মা ও দুই মেয়ের লাশ উদ্ধার রাজধানীতে

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: মা ও দুই মেয়ের লাশ রাজধানীথেকে উদ্ধার করেছে পুলি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দারুস সালামে সরকারি কোয়ার্টারের একটি ভবন থেকে নিহত মা ও মেয়েদের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত মায়ের নাম জেসমিন আক্তার (৩৫) ও দুই মেয়ের নাম হাসিবা তাহসিন হিমি (৯) ও আদিবা তাহসিন হানি (৫)। নিহত জেসমিন কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের কোষাধ্যক্ষ। তার স্বামী হাসিবুল হাসান জাতীয় সংসদে চাকরি করেন। পুলিশের ধারণা, দুই মেয়েকে হত্যা করে জেসমিন আত্মঘাতী হয়েছেন।

ভাই শাহিনুর ইসলাম জেসমিনের সঙ্গে থাকেন। তিনি চাকরি খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বোনের মাইগ্রেনের সমস্যা ছিল। গত মাসেও ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল। সবসময় দুশ্চিন্তা করতো। মানসিক চাপে থাকতো।’ তিনি বলেন, ‘৩টার দিকে বাসায় ঢুকে দেখি রুম আটকানো। টিভির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।’ এরপর তিনি আর ডাকাডাকি করেননি। পরে বাইরে চলে যান। সন্ধ্যা ৬টায় ফিরে তখন দেখতে পান দুলাভাই আছেন। রুমের দরজা তখনও বন্ধ। তার দুলাভাই ৫টার দিকে বাসায় ফেরেন। তখন তাদের সন্দেহ হয়। আবার কি আগের মতো ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন? ডাকাডাকি করেন। দুলাভাই দরজার ফাঁক দিয়ে রক্ত দেখতে পান। এরপর তারা দরজা ভাঙেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ডিএমটির জয়েন্ট কমিশনার (ক্রাইম) শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের জানান, তারা ধারণা করছেন, দুই সন্তানকে হত্যা করে জেসমিন নিজে আত্মহত্যা করেছেন। রুমের দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল। তবে এ ঘটনার পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনাস্থল থেকে একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। জেসমিনের ভাই শাহিনুর ইসলাম ধারণা করেন, আনুমানিক বিকাল ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। জেসমিনের খালাতো বোন রেহানা পারভীন জানান, তার আপা ভারতসহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মাইগ্রেনের চিকিৎসা করাতো। মানসিক রোগী ছিল না। তবে মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত ছিল। সন্তানদের জন্য দুশ্চিন্তা করতো।

হাসিবুল হাসানের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের ভজনপুর গ্রামে। জেসমিনের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে।
পুলিশ জানায়, জেসমিনের গলা ও দুই হাতের কব্জি কাটা। পেটে ৮-১০টি আঘাত আছে। বড় মেয়ে মিহির বুকে তিনটি ছুরির আঘাত, হাতের কব্জি কাটা ও গলা জবাই করা। আর ছোট মেয়ে হানির পেটে একটাই ছুরির আঘাত। তার নাড়িভুড়ি বের হওয়া। রাত সাড়ে ১০টার পর ঘটনাস্থলে যান পরিদর্শক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটের একটি টিম।

পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃতি করে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘জেসমিন আক্তারের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, কিছুদিন আগে ভারত থেকে চিকিৎসা করিয়ে আনা হলেও কোনো উন্নতি হয়নি। পাশাপাশি একমাস আগে তার মা মারা যায়। এরপর সে আরও হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। সে সব সময় বলত, সে না থাকলে মেয়েদের কে দেখবে’।

মানসিক সমস্যা থেকে জেসমিন ২৫ দিন আগে মেয়েদের অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খাওয়াতে গিয়েছিলেন বলে পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, এক মেয়েকে খাওয়ানোর পর অন্য মেয়েকে খাওয়ানোর সময় পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে গিয়েছিল। যে মেয়েকে খাইয়েছিল, তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। সব মিলিয়ে এই মৃত্যুর ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ জানান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.