রাজশাহীর দুর্গাপুরে ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

ফাইল ছবি
নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিকে ধানকাটা শ্রমিক সঙ্কট, অন্যদিকে বৃষ্টির বাগড়া। ঈদের পর দুই দফায় বৃষ্টিতে খেতের কাটা ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কৃষক।
মাঠের ভিজা (নরম) মাটিতে শ্রমিক সঙ্কটে পড়ে আছে বোরো ধান। কৃষকরা ধান রক্ষায় কোথাও কোথাও পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। কেউ আবার চড়া দামে ট্র্যাক্টর ভাড়া করে ঘরে তুলছেন ধান।
এমন পরিস্থিতিতে মাঠে কেটে ফেলা ধান নিয়ে চিন্তিত কৃষক। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, উপজেলায় ৫০ভাগের বেশি বোরো ধান কাটা হয়েছে।
দুর্গাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানায়, উপজেলায় এবার প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ৫হাজার হেক্টর হলেও অপরিকল্পিত পুকুর খননের ফলে এবার বোরোচাষ কিছুটা কম হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও রোগ বালাই না থাকায় ভাল ফলন হয়েছে।
ইতিমধ্যেই উপজেলায় ৫০ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। অনেক মাঠে কৃষকরা শুকনা খড় করার উদ্দেশে বোরো ধান কেটে রোদে শুকিয়ে দিতে দেখা গেছে । ফলে বৃষ্টিতে ভেজা বোরো ধান ঘরে তুলতে কৃষকরা কিছুটা বিপাকে রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বোরো মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে পড়ে আছে বোরো ধান। কৃষকরা শুকনা খড় করতে এসব ধান কেটে ফেলে রেখেছেন। গত দুই দিনের বৃষ্টিতে মাঠে পড়ে আছে ধান। শ্রমিক সঙ্কট বৃষ্টিতে ভেজা পড়ে থাকা ধান ঘরেও তুলতে পারছেনা না কৃষক। ফলে এসব ধান হাঙ্গা করে (একত্রে জমা করে) রাখা হয়েছে জমিতে।
ভেজা মাটিতে রাখা হাঙ্গার নীচের ধান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক কৃষক শ্রমিক সঙ্কটে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ট্র্যাক্টরে করে ঘরে তুলছেন ধান। এদিকে বৃষ্টির পানিতে ভেজা ধান উঠানে তুলে মাড়াই করতে ও শুকাতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষককে।
দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের এক কৃষক বলেন, আমাদের এ এলাকায় আগে বাহির থেকে বোরো ধান কাটতে শ্রমিক আসতো। কিন্তু প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে এবার আসেনি। ফলে বোরো ধান কাটার শুরুতে থেকে তীব্র শ্রমিক সঙ্কট। ৬-৭শত টাকা দিয়েও একজন শ্রমিক মিলছে না।
তিনি বলেন, এ বছর প্রায় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বোরোধান লাগিয়ে ছিলাম। বাড়িতে গাভী দিয়ে ৪টি গরু রয়েছে। এ কারণে সারাবছর জুড়েই শুকনা খড়ের প্রয়োজন হয়। তাই খেতের সব বোরো ধান কেটে মাঠে শুকাতে দিয়েছিলাম। কাটার পর থেকেই বৃষ্টি বাগড়া শুরু হয়। ধান ভিজে খেতে পড়ে থাকায় এর রঙও উজ্জ্বল হবে না। তাই জমিতে ধান (হাঙ্গা) দিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম। হাঙ্গা দেওয়া ধান ঘরে তোলার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই ট্র্যাক্টর দিয়ে জমি থেকে ধান তুলছি।
নওপাড়া এলাকার বোরোচাষি বলেন, তার ৫ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ রয়েছে। ইতিমধ্যেই ২বিঘার বোরোধান ঘরে তুলেছেন। বাজারে শুকনা খড়ের দাম আকাশ ছোঁয়া। তাই ধানকেটে জমিতেই রোদে শুকাতে দিয়ে ছিলাম। তারপর রোববার ও সোমবার বৃষ্টি হয়েছে। ধানও বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। এলাকায় শ্রমিকও সঙ্কট। জমিতে কদমাক্ত থাকায় শ্রমিতে গাড়ি নামানোও যাচ্ছে না। ফলে মাঠের কাটা ভিজা ধান নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
নারায়ণপুর গ্রামের বোরোচাষি বলেন, চলিত মৌসুমে শুরু থেকে খরা ছিল। ফলে বোরোর আবাদ ভাল হয়েছে। বিঘা প্রতি ২০-২২ মণ হারে ফলণ হচ্ছে। এতে চাষিরাও মহাখুশি। তবে উপজেলায় মাঠে মাঠে কৃষকরা শুকনা খড়ের আশায় বোরোধান কেটে জমিতে শুকাতে দিয়েছেন। কিন্তু গত দুই দিন এ এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে।
মাঠের ওইসব শুকাতে দেওয়া ধান ভিজে গেছে। শুকনা ধান ভিজে গেলে ধানের রঙ (কালার) খারাপ হয়। বাজারে রঙ খারাপ হওয়া ধানের দাম কম হয়। তিনি বলেন, ভিজে যাওয়া এসব ধান তুলতে আবার শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত দাম দিয়েও শ্রমিক মিলছে না। ফলে অনেকটাই দুচিন্তায় রয়েছে কৃষকরা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসিউর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলায় প্রায় ৫০ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়েছে। বর্তমানে শুকনা খড় অনেক মূল্যবান। এ কারণে অনেক জায়গা শুকনা খড়ের জন্য কৃষকরা ধানকেটে জমিতে শুকাতে দিয়েছেন। প্রাকৃতিক সমস্যা কারো হাত থাকে না। মাঠে ভিজা ধান পড়ে রয়েছে সে ধান দ্রুত ঘরে তুলে শুকাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রোগ বালাই তেমনটা না থাকায় এবার বোরোর ভাল ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি ২০ মণের অধিক ধান কৃষকরা পাচ্ছেন। ফলে লাভবান হবেন কৃষকরা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.