ভারতের মুসলিমপ্রধান লাক্ষাদ্বীপ হঠাৎ উত্তাল কেন?

(ভারতের মুসলিমপ্রধান লাক্ষাদ্বীপ হঠাৎ উত্তাল কেন?)
বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের লাক্ষাদ্বীপপুঞ্জটি স্বভাবত শান্ত ও চুপচাপ। কিন্তু হঠাৎ করেই অঞ্চলটি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আইনপ্রণেতা ও সেখানকার প্রশাসক প্রফুল্ল প্যাটেল নতুন নিয়ম চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে সবার মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন খবর দিয়েছে।
স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, সরকারি দলের আইনপ্রণেতার নতুন পদক্ষেপগুলো গণবিরোধী। এতে সাধারণ মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। যার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা টুইটারে প্রচারে নেমেছেন। সেভলাক্ষাদ্বীপ হ্যাশট্যাগে সামাজিকমাধ্যম ভরে যাচ্ছে। দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীও এতে যোগ দিয়েছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, ওষুধের অপব্যবহার নিয়ে স্থানীয় এক কর্মকর্তার মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জমছে।

এদিকে কেরালার বিধানসভায় গতকাল সোমবার (৩১ মে) একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতে দ্বীপপুঞ্জটির মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা ও স্থানীয় আইনপ্রণেতা প্রফুল্ল প্যাটেলের অপসারণ চাওয়া হয়েছে।

আরব সাগরের দ্বীপটি শুভ্র বালুরাশি ও স্বচ্ছ নীল জলের জন্য পরিচিত। দ্বীপটিকে ভারতীয় মালদ্বীপ বলেও ডাকা হয়। এটির কাছের স্থলভূমি কেরালা। উপকূল থেকে ৫০০ কিলোমিটার অদূরে। ৩৬টি দ্বীপ নিয়ে এটির গঠন। ৬৫ হাজার জনসংখ্যার অধিকাংশই মুসলমান। দ্বীপপুঞ্জটি কেরালা হাইকোর্টের এখতিয়ারাধীন।

পর্যটকদের অন্যতম এই আকর্ষণ দ্বীপপুঞ্জটি ভারতীয় প্রেসিডেন্টের মনোনীত প্রশাসক প্রফুল্ল প্যাটেল। গত বছরের ডিসেম্বরে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি নতুন একটি খসড়া আইন প্রস্তাব করেছেন, যাতে প্রশাসক হিসেবে শহর উন্নয়ন ও পরিকল্পনার জন্য যে কোনো বাসিন্দাকে তাদের সম্পত্তি থেকে অপসারণ কিংবা স্থানান্তর করতে পারবেন। এই সিদ্ধান্ত অমান্য করলে যে কাউকে তিনি বিনাবিচারে বছরখানেক আটক করে রাখতে পারবেন।

এছাড়া গো-হত্যা বন্ধ, মাদক বিক্রির অনুমোদনও দেওয়ার কথা আছে এই আইনে। ইসলাম ধর্মে যা স্পর্শকাতর হিসেবে দেখা হয়। বর্তমানে দ্বীপটিতে মাদক সেবন ও বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। প্রফুল্ল প্যাটেলের ভারতীয় জনতা পার্টি দেশটির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে একজাতীয় করে ফেলতে তৎপর। এখন সেই সাংস্কৃতিক সংঘাতের কবলে পড়ে গেছেন দ্বীপপুঞ্জটির বাসিন্দারা।

চলতি মাসের শুরুতেই টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিকমাধ্যমে প্রচারে নেমেছে লক্ষাদ্বীপ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (এলএসএ)। ইতোমধ্যে কেরালার আইনপ্রণেতা আল-ইমরান কারিম প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি লিখে দ্বীপপুঞ্জটির অভিভাবক পরিবর্তনের অনুরোধ করেন। এতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নতুন গতি পেয়েছে।

এদিকে নতুন বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। এক টুইটপোস্টে তিনি বলেন, লাক্ষাদ্বীপ ভারতের সামুদ্রিক রত্ন। ক্ষমতাসীন উগ্র ধর্মান্ধরা এটি ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমি দ্বীপবাসীর পাশে আছি।

এখন কেরালার দিকে তাকিয়ে আছেন সেখানকার বাসিন্দারা। রাজ্যটির বিধানসভায় একটি সর্বসম্মত আইন পাস হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ান এই আইনে সমর্থন দিয়েছেন। এতে লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসক হিসেবে প্রফুল্ল প্যাটেলের অপসারণ দাবি করা হয়েছে।

দ্বীপবাসীর জন্য কেরালা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মৌলিক সরবরাহ আসে রাজ্য থেকে— শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও চিকিৎসা সবই।

করোনা নিয়ন্ত্রণে মহামারির বিধিনিষেধ শিথিল করে দিয়েও সমালোচিত প্রফুল্ল প্যাটেল। এতে সেখানে সংক্রমণ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, পর্যটকদের সংখ্যা বাড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ পদক্ষেপ থেকে সরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।

এ নিয়ে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। লাক্ষাদ্বীপ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিম ফাইয়াজ বলেন, আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাব। যতদিন পর্যন্ত এই প্রশাসককে বাতিল করা না হবে, ততদিন এই আন্দোলন চলবে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.