মঙ্গলগ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মিল

 

বিটিসি বিজ্ঞানপ্রযুক্তি ডেস্ক: মঙ্গল গ্রহের প্রতি মানুষের বিশেষ টান রয়েছে। পৃথিবী ছাড়া সৌরজগতে মানুষের বসবাসের যোগ্য একমাত্র এই গ্রহ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করে বিজ্ঞানীরা কোনো এক সময়ে সেখানে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন দেখছেন।
গবেষকরা চাঁদের তুলনায় মঙ্গল গ্রহের প্রতি বাড়তি আগ্রহ দেখান কেন? কারণ মঙ্গলগ্রহ আমাদের বাইরের প্রতিবেশী। পৃথিবীর তুলনায় আরও দূর থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে এই গ্রহ। সৌরজগতে পৃথিবী ছাড়া মঙ্গলই একমাত্র গ্রহ, যেটি মানুষের বসবাসের যোগ্য।
কারণ মঙ্গলগ্রহের দিন-রাতের চক্র অনেকটাই পৃথিবীর মতো। সেখানকার একটি দিন আমাদের গ্রহের তুলনায় মাত্র ৩৭ মিনিট বেশি। ফলে আমাদের জৈবিক ছন্দপতনের আশঙ্কা নেই। অন্যদিকে, চাঁদে দিন ও রাত পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান।
তাছাড়া আলো ও ছায়ায় তাপমাত্রার ফারাকও অত্যন্ত বেশি। কারণ পৃথিবী ও মঙ্গলগ্রহের মতো উষ্ণতা ও শীতের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে চাঁদে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। মঙ্গলগ্রহ ও পৃথিবীর আলোর পরিবেশেরও অনেক মিল রয়েছে। দুই গ্রহে সূর্যাস্তের ছবি দেখলে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
তাছাড়া মঙ্গলের মতো পৃথিবীর ঘূর্ণনের অক্ষও প্রায় একই মাত্রায় বাঁকা। এতো মিলের কারণে দুই গ্রহের বায়ুমণ্ডলও অনেকটা একই রকম আচরণ করে। ফলে তুলনামূলক গ্রহ সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। চাঁদের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই।
পৃথিবীর আবরণ মূলত নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনে ভরা। সেটি সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ, যার পৃষ্ঠে তরল পানি দেখা যায়। সাড়ে তিনশো কোটি বছর আগে মঙ্গলগ্রহের বুকেও পানি ছিল। নদীর সেই অববাহিকা আজও স্পষ্ট চোখে পড়ে।
সে সময় সেখানকার পরিবেশ প্রাণের আবির্ভাবের জন্য অনেক বেশি উপযুক্ত ছিল। বায়ুমণ্ডলও অনেক বেশি ঘন ছিল। কিন্তু মঙ্গলগ্রহ তার বায়ুমণ্ডলের অনেকটাই হারিয়েছে। সূর্য থেকে লাগাতার কণার ঝড় মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলের উপরের অংশ নষ্ট করে দিচ্ছে।
চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে সেই সৌর ঝড় থেকে সুরক্ষিত রাখে। আজ মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলের ঘনত্বের মাত্রা পৃথিবীর একশো ভাগের একে এসে ঠেকেছে। এককালের মনোরম পরিবেশ আজ শুকনো বরফের মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। লাল এই গ্রহে শুধু বরফ বা বাষ্প হিসেবে পানির অস্তিত্ব রয়েছে।
দুই মেরু অঞ্চলে খোলা আকাশের নীচেই সেই বরফ দেখা যায়। মানুষের বসতির জন্য প্রয়োজনীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ মাটির নীচেই রয়েছে। ইউরোপের ট্রেস গ্যাস অরবিটার মঙ্গলগ্রহে পরীক্ষা চালিয়েছে।
২০২২ সালের শুরুতে সেই যান মঙ্গলগ্রহের ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ হিসেবে পরিচিত ভালেস মারিনেরিস এলাকার নীচে পানির বিশাল ভাণ্ডার আবিষ্কার করেছে। সিমুলেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। সূর্য ও মঙ্গলগ্রহের মাঝে কৃত্রিম চৌম্বক ক্ষেত্র আবার প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে কিনা, বিজ্ঞানীরা তা জানতে চান।
সেক্ষেত্রে বাতাসের চাপ ও তাপমাত্রা বেড়ে যাবার কথা। তারপর মেরু অঞ্চলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডভরা বরফ গলতে শুরু করলে গ্রিনহাউজ এফেক্ট দেখা দেবে। তখন নদী ও হ্রদ সৃষ্টি হবে। কাগজেকলমে এমনটা করা সম্ভব বটে। #

 

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.