মোমিনুল’র দশম সেঞ্চুরি, লিটন’র অর্ধশত

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: সাগরিকায় চলমান টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের শতক পেয়েছেন টাইগার অধিনায়ক মোমিনুল হক। এতে করে টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি পেলেন ২৯ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। একই সাথে ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ অর্ধশতক পেয়েছেন লিটন দাস।
দিনের শুরুতে চতুর্থ দিন ব্যাট করতে নেমে মুশফিকের বিদায়ে কিছুটা ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। তবে তা সামলে উঠেন দুই ব্যাটসম্যান মোমিনুল ও লিটন। দুজনের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের উপর ভর করে এখন পর্যন্ত ৩৫২ রানের লিড পেয়েছে লাল সবুজরা।
ক্রিজে মোমিনুল আছেন ১০০ রান নিয়ে। অপরপ্রান্তে অর্ধশক তুলে নেয়া লিটন আছেন ৫৯ রান নিয়ে। এখন পর্যন্ত দলের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৮৫ রান।
এর আগে আজ শনিবার চতুর্থ দিনে ব্যাট করতে নেমে শুরুর ব্যাটিং বিপর্যয়ের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই বিদায় নেন মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় ইনিংসে এখন পর্যন্ত সফল ক্যারিবিয় বোলার কর্নওয়ালের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে মাত্র ১৮ রানে বিদায় নেন মিস্টার ডিপেন্ডাবল।
এর আগে গতকাল শুক্রবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। প্রথম ইনিংসের ১৭১ রানের বড় লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ শুরুতে বড় ধাক্কা খায়। শূন্যরানে ফেরেন অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল। শুধু তিনি নন, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হয়েছেন নাজমুল হোসাইন শান্ত ও সাদমান ইসলামও।
তামিমের বিদায়ের পরের বলেই শূন্য রানে ফেরেন শান্ত। এতে করে মাত্র এক রানে দুই উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। এক পর্যায়ে ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চরম বিপাকে পড়ে লাল সবুজরা।
তবে ধাক্কা সামলে নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেন অধিনায়ক মোমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। এদিন শেষে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৪৭ রান। দলের লিড বেড়ে হয় ২১৮ রান। আজ চতুর্থ দিনে ব্যাট করতে নেমে আবারও হোচট খেল টাইগাররা। বিদায় নিয়েছেন মুশফিক।
এর আগে তৃতীয় দিনের শুরুতে তাইজুলের আঘাত দিয়ে দিন শুরু করে টাইগাররা। এরপরই ক্যারিবিয় শিবিরে হানা দেন নাঈম হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। আগের দিনের ৭৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা ক্যাবিয়রা শুরুতেই হারায় রুমা বোনার (১৭)-কে। এরপর ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে মাঠ ছাড়া করেছেন নাঈম। ব্যক্তিগত ৭৬ রানের মাথায় নাঈমের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান।
এরপরই আঘাত হানেন মিরাজ। তার অফ ব্রেক বলে এলব্লিউডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন কাইল মায়ার্স। বিদায়ের আগে ৭ বাউন্ডারিতে ৪০ রান করেন তিনি।
এরপর জসুয়া দ্য সিলভা ও ব্লাকউড কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দলীয় ২৫৩ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৪২ রানে সিলভার বিদায়ের পর আর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি সফরকারী ব্যাটসম্যনরা। তবে অর্ধশক তুলে নিয়েছেন ব্লাকউড। মিরাজের বলে বিদায় নেয়ার আগে ৯ বাউন্ডারিতে ৬৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন এই ক্যারিবিয় ব্যাটসম্যান।
তার বিদায়ের পর মাত্র ৬ রান যোগ করতে নেই আরও ৩ ব্যাটসম্যান। ফলে ২৫৯ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা।
এর আগে মেহেদী মিরাজের প্রথম শতকে চড়েই ক্যারিবিয়দের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪৩০ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০৩ রানে আউট হন ২৩তম ম্যাচ খেলা এই তরুণ। এদিন জবাব দিতে নেমে একমাত্র পেসার মুস্তাফিজের জোড়া আঘাতে শুরুতেই দুই উইকেট হারায় সফরকারীরা।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই ক্যারিবিয় শিবিরে আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। চতুর্থ বলটি ওপেনার জন ক্যাম্পবেলের ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে প্যাডে আঘাত হানলে জোরালো আবেদন তোলেন ফিজসহ ফিল্ডাররা। যাতে আম্পায়ার সাড়া না দেয়ায় রিভিউয়ের স্মরণাপন্ন হন মোমিনুল, আর তাতে সফলও হয় বাংলাদেশ। মাত্র ৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন বাঁহাতি ওপেনার।
এর পরের বলেই ক্রিজে নতুন আসা শেন মোসেলিকে লেগ বিফোর দেন আম্পায়ার। তবে এ যাত্রায় রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান এই বাঁহাতি। ৯ ওভারে উইন্ডিজের সংগ্রহ এক উইকেটে ২০ রান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। সেই মুস্তাফিজের আঘাতেই ফের আরেকবার রিভিউ নিয়েও রেহায় মেলেনি মোসেলির। সাজঘরে ফেরেন মাত্র ২ রানে। যাতে ২৪ রানেই দ্বিতীয় উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা।
এর আগে ইনিংসের দ্বিতীয় দিন সকালের শুরুতেই লিটন দাস আউট হলে ক্রিজে আসেন মিরাজ। সপ্তম উইকেটে সাকিবের সঙ্গে গড়েন ৬৭ রানের ইনিংসসেরা জুটি। লাঞ্চের ঠিক আগেই সাকিবের আউটের মধ্যদিয়ে ভাঙ্গে এই জুটি। সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও আক্ষেপ নিয়ে সবাইকে হতাশ করে ফেরেন সাকিব।
তবে মধ্যাহ্ন বিরতির পরে মাঠে ফিরেই অর্ধশতক হাঁকান মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারে যা ছিল তার তৃতীয় ফিফটি। অর্ধশতক পূরণ করার পরেই রাকীম কর্নওয়ালের ওপর চড়াও হন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ডাউন দ্য উইকেটে এসে চার মারার পরের বলেই আবার শট হাঁকিয়ে লং অনে তালুবন্দী হয়েছিলেন, তবে ফিল্ডার ভারসাম্য হারিয়ে বলটি ধরে রাখতে না পারায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান মিরাজ।
সাকিবের ফেরার পরে মিরাজকে ভালো সমর্থন দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। বেশ ধৈর্য্যের সাথে রক্ষণাত্মক ব্যাটিং করেছেন তিনি। তার ৭২ বলের ইনিংসটির সমাপ্তি ঘটে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে উইকেটরক্ষক জসুয়া ডা সিলভার তালুবন্দী হয়ে। তাইজুলের ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান। তার আগে মিরাজের সাথে গড়েছিলেন ১১৭ বলে ৪৪ রানের জুটি।
তাইজুলের বিদায়ের পরে মিরাজের সঙ্গী হন আরেক তরুণ নাঈম হাসান। মিরাজ ও নাঈমের জুটিতে বেশ দ্রুত রান উঠতে থাকে। এরইমাঝে কর্নওয়ালের বলে নাঈমকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে দেখা যায় বলটি স্ট্যাম্পে আঘাত হানেনি, ফলে সেই যাত্রায় বেঁচে যান নাঈম।
দ্রুত রান তুলতে থাকা নাঈম পার্ট টাইম বোলার নক্রুমাহ বনারের কাছে পরাস্ত হন। তার ব্যাট ছুঁয়ে বল স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। ২৪ রান করা নাঈম ফিরলেও সঙ্গীর অভাবে নিজের ওপর আস্থা হারাননি মিরাজ। একপ্রান্ত আগলে রেখে বাংলাদেশকে ঠিকই এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি পৌঁছে যান নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
তৃতীয় ফিফটিকে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে রূপ দেন এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। শেষ ম্যান মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। সেঞ্চুরির পরে বেশ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন এবং লং অনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তার আগে মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ১০৩ রান। ২২৪ মিনিট ব্যাপ্তি তার ১৬৮ বলের ওই অনবদ্য ইনিংসে ছিল ১৩টি দৃষ্টিনন্দন চারের মার। যাতে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৩০ রান।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই সাজঘরে ফিরেছিলেন লিটন দাস। তিনি করেন ৬৭ বলে ৩৮ রান। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে সাকিবও আউট হয়ে যান। তার ব্যাট থেকে আসে ৬৮ রান। সাকিবের ১৫০ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৫টি চার।
প্রথম দিনে বাংলাদেশের ৫ জন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছিলেন। দিনের শুরুতেই ৯ রান করে কেমার রোচের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছিলেন তামিম ইকবাল। রান আউটে কাটা পড়ে শান্ত ফিরেছিলেন ২৫ রানে। মুমিনুল, সাদমান ও মুশফিক দুইজনেই ওয়ারিকানের শিকার হয়েছিলেন। যদিও সাদমানের আউটটি পরে দেখা যায় প্রকৃতপক্ষে আউট হতো না। সাদমান ৫৯, মুশফিক ৩৮ ও মুমিনুল করেছিলেন ২৬ রান।
সফরকারী দলের বোলারদের মধ্যে এই ইনিংসে সবচেয়ে সফল ছিলেন জোমেল ওয়ারিক্যান। ৪৮ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১৩৩ রানের বিনিময়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট তুলে নেন এই বাঁহাতি স্পিনার। এছাড়া ১১৪ রান দিয়ে দুটি উইকেট পেয়েছেন আরেক স্পিনার আলোচিত বিশালকায় সবচেয়ে ওজনদার ক্রিকেটার কর্নওয়াল। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.