রাজশাহী আড়ানীর পৌর মেয়রের বাড়ি থেকে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও কোটি টাকা উদ্ধার’ স্ত্রী’সহ গ্রেফতার-৩

বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার মেয়রের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা, দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, হেরোইন, ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত-রাতে অর্থাৎ আজ বুধবার (০৭ জুলাই) রাত্রি ৩টার দিকে অভিযান চালিয়ে মেয়রের স্ত্রী জেসমিন আকতার ও দুই ভাতিজাকে আটক করেতে সক্ষম হন পুলিশ।
থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, মেয়র মুক্তার আলীর বাড়ির ঘরের মধ্যে আলমারির ড্রয়ার টান দিতেই বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র এবং মাদক দেখে পুলিশ কর্মকর্তাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। এনিয়ে বুধবার (০৭ জুলাই) দুপুর ০১ টায় রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। অভিযানে আটককৃত অন্য দুজন হলেন, মেয়রের ভাতিজা সোহান (২৫) ও শান্ত (২৩)। এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের প্রেস ব্রিফিং-এ জানানো হয়, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেয়র মুক্তার আলী মদ্যপান অবস্থায় তার দলবল নিয়ে আড়ানী পৌরসভার জয়বাংলা মোড়ে নাটোরের বাগাতিপাড়ার বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন মজনুর বাড়ি সংলগ্ন ওষুধের দোকানে গিয়ে হট্টগোল শুরু করে। মেয়র ও তার দলবলের ভয়ে মজনু বাড়ির ভিতরে চলে গেলে মেয়র ও তার সহযোগীরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে মজনুকে মারপিট শুরু করে। মজনুর কলেজ পড়ুয়া ছেলে এবং স্কুল শিক্ষক স্ত্রী মজনুকে রক্ষা করতে এলে মেয়র তাদেরকেও মারপিট করে আহত করে।
প্রেস ব্রিফিং-এ আরও জানানো হয়, মজনু গত পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষ নিয়ে মেয়রের বিপক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছিল। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন রাতেই ভুক্তভোগি মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মেয়র মুক্তার আলী (৪৫), সোহরাব আলী ওরফে মন্টুর ছেলে আঙ্গুরের (৩২) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩ থেকে ৪ জনের বিরুদ্ধে বাঘা থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার পরে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম এবং সহকারী পুলিশ সুপার ডিএসবি (চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহমেদের নেতৃত্বে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলামসহ পুলিশের একটি দল মেয়র ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারে অভিযান চালায়। অভিযানের এক পর্যায়ে মেয়রের সন্ধানে তার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সে পালিয়ে যায়।
এসময় তার বাড়ি থেকে যথাক্রমে, (ক) ০১টি ৭.৬৫ অটোমেটিক বিদেশি পিস্তল, (খ) ৭.৬৫ পিস্তলের ৪টি ম্যাগজিন, (গ) ৭.৬৫ পিস্তলের ১৭ রাউণ্ড তাজা গুলি, (ঘ) ৭.৬৫ পিস্তলের ০৪টি গুলির খোসা, (ঙ) ০১টি ওয়ান শুটার গান, (চ) ০১টি দেশি তৈরি বন্দুক, (ছ) ০১টি এয়ার রাইফেল, (জ) শটগানের ২৬ রাউন্ড গুলি, (ঝ) ১০ গ্রাম গাঁজা, (ঞ) ০৭ পুরিয়া হেরোইন, (ট) ২০ পিস ইয়াবা, (ঠ) ১৮ লাখ টাকার স্বাক্ষর করা চেক, (ড) নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রেস ব্রিফিং-এ আরও জানানো হয়, মেয়রের বাড়িতে পাওয়া কোন অস্ত্রেরই লাইসেন্স ছিল না। উদ্ধারকৃত টাকার কোন জবাব তারা দিতে না পারায় উদ্ধারকৃত সকল অস্ত্র ও টাকা জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় পলাতক মেয়র মুক্তারকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধেও দেশের প্রচলিত আইনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিং কালে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সনাতন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. ইফতে খায়ের আলম, সহকারী পুলিশ সুপার (গোদাগাড়ী সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি ও চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহমেদ এবং বাঘা থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম’সহ পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম কর্মীরা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.