ভালো নেই হবিগঞ্জ ইসলামিয়া এতিমখানার শিশুরা!

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: ফ্রিজে জায়গা না থাকায় মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিচালনা কমিটি। অথচ এতিম শিশুদের ভাগ্যে জুটে পচাঁ-বাসি খাবার। সাথে নানা নির্যাতনের অভিযোগ তো আছেই।

হবিগঞ্জ ইসলামিয়া এতিমখানায় শিশুদের নিম্নমানের খাবার দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কমিটির বিরুদ্ধে। মানুষের দান করা গরু-ছাগলের মাংস নাম মাত্র শিশুদের দিয়ে বাকিটা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করছেন কমিটির প্রভাবশালী সদস্যরা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে নানা রোগে ভুগছে শিশুরা।

এসবের প্রতিবাদ করলেই চলে নানা ধরণের হুমকি-ধামকি। বের করে দেয়া হয় এতিমখানা থেকে। আর এতিম এই শিশুদের দিয়ে সারাদিন বিভিন্ন কাজ করানোর অভিযোগতো আছে। কমিটির এই অমানবিক কর্মকান্ডে অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন হাফিজখানার শিক্ষকরা।

তবে জেলা প্রশাসক বললেন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সমাজসেবা কার্যালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।

জানা যায়- ১৯৯০ সালে হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর এলাকায় নিজস্ব জায়গাতে ইসলামিয়া এতিমখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে টিনের ঘরে কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে সরকারি-বেসরকারি অনুদানে নির্মিত হয় ৪ তলা নিজস্ব ভবন। ২১ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা কমিটির তত্তাবধানে বর্তমানে ১শ’ এতিম বাস করে এখানে।

এসব এতিমদের ব্যয় নির্বাহে প্রতিবছর পরিচালনা কমিটির হাতে আসে ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অনুদান আসে ৬ লাখ, বিভিন্ন মহলের নগদ সহায়তা ৪ লাখ, ভবনের ৩য় ও ৪র্থ তলার ভাড়া বাবদ আয় ৪ লাখ টাকা।

পাশাপাশি অনেকেই গরু, ছাগল প্রদানসহ নানা সহযোগিতা করে থাকেন। কিন্তু এতো আয়ের পরও ভাল খাবার জোটেনা এতিমদের মুখে। ফ্রিজ ভর্তি মাংস থাকলেও তাঁদের ভাগ্যে জুটে পচাঁ-বাসি খাবার। সাথে নানা নির্যাতনের অভিযোগ তো আছেই।

এদিকে, হবিগঞ্জ ইসলামিয়া এতিমখানায় ১শ’ শিশু থাকলেও করোনার অজুহাতে ইতোমধ্যে ৬০ জন শিশুকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সেখানে রয়েছে মাত্র ৪০ জন শিশু।

এতিম শিশু ও হাফিজখানার শিক্ষকদের অভিযোগ- দিনের পর দিন এতিম শিশুদের দিয়ে করানো হয় বিভিন্ন পরিশ্রমের কাজ। এমনকি কোমলমতি এসব শিশুদের দিয়ে ইট, বালি, সিমেন্ট, রড আনা-নেয়ার মতো কঠিন কাজও করানো হয়। এসব কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ্য হলেও দেয়া হয় না ভালো চিকিৎসা। উল্টো অসুস্থ্য শরীর নিয়ে কাজে যেতে না চাইলেই নির্যাতনের পাশাপাশি দেয়া হয় বিভিন্ন ধরণে হুমকি-ধামকি।

কান্নায় ভেঙে পড়ে অসহায় এই শিশু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানায়- সারাদিন নানা শরিশ্রমের কাজ করালেও দিন শেষে তাদেরকে দেয়া হয় না ভালো খাবার। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকে পঁচা-বাসী ভাত-তরকারি। মাসের পর মাস গেলেও তাদের ভাগ্যে জুটে না নতুন কাপড়। আর মশার কামড়ে তাদের রাত কাটে নির্ঘুম।

এতিমদের খাবার নিয়ে অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরেন হাফিজখানার শিক্ষকরাও। তবে তাদের দাবি- চাকরি হারানোর ভয়ে তারাও মুখ খুলতে সাহস পান না।

ইসলামী এতিমখানার হাফেজখানার শিক্ষক হাফেজ মাওলানা জুনায়েদ আহমেদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন- ‘কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোতালিব মমরাজসহ কয়েজন সদস্য প্রতিনিয়িত এতিমখানা থেকে মাংস নিয়ে যান। আশ্চর্যরে বিষয় হলো- রেজুলেশ করে তাজা মাংস এবং উন্নতমানের অন্যান্য খাবারের একটি দাম নির্ধারণ করে এখান থেকে নিয়ে যান। শুধুমাত্র গেল কয়েকদিনে পরিচালনা কমিটির সাংগঠনিক মমরাজ ১৫ কেজি মাংস নিয়েছেন এতিমখানা থেকে।’

তিনি বলেন- ‘এতিম শিশুদের মুখে মাংস না জুটলেও ফ্রিজে ঠিকই মাংসের জায়গা হচ্ছে না। এসব মাংস কমিটির সদস্যরা বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু চোখের সামনে এমন কর্মকান্ড ঘটলেও চাকরি হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারি না।’

এ ব্যপারে হবিগঞ্জ ইসলামিয়া এতিমখানার তত্ত্ববধায়ক সৈয়দ নাসির আহমেদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন- ‘ফ্রিজে মাংস রাখার জায়গা হচ্ছে না। তাই গতমাসে রেজুলেশন করে মাংস বিক্রির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া এতিমখানায় কোন সমস্যা নেই। শিশুদের প্রতিদিনই ভালো ভালো খাবার দেয়া হচ্ছে।’

এতিম খানার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন- ‘এতিম শিশুদের যে খাবার দেয়া হয় তা আমরা নিজেদের শিশুদেরকেও খাওয়াতে পারি না। এতিমখানায় প্রচুর পরিমাণে মাংস রয়েছে। শিশুরা খেতে না পারায় ফ্রিজে মাংসের জায়গা হচ্ছে না। তাই কিছু মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন- ‘মাংস বিক্রির বিষয়টি বাহিরে জানাজানি হলে অনুদান আসা কমে যেতে পারে। তাই আমরা কমিটির সদস্যরাই মাংস কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন- ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যেই জেলা সমাজসেবা কার্যালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি সমাজসেবা বিভাগ নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবেন।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.