রাজশাহীর পিসিআর মেশিন চলে যাচ্ছে খুলনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর রাজশাহী বিভাগে বেড়ে গেছে নমুনা পরীক্ষার চাপ। এখন শুধু রাজশাহী ও বগুড়ায় বিভাগের আট জেলার করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সব নমুনা পরীক্ষা সম্ভব না হওয়ায় মাঝে মাঝে পাঠাতে হয় ঢাকা। এ অবস্থায় রাজশাহী বিভাগের জন্য তিনটি পলিমার চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) মেশিন বরাদ্দ হয়েছে। তবে জনবল সংকটের কারণে রাজশাহী তা নিতে পারছে না।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) নামে এই মেশিনটি বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়া পাবনা মেডিকেল কলেজ ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) একটি করে পিসিআর মেশিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া ও রাজশাহীতে আগে থেকেই পিসিআর মেশিন থাকলেও নতুন পাচ্ছে পাবনা। এই জেলার নমুনা এখন কখনও রাজশাহীতে আবার কখনও বগুড়ায় পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
রাজশাহীতে এখন জয়পুরহাট, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নওগাঁর নমুনাও পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এর সবই পরীক্ষা হয় রামেকে। আর রামেক হাসপাতালে আরেকটি পিসিআর ল্যাব থাকলেও সেখানে শুধু ভর্তি থাকা রোগী, চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালেও ‘জিন-এক্সপার্ট’ মেশিনে শুধু সেখানকরার রোগী ও চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষা করে। শুধু রামেকের একটি পিসিআর ল্যাবেই অধিক সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হয়। চার শিফটে এখানে প্রতিদিন ৩৭৬টি করে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতি শিফটে ৯৪টি নমুনার পরীক্ষা করা হয়। এ অবস্থায় আরেকটি মেশিন চালানো চাপ মনে করছে রামেক কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রামেকে নতুন পিসিআর মেশিন স্থাপনের দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। কিন্তু নতুন আরেকটি ল্যাব স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না রামেক। নতুন ল্যাবের জায়গা নির্ধারণ না হওয়ায় গণপূর্ত অধিদপ্তর কোন কাজও শুরু করতে পারেনি। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচিত হয়। সভায় গণপূর্তের পক্ষ থেকে নিজেদের প্রস্তুতি থাকার কথা জানানো হয়। তবে সভায় মেশিনটি নেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। সভায় বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর মেশিনটি দ্রুত স্থাপনে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিচালককে তাগিদ দেন।
জানতে চাইলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগের জন্য নতুন তিনটি পিসিআর মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, পাবনা মেডিকেল কলেজ ও শজিমেকে এগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব মেশিন বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। কাজ শেষ হলেই মেশিন চলে আসবে। কিন্তু রাজশাহীর মেশিনটি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এটা দূর করা গেলে আগামী একমাসের মধ্যেই মেশিনটি চালু করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘পাবনা ও বগুড়ায় ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এটির জায়গা নির্ধারণ করে দেয়নি। তাঁরা এটি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দে আছে এটি নিবে কী নিবে না। মেশিনটি রাজশাহীর অন্য কোথাও বসানোরও সুযোগ নেই। রামেক না নিলে এটি অন্য কোন জেলায় চলে যাবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, নতুন যে মেশিন দেয়া হচ্ছে তাতে একবারেই ২৮২টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। বর্তমানে রামেকে থাকা মেশিনে একবারে সর্বোচ্চ ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। নতুন মেশিনটির কার্যক্ষমতাও এখনকার মেশিনের দ্বিগুণ। নতুন মেশিনটি নিলে রাজশাহীতে নমুনার পরীক্ষা বাড়বে। তখন আর নমুনা ঢাকায় পাঠানোর দরকার হবে না। কিন্তু শুধু লোকবল সংকটে মেশিনটি নিতে পারছে না রামেক। এ অবস্থায় মেশিনটি খুলনায় চলে যেতে পারে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
রামেকের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের এখানে এখন চার শিফটে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর জন্যই যে লোকবল দরকার তা নেই। কিছু দিন আগেই একসঙ্গে ল্যাবের আটজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। তাঁদের ল্যাব থেকে দূরে থাকতে হলো। তখনই কাজ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। এই জনবল দিয়ে আরেকটি ল্যাব চালানো সম্ভব না। বিষয়টা আমরা মন্ত্রণালয়কে লিখেছি। জনবলের জন্য বলেছি। জনবল ছাড়া শুধু মেশিন দিলে তো আমরা চালাতে পারব না।’
অধ্যক্ষ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘এত দামি একটা মেশিন নিয়ে ফেলে রেখে লাভ কী? আর আমরা এটি চালাতে না পারলেও এ নিয়ে পরে সমালোচনা হবে। আমরা মেশিন নিতে আগ্রহী, কিন্তু এ জন্য যে জনবল দরকার সেটি দিতে হবে। মন্ত্রণালয়কে এভাবেই জানিয়েছি। তারা আমাদের এখনও কোন কিছু জানায়নি। তবে যেটুকু শুনছি সম্ভবত এই মেশিনটি খুলনায় পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে। খুলনায় পিসিআর মেশিন নেই।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.