মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লেশমাত্র অবশিষ্ট নেই : মির্জা ফখরুল

 

ঢাকা প্রতিনিধি: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা ঐক্যের কথা বলি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি- সেই চেতনার লেশমাত্র অবশিষ্ট নেই এখন। কিছু নেই এখন অবশিষ্ট।’
দেশে কঠিন দুঃসময় চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটা দুঃসময়, কঠিন সময়… আমরা অতিক্রম করছি। রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহভাবে আমাদের আক্রমণ করেছে। এখানে বিচারব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ হয়ে গেছে। অর্থনীতিকে পুরোপুরিভাবে নিজেদের মতো করে তারা সেখানে লুটপাট চালাচ্ছে। আজ রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ধবংস করা হয়েছে, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একেবারে উপড়ে ফেলা হয়েছে।’
শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে নাগরিক স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন তিনি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নাগরিক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যার জন্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী লড়াই করছিলেন, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি আবার আমাদের ফিরিয়ে আনতে হয়, বাংলাদেশকে যদি সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমরা পরিণত করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে এখন অবশ্যই সব নতুন করে চিন্তা করে নতুনভাবে আবার বলীয়ান হয়ে বেরিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, `কে কী বললো সেটা ভাবার দরকার নেই, আমাদের মধ্যে যে আশা, যে আকাঙ্ক্ষা আছে; আমরা যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, যারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছি, যারা গুম হয়েছে তাদের সবাইকে সেই সম্মানটুকু দেওয়ার জন্য আমাদের আজ একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে… আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।’
‘আজ এই ভয়াবহ দুঃশাসনে যারা আমাদের সব ভালো অর্জন কেড়ে নিয়েছে, আমাদেরকে প্রতিমুহূর্তে পঙ্গু করে ফেলেছে, আমাদেরকে পুরোপুরি একটা দাসে পরিণত করছে- সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’
মির্জা ফখরুল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এই দুঃশাসনের অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমরা হাত-পা ছুড়ছি। আমরা যারা রাজনীতি করি, রাজনৈতিক কর্মী আছি তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। আমি নিজেই নির্বিচারে নির্যাতিত হচ্ছি, অনেকে তাদের জীবন দিচ্ছেন…প্রাণ দিচ্ছেন। তারপরও এই দানবকে সরানো যাচ্ছে না…এটা বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আলাপ হচ্ছিল… একজন কৌশলের কথা বলেছেন। আসলে এখানে প্রয়োজন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। সব নাগরিক যারা দেশকে ভালোবাসেন, সব রাজনৈতিক দল যারা দেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করতে চায় তাদের এখন সবাইকে এক হয়ে সোচ্চার কণ্ঠে শুধু রাজপথে বেরিয়ে নয়, সমগ্র রাষ্ট্র যন্ত্রকে ঝাঁকি দিতে হবে। তাহলেই হয়তোবা ডা. জাফরুল্লাহর যে স্বপ্ন সেই স্বপ্নকে আমরা কিছুটা বাস্তবায়িত করতে পারবো।’
আমরা একটা ভয়াবহ শাসনের মধ্যে পড়েছি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবলীলায় এখানে হত্যা করা হয়, খুন করা হয়…এই যে সানজিদা ইসলাম তার ভাইকে গুম করেছে প্রায় ১২ বছর পার হয়ে গেছে…..তার ভাইসহ ৭/৮ জন…। আমাদের সেই ছোট্ট মেয়েটার বাবা ১২/১৩ বছর হলো এখন পর্যন্ত ফিরে আসে না। যখন এই সানজিদা এসব কথা শোনে তখন তার মনের অবস্থা কী দাঁড়ায়… রাষ্ট্রের ওপর তার যে আস্থা সেটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?’
ডা. জাফরুল্লাহ সারাজীবন দেশের জন্য যুদ্ধ করে গেছেন উল্লেখ করে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাস নাইম বাবু। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান, সুজনের বদিউল আলম মজুমদার, ব্রতীর শারমিন মুরশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, এফবিবিআইয়ের আবদুল হক, মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ‘মায়ের ডাক’ এর সানজিদা ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়া জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সভাপতি জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, মিয়া মশিউজ্জামান এবং প্রয়াত জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মেয়ে বৃষ্টি চৌধুরী স্মরণ সভায় বক্তব্য দেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মো: মাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.