রাবি ভর্তি পরীক্ষার ১৯ কোটি টাকার বাণিজ্য

রাবি প্রতিনিধি:  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এবার ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি ইউনিটে ফর্মের মূল্য ১ হাজার ৯৮০ টাকা নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ! প্রাথমিক পর্যায়ে লাগবে আরও ৫৫ টাকা। অর্থাৎ কোনো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে যেকোন ইউনিটে পরীক্ষা দিতে চাইলে গুনতে হবে ১৯৮০+৫৫=২০৩৫ টাকা! যেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালে আমারা দেখতে পাই এর ভিন্ন চিত্র। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ইউনিটের ফর্মের দাম ৪৫০ টাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ১০০ টাকা।

গতবারও ফর্মের দাম বৃদ্ধি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল রাবি প্রশাসন। যদিও গতবার ইউনিট সংখ্যা বেশি এবং পৃথক পৃথক ফর্মের দাম এবারের তুলনায় কম থাকায় অনেকেই একাধিক ফর্ম কিনে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু এবার প্রসাশন সেই সুযোগটিও রাখেনি ভর্তিচ্ছুদের জন্য! এতে অনেক পরীক্ষার্থী ও তার পরিবারের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়াবে!

এছাড়াও এবার একটি ইউনিটের বেশি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন না শিক্ষার্থীরা, অর্থাৎ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী যদি কলা অনুষদে পরীক্ষা দেন তাহলে তিনি আর বিজ্ঞান অনুষদে পরীক্ষা দিতে পারবেন না! যেকোনো একটা ইউনিটেই পরীক্ষা দিতে পারবেন! এটা কতটা যৌক্তিক? সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

ঢাবিতে সবার জন্য একটা কমন ইউনিট ‘ঘ’ থাকে, যেটিতে বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগও থাকে, এমন একটা কমন ইউনিট কেন রাখা হলো না রাবিতে?

চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার জন্য মনোনীত হবেন ৩২ হাজার শিক্ষার্থী! মানে পরীক্ষা দেওয়ার আগেই অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যাবে!

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একের পর এক অযৌক্তিক ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পার পেয়েই যাচ্ছে, এর কারণ হলো জবাবদিহিতার ব্যবস্থা না থাকা! মুক্ত রাজনীতি চর্চা না থাকায় শিক্ষার্থীরাও পারছে না মেরুদ- সোজা করে প্রশাসনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত রুখে দিতে!

আইন অনুযায়ী সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি থাকার বিধান থাকলেও তা কার্যকর না করে স্বেচ্ছাচারী পন্থায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচলনা করছে প্রশাসন। ফলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে মতামত দেওয়ার কেউ থাকছে না।

এই ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম বিক্রি করেই রাবি প্রশাসন হাতিয়ে নেবে প্রায় ১৯ কোটি টাকা! এ যেন, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের পকেট কাটার সিদ্ধান্ত, এটা শুধু অযৌক্তিকই নয়, অনৈতিক এবং অমানবিকও বটে। যেটি জাতীয় বুদ্ধিজীবী হিসেবে শিক্ষকদের কাছ থেকে জনসাধারণ একটি কখনই প্রত্যাশা করে না।

ভর্তি পরীক্ষা নিতে নিশ্চই ১৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে না? এমনকি ১৯ লাখ টাকাও ব্যয় হওয়ার কথা নয়, যদি অযৌক্তিকভাবে ব্যয় না দেখানো হয়। এই টাকাগুলোর অধিকাংশই শিক্ষকেরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিজেদের পকেটে ভরবেন!

আপনি জানেন তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে বিশেষ করে রাবিতে, যাদের অধিকাংশই গ্রামের নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। যাদের স্বপ্ন থাকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পড়াশোনা করে মেধার যোগ্যতা দিয়ে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। এদের কেউই বিদেশে গিয়ে অথবা ভালো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা চিন্তাও করতে পারেনা। কারণ বাড়তি টাকা খরচ করে শিক্ষা গ্রহণের সামর্থ এদের থাকেনা।

শিক্ষা অর্জনের জন্য বাড়তি টাকা কেনই বা খরচ করতে হবে? কারণ শিক্ষা তো কোন পণ্য নয়, যে যার যতো বেশি টাকা আছে সে ততো বেশি উচ্চ শিক্ষা ক্রয় করবে! এটা তো মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা নিয়ে যা চলছে তা আর অধিকারের জায়গায় নেই, এটাও এখন বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে, যা জাতির জন্য সত্যিই অশনিসংকেত!

আপনাদের এই ভর্তি বাণিজ্যের উদ্যোগ শিক্ষার সুযোগকে সম্প্রসারিত না করে আরও সংকুচিত করবে। এতে গরিবের সন্তানরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ হারাবে। রাবি প্রশাসনকে আরও উদার ও মানবিক হওয়ার আহ্বান জানাই। ফর্মের দাম কমিয়ে ৩০০ টাকা করুন। গরিবের পকেট না কেটে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট বাড়ানোর চেষ্টা করুন। শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানোর চেষ্টা করুন। গ্রামের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করুন। বিশ্ববিদ্যালয়কে সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বাঁচতে দিন! বেঁচে থাকবে তাদের স্বপ্নও, যা ক্ষুন্ন করার কারও অধিকার নাই!

লেখক- আব্দুল মজিদ অন্তর, সমন্বয়ক, রাকসু আন্দোলন মঞ্চ। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.