রাজশাহী যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি চলছে অবহেলা ও অযত্নে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগরী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের পাশে সবুজেঘেরা পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষন কেন্দ্রটি। বর্তমানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির জরাজীর্ণ পরিবেশে বিভিন্ন অযত্ম ও অবহেলায় ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। বাইরে থেকে এই প্রদিষ্ঠানটিকে দেখতে একটা নির্মল পরিবেশের আবহ ভেসে আসে, কিন্তু ভিতরে গেলেই যেন সম্পুর্ণই উল্টো। তবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ জরাজীর্ণ বিষয়টি স্বিকার করলেও অবহেলার কথা বলতে নারাজ।

সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানাগেছে, ১৯৮০ সালে ৫ একর জমি নিয়ে বেকার যুবক-যুবতিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ততসময় রাজশাহী বিভাগের প্রথম যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং সুনামের সহিত কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়- সেই সময় প্রশিক্ষণার্থী হোষ্টেল, প্রশাসনিক ভবন, শ্রেণীকক্ষ, কর্মকর্তা-প্রশিক্ষক-কর্মচারীদের আবাসিক সহ হাতে কলমে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সরঞ্জাম দিয়ে যুব প্রশিক্ষণের কার্যক্রম শুরু হয়।

খোজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভিতরের অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যালয় থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণার্থীদের আবাসিক ভবনটিও জীর্ণদশা। ভবনগুলোর কোনো কোনেটির জানালা নাই তো, কোনোটির কোথাও কোথাও টিনের চালারও একেকটি অংশ উড়ে গেছে। আবার গোটা প্রশিক্ষণকেন্দ্র জুড়েই বিভিন্ন স্থানে পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির অফিসকক্ষের চেয়ার-টেবিলগুলোতেও যেন ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। কারণ অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীই নিয়মিত অফিস করেন না। ফলে এক ভুতুড়ে কেন্দ্রেই পরিণত হয়েছে রাজশাহী যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানান, তাঁরা গত ১ মার্চ থেকে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এর মধ্যে প্রশিক্ষণকেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর মতিউর রহমানকে কয়েকবার দেখেছেন। আর অন্যান্য প্রশিক্ষকদের মধ্যে ডেপুটিশনে আসা ফাহমিদা সারোয়ার নামের একজন সিনিয়র প্রশিক্ষককেও (কৃষি) কয়েকবার দেখেছেন। এই দুই কর্মকর্তা অধিকাংশ দিনই অফিসে আসেন না। এর বাইরে অন্যান্য প্রশিক্ষকরাও অনিয়মিত অফিস করেন। ফলে অফিস কক্ষগুলো পড়ে থাকে ফাঁকা।
নিয়ম অনুযায়ী সকাল নয়টার পর থেকেই এই অফিসটি সরগরম হওয়ার কথা। কারণ সকাল সাড়ে নয়টা থেকেই প্রশিক্ষণার্থীদের ক্লাস শুরু হয় কিন্তু একটি ক্লাস হয়ে যাওয়ার পরেও অন্যান্য কর্মকর্তা এবং প্রশিক্ষকরা তখনো আসেননি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অপর একজন প্রশিক্ষক এসে পৌঁছেন।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষনার্থীা জানান, তাঁদের আবাসন কক্ষটি একেবারে জরাজীর্ণ। যেন থাকার উপায়ও নাই। কিন্তু সেই কেন্দ্রটিই কয়দিন আগে সংস্কারের নামে প্রায় সাত লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। দুই অংশের দুটি দেয়ালে হালকা রং-চুনকাম করেই টাকাগুলো লুটপাট করা হয়েছে। যদিও ঢাকা থেকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের একজন প্রকৌশলীর নেতৃত্বে হয়েছে এই লুটপাট। অথচ ভাঙা-চোরা ভবনটির অধিকাংশ কক্ষই একেবারে থাকার অনুপযোগী পরিত্যক্ত।

সরেজমিন ঘুরে আরো দেখা গেছে, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাতটি কোয়ার্টার আছে। সেগুলোও পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। কারণ এখানে প্রশিক্ষকরা থাকেন না। তাঁরা সবাই যে যার মতো বাইরে থেকে এসে অফিস করেন। এতে করে সঠিক মাণের প্রশিক্ষণও হচ্ছে না। কোনো মতে তিন মাস পার করেই প্রশিক্ষণ শেষ করে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে সনদ। ফলে সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অথচ প্রতি তিন মাসে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে ৪০ জন করে প্রশিক্ষকদের মাঝে।

এসব নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর মতিউর রহমান বলেন, ‘আমি নিয়মিত অফিস করি না, এটা ঠিক নয়। নানা কাজের জন্য ঢাকায় থাকতে হয়। এ কারণে মাঝে মাঝে অফিস করতে পারি না। তবে আমার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সার্বিক অবস্থা দেখে কর্তৃপক্ষ খুশি। যদিও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা কাজ নিয়ে ঝামেলা আছেই। তবে এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।’

প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির জরাজীর্ণ পরিবেশ সম্পর্কে বলেন, ‘সবগুলো ভবনই দীর্ঘদিনের পুরনো। এ কারণে ভবনগুলোতে বসবাস করায় দায়। এমনকি অফিসটিও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। তার পরেও আমরা কোনো মতে ব্যবহার করছি। তবে আশা করি দ্রুতই আমাদের উন্নত মাণের ভবন হবে। সে অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে কাজও শুরু হয়েছে।’ #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.