মৌলভীবাজারে লোডশেডিং-লবণ সংকটে কয়েক হাজার চামড়া ফেলতে হলো নদীতে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারে কোরবানির পশুর কয়েক হাজার চামড়া নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, লোডশেডিং আর লবণ সংকটের কারণে এমনটা হয়েছে।
আজ সোমবার (১১ জুলাই) সকালে সরেজমিন দেখা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের বালিকান্দি গ্রামের চামড়া ব্যবসায়ীরা ঠেলাগাড়ি বোঝাই করে হাজার হাজার চামড়া মনু নদীতে ফেলে দিচ্ছেন।
ঘটনাস্থলে কথা হলে বালিকান্দি গ্রামের চামড়া ব্যবসায়ী মজবিল মিয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা চামড়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাতের কাজ করতে পারিনি। তাই আমি এক হাজার চামড়া নদীতে ফেলে দিচ্ছি।
চামড়া শ্রমিক আল-আমিন বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদ আসলে লবণের দাম বেড়ে যায়। এ বছর বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। রাতে ৪/৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চামড়া প্রক্রিয়াকরণ করতে পারিনি। এতে আমি মালিকের ১ হাজার ২০০ চামড়া নদীতে ফেলে দিচ্ছি।
কথা হয় গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল্লাহ মিয়া, আলমগীর মিয়া ও সুন্দর মিয়ার সঙ্গে। তারা বলেন, চামড়া আমাদের গ্রামের ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা। লোকসানে পড়ে এ ব্যবসা অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন। হাতেগোনা কয়েকজন কোনোমতে টিকে আছেন।
বালিকান্দি চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বিটিসি নিউজকে বলেন, ঈদ আসলে আমরা আশা করি ব্যবসা করবো। কিন্তু একেক বছর একেক সমস্যা দেখা দেয়। ট্যানারি সিন্ডিকেট তো আছেই, তার মধ্যে এবার লবণের দাম বেড়ে প্রতি বস্তা ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর সঙ্গে লোডশেডিং যুক্ত হয়ে আমাদের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা চামড়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাত করতে পারিনি। আমার প্রায় ১ হাজার ২০০ চামড়া নষ্ট হয়েছে। পরিবেশ নষ্ট হওয়ার ভয়ে এগুলো নদীতে ফেলে দিতে হয়েছে।
বালকান্দি গ্রামের চামরা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজ মো. আনোয়ার বিটিসি নিউজকে বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী। এ ব্যবসা করে আমরা পথের ভিখারি হয়ে গেছি। ডিসি সাহেব আমাদের নিয়ে মিটিং করেছেন। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম, লবণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, সব সমস্যার সমাধান করবেন। শেষ পর্যায়ে আমাদের দাবি ছিল, যেহেতু সারা জেলার চামড়া আমাদের গ্রামে এসে জমা হয় তাই আমাদের এখানে যাতে বিদ্যুৎ থাকে। মেয়র ও ডিসি সাহেব তিনদিন নিরবচ্ছিন্ন বালিকান্দি গ্রামে বিদ্যুৎ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা রক্ষা করতে পারেননি। তাই চামড়া নষ্ট হয়েছে। এ নষ্ট চামড়া নদীতে ফেলে দিতে হচ্ছে।
চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সদস্য ও বালকান্দি গ্রামের চামরা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শওকত আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা ধরে রাখার জন্য আমরা ব্যবসা করি। আমাদের অনেক টাকা ঢাকা ও নাটোরের ট্যানারি মালিকরা আটকিয়ে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, মৌলভীবাজার পৌর মেয়র ও জেলা প্রশাসকের অনুরোধে এবছর আমরা ২০/২৫ হাজার চামড়া ক্রয় করেছি। কিন্তু চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চামড়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাত করা যায়নি। এতে প্রায় পাঁচ হাজার চামড়া নষ্ট হতে পারে।
লোডশেডিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করে মৌলভীবাজার পৌর মেয়র ফজলুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। আমাদের সহযোগিতায় অনেকটাই রক্ষা হয়েছে। তবে লোডশেডিংয়ের কারণে কিছু চামড়া নষ্ট হয়েছে।
তবে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মো. মেহদী হাসান তালুকদার বিটিসি নিউজকে বলেন, রাতে বজ্রপাত ও ঝড়-বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ লাইনে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বালিকান্দি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
এ বিষয়ে কথা বলতে আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েকবার কল করা হলেও জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর মৌলভীবাজার প্রতিনিধি মো. সাহেব আলী। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.