রাজশাহীতে অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক: কেউ ফুটপাতের খাবারের দোকানি, কেউ ছিনতাইকারী, কেউ মাদক ব্যবসায়ী। হঠাৎ করেই তারা ‘সাংবাদিক’ বনে গেছেন। নামসর্বস্ব অনলাইন আর নিজেদের ফেসবুকের টাইমলাইনে কিছু লেখা পোস্ট করেই তারা নিজেদের সাংবাদিক দাবী করে বসেন। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা আর সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজিই এদের প্রধান কাজ।
এদের বিরুদ্ধে এবার সোচ্চার হয়েছেন রাজশাহীর পেশাদার সাংবাদিকরা। তাদের গ্রেফতার আর প্রশ্রয়দানকারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে সাংবাদিকরা সড়ক অবরোধ করেছেন।
আজ রবিবার (৩১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় নগরীর অন্যতম প্রধান ব্যস্ততম এলাকা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরে রাস্তা অবরোধ করে সাংবাদিকরা অবস্থান নেন। বিকাল পৌনে ৫টায় এ অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
ঘটনার সূত্রপাত আজ রবিবার (৩১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেস ক্লাব নামের একটি ভুঁইফোঁড় প্রেস ক্লাবের ব্যানারে কয়েকজন কথিত সাংবাদিক মানববন্ধন করতে যান শহীদ কামারুজ্জামান চত্বরে। সম্প্রতি কয়েকজন কথিত সাংবাদিক এ প্রেস ক্লাব গঠনের ঘোষণা দেন। এরা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব ও আঞ্চলিক শিক্ষা ভবনের পরিচালক এবং সহকারী পরিচালকের অপসারণের দাবীতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
এসব কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সাংবাদিক পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি চাঁদা চাইতে এসেছিলেন। তা না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের আয়োজন করা হচ্ছে। মানববন্ধন করা কোনো সাংবাদিকদের কাজ নয় জানিয়ে তারা রাজশাহীর পেশাদার সাংবাদিকদের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কারা মানববন্ধন করছেন তা দেখতে ঘটনাস্থলে যান রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন সাংবাদিক। রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকতার নামে এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য আয়োজকদের বলেন। আর তখনই পুলিশের সামনেই রফিকুল ইসলামের ওপর চড়াও হন কথিত সাংবাদিকরা। তাকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে সিনিয়র ফটোসাংবাদিক সেলিম জাহাঙ্গীর, স্থানীয় সাংবাদিক রাজু আহমেদ এবং কাবিল হোসেনকেও লাঞ্ছিত করা হয়।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা জানান, মাজহারুল ইসলাম চপল, আবু কাউসার মাখন, হারুন, সুমন, রাজন, সোনা, লিয়াকত, রেজাউল করিম, রকি ও ফারুক হোসেনসহ বেশকিছু কথিত সাংবাদিক তাদের ওপর হামলা চালান। এ বিষয়ে তারা মামলা দায়ের করবেন।
এদিকে চার সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে বেলা ১১টায় কামারুজ্জামান চত্বরে রাস্তায় বসে পড়েন ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। সাংবাদিকরা হামলাকারী কথিত সাংবাদিকদের গ্রেফতার এবং নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণের প্রত্যাহারের দাবীতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
দুপুরের দিকে পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সাংবাদিক নেতাদের এ বিষয়ে নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের সঙ্গে বসার অনুরোধ জানান।
আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপন, রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান জনি, প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আনোয়ার আলী হিমুসহ সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
পুলিশ কমিশনার দাবী মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সাংবাদিকরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান।
এদিকে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ কমিশনারের কাছে গেলেও অন্য সাংবাদিকরা সড়ক অবরোধ করেই ছিলেন। প্রতিনিধি দল ফিরে আসার পরও ওই আন্দোলন চলছিল। আজ রবিবার (৩১ অক্টোবর) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, হামলাকারী কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক বলেন, হামলাকারী অন্যরাও গ্রেফতার হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আর পুলিশ কমিশনার বোয়ালিয়ার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণকে প্রত্যাহার করতে তিন দিন সময় চেয়েছেন। আমরা ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে ওসি প্রত্যাহার না হলে আগামী বুধবার দুপুর ১২টায় বোয়ালিয়া থানা ঘেরাও করা হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো: মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.