করোনার যেমন লক্ষণ ছিলো এবার কিন্তু অনেক বিষয় আলাদা দেখছি। ভর্তির পর থেকেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া এবং অক্্িরজেন স্যাচুয়েশন কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লিভার কিডনি ডায়াবেটিক রোগিদের ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক বেশি।
তিনি জানান, এখন উপজেলার করোনা রোগী বেড়েছে। শহরে যেমনভাবে মাস্ক পরা ও স্থাস্থাবিধি কঠোরভাবে মানা হচ্ছে গ্রামে তা হচ্ছে না। একজন করোনা রোগী সারা গ্রাম মাস্ক ছাড়াই ঘুরছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এই সমস্যা বেশি হচ্ছে বলে জানান রামেক হাসপাতালের এই চিকিৎিসক।
এদিকে রোগির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মৃত্যু হারও কমছে না বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও বিধিনিষেধ আরোপের পরামর্শ তাদের।
লকডাউনের সুফল পেতে সাত দিন নয়, অন্তত ১৪ দিনের লকডাউনের পরামর্শ দিচ্ছেন হাসপাতাল পরিচালক ও রামেক হাসপাতালের চিকিৎকরা। এদিকে গ্রামাঞ্চলে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ায় শঙ্কিত স্থানীয় প্রশাসনও।
এই সংক্রমণ ঠেকাতে আজ বুধবার জরুরি বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বললেন জেলা প্রশাসক। লকডাউনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে আজ বুধবার রাত সাড়ে আটটায় নগরীর সার্কিট হাউজে। বিষয়টি বিটিসি নিউজকে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল নিজেই।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, করোনা এখন শুধু শহরেই নয়, বিস্তার ঘটিয়েছে গ্রামাঞ্চলেও। তাই বাড়ছে আক্রান্তের হার, বাড়ছে রোগী ভর্তির সংখ্যাও। নতুন করে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো ৫৮ জন। যাদের বেশির ভাগের বাসা বিভিন্ন উপজেলায়। রাজশাহী মেডিকেলের করোনা ইউনিটে আজও প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন।
এদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। হাসপাতাল পরিচালক বলছেন, মৃতদের বেশিরভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হবার আশংকাই বেশি। কেননা বয়স্ক মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তরুণদের মৃত্যুর হারও। রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটসহ মোট ১৩টি ওয়ার্ডে চলছে করোনা রোগির চিকিৎসা।
প্রস্তুত করা হয়েছে আরোও একটি ওয়ার্ড সেখানে ৩৬ টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাথে সাথে বাড়ানো হয়েছে আইসিইউ এর দুইটি বেড। এখন ২০ টি আইসিইউ বেড হাসপাতালে। আগে ছিলো ১৮ টি। এখন ২০ টি বেডেই রোগীদের চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালে করোনা ও ইউনিটগুলোতে ৮ টি টিমে সেবা দিচ্ছেন মোট ৮০ জন চিকিৎসক। সাথে নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে ৫০০ জন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে চাওয়া হয়েছে আরও ১৫ জন চিকিৎসক।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো: মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.