মনোমুগ্ধকর ও অপরূপ সাজে রাজশাহী কলেজ, প্রেমে পড়েছেন অতিথগণ রাজশাহী’র

নিজস্ব প্রতিবেদক: সেই ১৯৫৫ সালে রাজশাহী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) শিক্ষার্থী ছিলেন জুলফিকার হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কলেজে গিয়ে বললেন, এতো অপরূপ সাজে তিনি এই কলেজকে কখনও দেখেননি। চোখধাঁধানো সাজসজ্জা দেখে অভিভূত অবসরপ্রাপ্ত এই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

শুধু জুলফিকার হোসেন একা নন, তার মতো শত শত প্রবীণ ব্যক্তি এসেছেন রাজশাহী কলেজে। তারা সবাই রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আজ শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে তাদের নিয়েই শুরু হচ্ছে এইচএসসি অ্যালামনাই পুনর্মিলনী। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে গত কয়েক দিন থেকেই তারা কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসছেন। আর মুগ্ধ হচ্ছেন ৩৫ একরের পুরো ক্যাম্পাসের সাজসজ্জা দেখে।

ইংরেজ প্রকৌশলীর পরিকল্পনায় নির্মিত পুরনো গাঢ় লাল রঙের ভবনগুলো এমনিতেই কলেজের বিশেষ আকর্ষণ। সেসব ভবনের ওপর করা হয়েছে সাদা রঙের আলোকসজ্জা। এই আলোকসজ্জা ভবনগুলোর সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। শুধু প্রশাসন ভবন নয়, কলেজের অন্যান্য সব ভবনে করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা। বাদ যায়নি কলেজের ভেতরে থাকা গাছগুলোও।

মূল ফটক দিয়ে ঢুকে প্রশাসন ভবন পেরিয়ে শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে খেলার মাঠ পর্যন্ত যাওয়া রাস্তাটির পুরোটিই করা হয়েছে আলোকসজ্জা। এখানে ওখানে থাকা রঙিন লাইটের আলো রাতে গিয়ে পড়ছে পুকুরে পানি, ফুটে থাকা শাপলা আর পদ্ম ফুলে। আরও রঙিন হয়ে উঠছে ফুলগুলো। এ এক মোহনীয় দৃশ্য!

অ্যালামনাই উপলক্ষে রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনের সামনের জায়গাটিতে নতুন করে দৃষ্টিনন্দন টাইলস বসানো হয়েছে। তার পাশে গাঁদা ফুলের বাগান। প্রশাসন ভবনের আদলে মাঠে তৈরি করা হয়েছে বিশালাকার এক মঞ্চ। কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রখ্যাত কবি, গীতিকার এবং সুরকার রজনীকান্ত সেনের নামে মঞ্চের নাম দেয়া হয়েছে ‘রজনীকান্ত মঞ্চ’। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই মঞ্চে গাইবেন জেমস।

আজ শুক্রবার সকাল থেকে মূল অনুষ্ঠান শুরু হলেও বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিকালের পর থেকেই কলেজে আসতে শুরু করেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাবেক শিক্ষার্থীরা। কেউ যান স্ত্রীকে নিয়ে, কেউ স্বামীকে, কেউ সন্তান এবং কেউ নাতি-নাতনিদের নিয়ে। কলেজে গিয়ে মেতে ওঠেন কলেজ জীবনের বন্ধুদের সঙ্গে। কলেজের অপরূপ সাজসজ্জা দেখতে যান সাধারণ মানুষও।

রাজশাহী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৮৭৩ সালে। এ পর্যন্ত মাঝে ১৫ বছর কলেজটিতে এইচএসসির পাঠ বন্ধ ছিলো। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে আবার এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে দেশের তৃতীয় পুরনো এ কলেজটিতে। দেশে প্রথমবারের মতো এই কলেজেই এইচএসসি পর্যায়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে অ্যালামনাই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে সাবেক সব এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। অংশ নিতে নিবন্ধন করেছেন প্রায় ৯ হাজার জন।

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হবিবুর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে এইচএসসি অ্যালামনাই আয়োজনের ব্যাপারে প্রাথমিক কথাবার্তা শুরু হয়। তারপর এ বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত হয় অ্যালামনাই আয়োজনের প্রথম সভা। দফায় দফায় সভা করে সবকিছু চূড়ান্ত হলে শুরু হয় নিবন্ধন প্রক্রিয়া। দুই দিনের এই অ্যালামনাইয়ে ৯ হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি এক হাজার অতিথিও অংশ নিয়েছেন।

অ্যালামনাই উপলক্ষে শুক্রবার সকালে কলেজ চত্ত্বর থেকে বর্ণাঢ্য একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালি শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অ্যালামনাইয়ের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

অ্যালামনাই আয়োজনে দুই কোটি টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে। দুই দিনের এই অনুষ্ঠানে থাকছে আলোচনা, স্মৃতিচারণ, ছাত্রাবাসের স্মৃতিচারণ, সাংষ্কৃতিক সন্ধ্যা, ফানুস উড়ানো, আতসবাজিসহ নানা আয়োজন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.