যথাযথ মর্যাদায় রাজশাহীর তানোরে ৭ মার্চ বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক দিবস পালিত

বিশেষ প্রতিনিধি: আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ” বাঙালি জাতির দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) এক বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।

তার’ই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার (০৭ মার্চ) ২০২০ ইং রাজশাহীর তানোর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে দিবসটি পালন করেন সকল প্রতিষ্ঠান সমূহ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর “মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যশনাল রেজিস্টার” এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভের অসামান্য অর্জনকে যথাযোগ্য ভাবে উদযাপনের লক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আজ শনিবার সূর্যদয়ের সাথে সাথে উপজেলা চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ মাইকে বাজানো মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। বেলা ১০ টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, বেলা ১০.২০ মিনিটে সমবেতকন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনা। বেলা ১০.৩০ মিনিটে বিশাল এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা উপজেলা পরিষদ চত্বর হতে শুরু করে থানার মোড় হয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে শেষ হয়। বেলা ১১.০০ টায় ৭ মার্চের ভাষণের উপর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতা। বেলা ১১.৩০ মিনিটে আলোচনা সভা এবং বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন উপজেলা প্রশাসন।

তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী এমপির থাকার কথা থাকলেও তিনি দলিও ভাবে অনুষ্ঠানটি কেন্দ্রে পালন করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাকিবুল হাসান, আব্দুল করিম সরকারি কলেজের অধ্যাক্ষ মোঃ হাবিবুর রহমান মিয়া, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া সরদার ও ভাইস চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমিরুল ইসলাম, উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার ফাতেমা বেগম, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মতিনুর রহমান, তানোর বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম। এ ছাড়াও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলা পরিষদ, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক অংঙ্গ সংগঠনের নেত্রীবৃন্দরাসহ সুশীল সমাজের নেত্রীবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, এ দিনে লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে এই মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাত্তরের ৭ মার্চ দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণ পরবর্তীতে স্বাধীনতার সংগ্রামের বীজমন্ত্র হয়ে পড়ে। একইভাবে এ ভাষণ শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলিলই নয়, জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় বিধানের একটি সম্ভাবনাও তৈরি করেছে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।

একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর এই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিক-নির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর এই বজ্রনিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুগ-যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাংখিত মুক্তির লক্ষ্যে।

ধর্মীয় চিন্তা, সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা ও দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিসত্ত্বা, জাতীয়তাবোধ ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের যে ভীত রচিত হয় তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ছাত্র-কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.