রাবি শিক্ষক রেজাউল হত্যায় দুই জনের মৃত্যুদন্ড ও ৩ জনের যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাদিহীন বাংলাদেশ জেএমবির দুই সদস্যের মৃত্যুদন্ড এবং তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শিরীন কবিতা আখতার বেলা ২টার দিকে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

আসামিদের মধ্যে বগুড়ার শিবগঞ্জের মাসকাওয়াত হাসান ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে সাকিব এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলামের ফাঁসির রায় দিয়েছেন বিচারক। আর নীলফামারির মিয়াপাড়ার রহমত উল্লাহ, রাজশাহী মহানগরীর নারিকেলবাড়িয়া এলাকার আবদুস সাত্তার এবং তার ছেলে রিপন আলীকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদ-। তাদের মধ্যে হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ শরিফুল ইসলাম এখনও পলাতক। বাকি চারজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান এ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু।

রায়ে সন্তস প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাবু বলেন, মাসকাওয়াত ও শরিফুল এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। আর অপরতিনজন পরোক্ষভাবে জড়িত। তারা সবাই জেএমবির সঙ্গে জড়িত। খেলাফত প্রতিষ্ঠান জন্য মুক্তমনা হিসেবে তারা রাবি শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

আইনজীবী বাবু বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রহমত উল্লাহকে গ্রেপ্তারের পর তার ল্যাপটব জব্দ করা হয়। সেখানে রেজাউল কবির হত্যার কৌশল ও জেএমবির কর্মকান্ডের তথ্য পাওয়া যায়। এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে মাসকাওয়াত ও রহমত আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে।

২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয় রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। তার ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ পরে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন। বেলা ১২টা ২০ মিনিটে কারাগার থেকে আদালতে তিন আসামী মাসকাওয়াত, রহমত ও রিপনকে আদালতে হাজির করা হয়। এর আগেই আদালতে হাজির হন জামিনে থাকা আব্দুস সাত্তার। দুপুর ১টায় বিচারক ৪২ পৃষ্টার রায় পড়া শুরু করেন। রায় পড়ার পর ২টার দিকে বিচারক শিরীন কবিতা আখতার আদেশ দেন।

রায় ঘোষনাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে আদালত চত্বরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। নিহত শিক্ষকের ছেলে, মেয়ে ও ভাই ছাড়াও আদালত চত্বরে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে রাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অধ্যাপক রেজাউলের পরিবার।

ইংরেজি বিভাগের সভাপতি ড. এএফএম মাসউদ আখতার বলেন, ইংরেজি বিভাগের সেন্টিমেন্ট অনুযায়ি আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট। বিজ্ঞ আদালত এই হত্যা মামলার সুষ্ঠু রায় ঘোষণা করেছেন। এখন আমাদের দাবি, অবিলম্বে যেন এই সাজা কার্যকর করা হয়। মামলার রায় যেন বহাল থাকে সেজন্য আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। আমাদের বিশ্বাস, সেখানেও আমরা ন্যায় বিচার পাবো।

অধ্যাপক রেজাউল করিমের মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্টি জানিয়েছি। তবে আমাদের আশঙ্কা, আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করার পর তাদের শাস্তি যেন কমে না যায়। আমরা পলাতক খুনি শরিফুলকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি। অতি দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে সবার শাস্তি কার্যকর হবে এটাই এখন আমাদের প্রত্যাশা।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.