রাবি’র ক্যাম্পাস : মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি!
এমনিতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সৌর্ন্দযের এক লীলাভূমি। ক্যাম্পাসের গাছপালা ঘেরা রাস্তাগুলো সুনসান ও নিরবতা বিরাজ করলেও পাখির কিচিমিচির আর পাখা ঝাপটানোর শব্দে চলাফেরা করাই দায়। ক্যাম্পাসের জলাশয় গুলোতে নতুন কিছু পাখিদের আনাগুনা বেড়েছে। যা অতীতে কখনও দেখা যায় নি। গত ১৮ই জুন সন্ধ্যার সময় ঝুম বৃষ্টিতে শহীদ হবিবুর রহমান ফুটবল মাঠ প্রায় হাটু পরিমাণ পানি জমে গেল। এরই মধ্যে চিরশত্রু শিয়াল-কুকুরের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেল।
বড় বড় কোলা ব্যাঙ ঝোপঝড় থেকে বেরিয়ে এসে পানিতে সাঁতরাতে শুরু করল। আমরাও গাড়ী পর্যন্ত যেতে কাকভেজা হয়ে গেলাম। মাগরিবের আযানের সাথে সাথে একদল শিয়াল দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের পেছনের জঙ্গল থেকে বের হয়ে মুয়াজি¦নির সাথে গলা মিলানো শুরু করল। মুয়াজ্জিন বলে, আল্লাহু আকবর–। শিয়াল ডাকে, কি হুয়া–। সে এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা।
গৃহবন্দী অবস্থার অবসাদ কাটাতে এবং গবেষণার কাজকে চালু রাখতে প্রায় প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে আসা হয়। অনেকে এ কাজটি বাড়িতে বসেই করছেন। কিন্তু কেউ মনে শান্তি পাচ্ছেন না। আমরা না পারছি ছাত্র পড়াতে না পারছি গবেষণায় মন বসাতে। দৈনন্দিন জীবন-যাত্রায় আমাদের বিরাট ছন্দ-পতন ঘটেছে। ছাত্রছাত্রীদের কলোরবে যে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত থাকে তা বন্য পাখপাখালিদের দখলে। একই কি বলে পরিবেশের ভারসম্যতা? দিনের বেলায় প্যারিস রোডসহ অন্যান্য জায়গায় কিছু লোকের দেখা মিললেও সন্ধ্যার পর একেবারেই সুনসান হয়ে যায় ক্যাম্পাস। এই সুনাসান জায়গাগুলো আজ কুকুর-শেয়ালদের দখলে। রাবির ক্যাম্পাসে বেশ কিছু বেওয়ারিশ কুকুর আছে। এরা ৫-৬ টা দলে বিভক্ত। একেকটা দলে ৪-৫ টা করে কুকুর আছে।
এদের জোনও আলাদা। কাজলা গেটে, জোহা চত্বরে, স্টেডিয়াম গেট, মেডিক্যাল সেন্টারসহ নানা জায়গায় এদের দলবদ্ধ অবস্থান। ক্লান্ত ও জরাজীর্ণ শরীর নিয়ে এরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে শুয়ে থাকে। খাদ্যাভাবে এরা এতই দূর্বল যে গাড়ীর আওয়াজে এরা সজাগ হয় না। মানুষের উচ্ছিষ্ট আর দোকানিদের ফেলে দেয়া খাবার খেয়ে এরা ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখতো। কিন্তু এখন তাদের দেখার কেউ নেই। শুনেছি এদের জন্য একবেলা করে খাবার দেয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
চারজনের টিম গঠন করতে মাঝে মাঝে আমাকেও মাঠে নামতে হয়। সুবিধা হলো গাড়ী নিজেই ড্রাইভ করাতে ঘরে এবং বাইরে কোরানটাইন পরিবেশ থাকে। তারপরেও মনে সবসময় একটা আতঙ্ক থাকেই। পরবর্তীতে কে? আমরা এমন এক অজানা শত্রæর বিরুদ্ধে লড়ছি যা সর্বদা পরিবর্তিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আজও আদি করোনার স্বরুপ উদঘাটন করতে পারিনি।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.