রাজশাহীর আদালতে চলতি বছরে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা অর্থাৎ জুডিশিয়াল সেপারেশন এর পর দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে।মামলা নিষ্পত্তির হারে নতুন চমক দেখিয়েছে রাজশাহীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি। চলতি বছরে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১০৪ শতাংশ। গত এক বছরের তুলনায় এটি ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়েছে । গত ১১ মাসে দায়ের হয়েছে নয় হাজার ৪৭৪টি এবং নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ হাজার ২০৭টি ।

আজ সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত রাজশাহী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাসিক পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে এ তথ্য জানানো হয়। আদালতে মামলা দায়ের মানে বছরের পর বছর ঘোরাঘুরি ও হয়রানি। কিন্তু আদালতে এসে মানুষ এখন স্বল্প সময়ে প্রতিকার পাচ্ছেন। আর এটা সম্ভব হচ্ছে বিকল্প বিরােধ নিষ্পত্তি তথা আপোসের মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি ।

কনফারেন্সে জানানো হয়, রাজশাহী জেলার ১০টি আদালতে চলতি বছর মোট মামলা হয়েছে তিন হাজার ৫৩৫টি। এ বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে তিন হাজার ৬৭১টি মামলা। তবে এখনো বিচারাধীন রয়েছে তিন হাজার ৭১৫টি মামলা। নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর সাজা হয়েছে ২২ ভাগ আসামীর। আর খালাস পেয়েছেন ৭২ ভাগ।

মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে রাজশাহীর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান তালুকদার সকল ম্যাজিস্ট্রেট, প্রসিকিউটর ও সংশ্লিষ্টদের মামলার দ্বিগুণ নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেন। তিনি জানান, বিচারের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে এবং সংশ্লিষ্ট সকল অফিসের সহযোগিতার হাত অব্যাহত রাখলে আগামীতে নিষ্পত্তি দ্বিগুণ হারে বাড়বে।

সভার ফোকাল পার্সন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম তার উপস্থাপনায় বলেন,  গত এক বছরে যে মামলা গুলো নিষ্পত্তি হয়েছে তার অধিকাংশই আপোষের ভিত্তিতে স্বল্প সময়ে ৬-৭ মাসের ব্যাবধানে নিষ্পত্তি হয়েছে। গত এক বছরে রাজশাহীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীতে ১ হাজার ৩৪১টি মামলা আপোষের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে যৌতুক এবং পারিবারিক নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা ৭৩১টি। মামলাগুলোর মধ্যে ৫৭১টিই আপোসে নিষ্পত্তি হয়েছে। ২৫২ জন দম্পত্তি আদালতের মধ্যস্থতায় আপোষের ভিত্তিতে সংসার করছে। ৩৪১টি মামলায় অসহায় নারীরা  তিন কোটি ৭০ লাখ ১১ হাজার ৭২৩ টাকা বুঝে পেয়েছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে যৌতুকের মামলা আপোষযোগ্য হওয়ার কারণে।

অনুষ্ঠানে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার পালসার গ্রামের একটি যৌতুক মামলার বাদী সোনিয়া খাতুন জানান, ‘আমার বাবা-মার সাথে সম্পর্ক খারাপ থাকার কারণে পালিত পিতার কাছে মানুষ হই। পালিত বাবা আমার চার বছর আগে বিয়ে দেয়। বিয়েরপর থেকেই স্বামী নানা রকম নির্যাতন করতে থাকলে আমি আদালতে এ বছরে ফেব্রুয়ারী মাসে মামলা দায়ের করি। ৪/৫টি তারিখের মধ্যেই আদালত আমাদের মামলাটি আপোষ করে দেয়। আমি আপোষের মাধ্যমে দুই  লাখ ৬০ হাজার টাকা বুঝে পেয়েছি। এ জন্য আমি বিচারক, উকিলসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।

কনফারেন্স সূত্রে আরও জানা যায়, গত এগারো মাসে মামলা দায়ের হয়েছে নয় হাজার ৪৭৪টি এবং নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ হাজার ২০৭টি। গত বছরে মামলা দায়ের হয়েছে ৯৯ হাজার ৩১৯টি। আর নিষ্পত্তি হয়েছে এক লাখ  এক হাজার ৪০৩টি।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল অধিকারী, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল আমিন ভুঁইয়া, ম্যাজিস্ট্রেসীর অন্যান্য ম্যাজিস্ট্রেট, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ প্রমুখ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.