ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনা রোগীর স্বজনদের সামলাতে কঠোর পদক্ষেপ

বিশেষ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে করোনা রোগীর স্বজনদের সামলাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন সদর মডেল থানা পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আজ শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুরের দিকে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরানুল ইসলাম বিষয়টি বিটিসি নিউজকে নিশ্চিত করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) রাতে তিনি আইসোলেশন সেন্টারের রোগীদের খোঁজ নেন ও রোগীর স্বজনদেরকে কঠোর হুশিয়ার করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি থাকা করোনা রোগীদের সংস্পর্শে থাকা স্বজনদের অবাধে চলাফেরায় উদ্বিগ্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতি সামলাতে তারা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছে।
হাসপাতাল আইসোলেশন সেন্টারের সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের আইসোলেশনে ৩০ জন ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ১৮ জন নারী ও ১২ জন পুরুষ। বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৩১ জন। হাসপাতালে থাকা রোগীদের সংস্পর্শে আছেন তাঁদের অর্ধশতাধিক স্বজন। বিভিন্ন অজুহাতে তাঁরা যখন-তখন রোগীর কাছে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করছেন না।
পাশে বসে রোগীকে খাওয়াচ্ছেন, কথা বলছেন। আবার যখন-তখন চিকিৎসক ও নার্সদের কক্ষে ঢুকে পড়ছেন। সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করতে বললে বা রোগীর সংস্পর্শে যেতে বাঁধা দিলে হাসপাতালের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন। এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটছে। আবার ওই ব্যক্তিদের মাধ্যমে হাসপাতালের অন্য রোগী, তাঁদের স্বজনেরা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শরীরে করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। শুধু চলতি মাসেই হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।
হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারের সমন্বয়ক ডা. মো. এনামুল হাসান বিটিসি নিউজকে জানান, রোগীর স্বজনদের মৌখিকভাবে নিষেধ করে কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং তাঁরা ঝগড়ায় জড়াচ্ছেন। বাঁধা দিতে গিয়ে শিক্ষানবিশ নার্স ও ওয়ার্ড বয়রা লাঞ্ছিত হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আইসোলেশন সেন্টারে সামনে পুলিশের নজরদারি থাকবে বলে সদর মডেল থানা পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করেছেন।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্বেগকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। পরিস্থিতি সামলাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাশে থাকার জন্য নতুন একটি পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রতিদিন আইসোলেশন সেন্টারে সামনে পুলিশের টহল অব্যাহত থাকবে। কোন রোগীর স্বজনকে আইসোলেশন থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ বের হয় তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাছাড়া অপ্রয়োজনে হাসপাতালে দর্শনার্থীদের আগমন কমাতে ও দালালের দৌরাত্ম্য কমাতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে না, হাসপাতালে ভর্তি রাখা যাবে না। জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা লক্ষ্যেই এ কর্মসূচী হাতে নিয়েছি।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহ বলেন, করোনার বিস্তার ঠেকাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন চলছে। শহরে মানুষের তেমন জটলা নেই। তবে লোকজনের চলাচল থেমে নেই। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ফলে উপজেলাগুলোতেও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এখনই সতর্ক না হলে ক্রমেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে সতর্ক করে দেন তিনি। রোগীদের স্বার্থে ও জনগণের সচেতনতা লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা আরও কঠোর পদক্ষেপ নিবেন। সবাইকে অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেন। জনগণ যদি সচেতন না হয় তাহলে আগামী করোনা ভাইরাস আরও ভয়াবহ রুপ ধারন করবে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) সকাল পর্যন্ত জেলায় ৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে নতুন করে ২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াল ৪ হাজার ৫৮০ জনে। জেলায় সুস্থ হয়েছে ৩ হাজার ৮৪০ জন। গত বুধবার আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাদেক মিয়া (৬০) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এ নিয়ে মোট জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ৬৯ জন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.