যথাস্থানে সিটি মেয়র এবং জাতীয় পার্টির জন্য আসন বরাদ্দ না রাখায় রংপুর জেলা প্রশাসনের ইফতার মাহফিল বয়কট করলো জাতীয় পার্টি : ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা

রংপুর ব্যুরো:  রংপুর: সিটি মেয়রকে যথাস্থানে আসন না দেয়া এবং জাতীয় পার্টির জন্য আসন বরাদ্দ না রাখায় রংপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিল বর্জন করেছে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি।

আজ বুধবার সন্ধায় সার্কিট হাউজে এই ইফতার মাহফিল বর্জন করেন তারা। খবর পেয়ে ইফতার মাহফিলে উপস্থিত না হয়েই ফিরে যান সিটি মেয়র। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।

আজ বুধবার সার্কিট হাউজের ভেতরের পূর্ব পার্শ্বের মাঠে প্যান্ডেল টাঙ্গিয়ে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে রংপুর জেলা প্রশাসন। সেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃত্বাস্থানীয়, বিশিষ্টজন ছাড়াও সাংবাদিকদের আমন্ত্রন জানানো হয়।

ইফতার মাহফিলে আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন শ্রেনির মানুষের জন্য আসন বিন্যাস করে কাগজের নেমপ্লেট দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে জাতীয় পার্টির জন্য কোন নির্দিষ্ট আসন বিন্যাস করে নেমপ্লেট দেয়া হয় নি।

সন্ধা পৌনে ৬ টার দিকে সার্কিট হাউজে জাতীয় পার্টির মহানগর সেক্রেটারী এসএম ইয়াসির এবং জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি, সহযোগি ও অঙ্গ সংগঠনের বেশ কিছু নেতা কর্মী ইফতার পার্টিতে অংশ নিতে সার্কিট হাউজে আসেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের নামে আসন বরাদ্দ থাকলেও জাতীয় পার্টির জন্য কোন আসন বরাদ্দ ছিল না।

আয়োজকদেও কাছে এর কারণ জানতে চান এসএম ইয়াসির ও হাজী আব্দুর রাজ্জাক। আয়োজকরা কোন সদুত্তর দিতে না পারায় তারা ইফতার মাহফিল বয়কট করে সার্কিট হাউজ ত্যাগ করেন।

জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিটি মেয়র  জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগর সভাপতি ওই ইফতার পার্টিতে আমন্ত্রিত ছিলেন। তিনি সেখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য ডিসির মোড় পর্যন্ত গিয়েছিলেন।

কিন্তু নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠান বয়কট করায় তিনিও অনুষ্ঠান বয়কট করে আর সেখানে যান নি। এনিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ ব্যপারে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক বিটিসি নিউজকে জানান, জেলা প্রশাসন আমাদের ইনভাইট করেছিলেন। আমরা আন্তরিকভাবে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি সকল রাজনৈতিক দল এবং শ্রেনির মানুষের জন্য আলাদ আসন ও নেমপ্লেট দেয়া হয়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টিও জন্য কোন আসন কিংবা নেমপ্লেট দেয়া হয় নি।

বিষয়টি মেয়র মহোদয়ের কানেও গেছেন। রংপুরে জাতীয় পার্টিকে জেলা প্রশাসন এভাবে অসম্মান করবে সেটা আমরা ভাবতে পারি নি। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ইফতার মাহফিল বয়কট করেছি। এর মাধ্যমে আমরা জেলা প্রশাসনকে সিগনাল দিতে চাই, ডেকে এভাবে অসম্মান না করে না ডাকলেই ভালো হতো। এ ঘটনায় নেতাকর্মীরা ভীষন ক্ষুব্ধ। বিষয়টি তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তদন্ত করার দাবি জানান।

এ ব্যপারে জাতীয় পার্টির রংপুর মহানগর সেক্রেটারী এসএম ইয়াসির বিটিসি নিউজকে জানান, বর্তমান রংপুরের ডিসি সব সময় জাতীয় পার্টিসম্মান করে আসছেন। রাষ্ট্রীয় কোন অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিয়ে তিনি জাতীয় পার্টির নেতৃস্থানীয়দের নিচে রাখেন। উপরে আওয়ামীলীগ নেতাদের রাখেন। ইফতার মাহফিলে তিনি বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান অতিথি বানিয়েছেন। আর রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়ররের সিট রেখেছেন একেবারেই শেষে।

সেখানেও আমরা বিষয়টি প্রতিবাদ করার পর তার নেমপ্লেটটি বিভাগীয় কমিশনারের পাশে লাগানো হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। মেয়র প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া না হলেও তিনি পদমর্যাদায় তেমনি। তাকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছুটি নিতে হয়। অথচ বর্তমান ডিসি বার বার তাকে বিভিন্নভাবে অসম্মান করছেন।

আমাদেও নেতাকে এভাবে অসম্মান করা এবং জাতীয় পার্টির জন্য কোন আসন বরাদ্দ না রাখায় আমরা ইফতার মাহফিল বয়কট করেছি। বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে। তিনি বলেন, বিএনপির এজেন্ট হিসেবে পরিকল্পিতভাবে এই ডিসি জাতীয় পার্টির সাথে এ ধরনের আচরণ করে রংপুরের রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলাটে করছেন কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।

এ ব্যপারে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বিটিসি নিউজকে জানান, আমি ইফতার মাহফিলে ইনভাইটেড হয়ে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে কাচারী বাজাওে গিয়ে সিওর হলাম আমার স্থান সঠিক জায়গায় রাখা হয় নি। সেকারনে নিজের আত্মসম্মান বোধ ঠিক রাখতেই আমি ইফতার মাহফিলে না গিয়ে ফিরে এসেছি।

আমার নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে ইফতার মাহফিল বয়কট করেছে। তিনি বলেন, সরকার আমলাদের গুরত্ব দেয়ার কারনে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে জনপ্রতিনিধিদের নানাভাবে অসম্মানিত করছে। এটা ঠিক নয়।

এ ব্যপারে জানতে জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তার সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায় নি।

তবে জাতীয় পার্টি বয়কট করলেও মেয়র ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতিতে শান্তিপুর্নভাবে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভাগীয় কমিশনার জয়নুল বারী, ডিআইজি দেবদাস ভট্রাচার্য, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলীম মাহমুদ, র‌্যাব-১৩ এর অধিনায়ক, বিজিবির সেক্টর কমান্ডার,

ডিসি এনামুল হাবীব, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, জেলা ও  মহানগর আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, চেম্বার অব কমার্স, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সামরিক ও বেসামরিক বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.